এবারে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস করলেন সাবেক উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ওমারোসা ম্যানিগোল্ট এবার তাঁর সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস করেছেন। সাবেক উপদেষ্টার তথ্য অনুসারে, গত বছর ডিসেম্বরে হোয়াইট হাউস তাঁকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার পরে ফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ওই কথোপকথন হয়।
গতকাল সোমবার মার্কিন টেলিভিশন এনবিসিতে ওই ধারণ করা অডিওটি প্রচার করা হয় বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে জানা যায়।
অডিও অনুসারে চাকরি হারানোর পর ট্রাম্প বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে ওমারোসা ম্যানিগোল্ট নামের ওই নারীকে ফোন করে জানতে চান, ‘কী হচ্ছে এসব ওমারোসা? আমি খবরে দেখলাম যে তুমি নাকি চাকরি ছাড়ার কথা ভাবছ? কী হয়েছে?’
ম্যানিগোল্ট উত্তরে বলেন, ‘জেনারেল কেলি… জেনারেল কেলি আমাকে এসে বলল, আপনারা নাকি চান যে আমি আর চাকরিতে না থাকি।’
ট্রাম্প আরো উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, ‘না। কেউ তো আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। তারা (হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা) এত বড় একটা কাজ করল আর আমি জানতেই পারলাম না! আমি কিছুই জানি না। উফফ, তুমি চলে যাও, আমি মোটেই তা চাই না।’
এনবিসি নিউজ অডিও প্রচারের সময় সতর্কতার স্বার্থে জানায়, ধারণ করা খণ্ডিত ওই কথোপকথনের আগে বা পরে কী কথা হয়েছে, তা তারা জানে না।
ট্রাম্প সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে করা এক পোস্টে ওমারোসা প্রসঙ্গে তাঁর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সে ছিল অসৎ। ক্ষেপাটে ওমারোসা, যে শিক্ষানবিশ পর্বেই তিনবার ছাঁটাই হয়েছিল, এবার তাঁকে শেষবারের মতো পরিত্যাগ করা হলো। সে আমার কাছে কাঁদতে কাঁদতে একটি চাকরি চেয়েছিল। আমি দিয়েছিলাম। কিন্তু হোয়াইট হাউসে সবাই তাঁকে অপছন্দ করত।’
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘সে সবার কাছে খারাপ ছিল। নিয়মিত মিটিং ও কাজে থাকত না। জেনারেল কেলি আমাকে জানালেন যে সে একটা ঝামেলা ছাড়া আর কিছুই না। আমি কেলিকে বললাম, তারপরও সম্ভব হলে তাঁর জন্য কিছু করা যায় কি না দেখুন। চাকরি হারানোর আগ পর্যন্ত সে আমার ব্যাপারে শুধু উচ্ছ্বাসই দেখাত।’
এনবিসি নিউজে ওমারোসা নিজের চাকরি হারানোকে কেন্দ্র করে ঘটা অনেক কিছু একের পর এক ব্যাখ্যা দেন। সাংবাদিক চাক টড তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনাকে বহিষ্কারের ঘটনা ট্রাম্প জানতেন না, এটি কি আপনি সঠিক মনে করেন?’
ওমারোসা বলেন, ‘না, আমি জানি তিনি জানতেন। কারণ, আমি পরেও তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি নিজেই ওটা করেছেন। তিনি জানতেন যে জন কেলি আমাকে বিশেষ কক্ষে আটকে রেখে হুমকি দিতে যাচ্ছেন, এবং বলতে যাচ্ছেন যে পরিস্থিতি পরে খুব বাজে হয়ে যাবে, আমার মানসম্মান নিয়ে টানাটানি লাগতে পারে।’
ট্রাম্প সবই জানতেন উল্লেখ করে ওমারোসা বলেন, ‘সম্ভবত আমার সঙ্গে কথা বলার সময় যাতে তাঁকে নির্দোষ দেখায়, সে জন্য তিনি জেনারেল কেলিকে নির্দেশ দেন আমাকে বহিষ্কার করতে। আমার প্রশ্ন সে কি আন্তরিক? আর আরেকটি প্রশ্ন হলো, এই দেশ কে চালাচ্ছে, জেনারেল কেলি নাকি ট্রাম্প?’
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও তাঁর কর্মকর্তাদের অনেক নিষ্ঠুর ক্রিয়াকলাপকে প্রশ্নবিদ্ধ করে শিগগির ওমারোসার নতুন বই ‘আনহিঞ্জড : অ্যান ইনসাইডার অ্যাকাউন্ট অব দ্য হোয়াইট হাউস’ নামে একটি নতুন বই প্রকাশ হতে যাচ্ছে। ওমারোসা জানান, তাঁর কাছে আরো অনেক অডিও রেকর্ড আছে, কিন্তু সেগুলোর অনেকগুলোই যাচাই করা সম্ভব নয়।
এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউস প্রসঙ্গে ওমারোসার প্রকাশিতব্য বইয়ের কিছু উদ্ধৃতাংশের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ওমারোসাকে ‘খারাপ’ বলে অভিহিত করেন।
ফাঁস করা নতুন এই কথোপকথনে ট্রাম্প আপত্তিকর কিছু না বললেও কথাবার্তা বলার ভঙ্গি অনেকের কাছে হালকা ও হাসাহাসির বস্তু মনে হয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্পের কৌঁসুলি রুডি গিলিয়ানি জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের ব্যক্তিগত পর্যায়ের কথোপকথন রেকর্ড করায় তিনি সম্ভবত আইন ভঙ্গ করেছেন।