পূর্বপুরুষেরা অলস ছিল?
আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ ‘হোমো ইরেক্টাস’ প্রজাতি। লাতিন ভাষায় ‘হোমো ইরেক্টাসে’র অর্থ হলো উন্নত মানব। এ প্রজাতি দীর্ঘদিন টিকে ছিল। এরা ওপরে উঠতে পারত। অনেক দূরত্ব পাড়ি দিতে পারত। টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও তৈরি করতে পারত। আর এসব কারণেই আমরা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম। কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। বলছে, আলস্যের কারণেই হোমো ইরেক্টাসরা মারা পড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) একদল গবেষক জানিয়েছেন, হোমো ইরেক্টাসরা অলস ছিল। এ কারণে তারা টিকে থাকতে পারেনি। গবেষক দল অ্যারাবিয়ান উপদ্বীপে একটি এলাকা খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে একদল হোমো ইরেক্টাস বসবাস করত।
তাঁরা দেখেন, এই গুহামানবেরা শক্তিশালী ও দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও নিম্নমানের পাথর দিয়ে হাতিয়ার তৈরি করত। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পাহাড়ের পাশেই উচ্চমানের পাথর ছিল অনেক। আর তারা আলস্যের কারণে সেখানে যায়নি!
গবেষণা দলে থাকা অধ্যাপক কেরি শিপটন বলেন, ‘তারা জানত উচ্চমানের পাথরগুলো পাশেই আছে। কিন্তু তারা মনে করত তাদের পর্যাপ্ত রসদ আছে। কেন কষ্ট করতে যাবে?’
অন্যদিকে, হোমো স্যাপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ) ও নিয়ানডার্থালেরা উচ্চমানের পাথর সংগ্রহের জন্য পর্বত আরোহণ পর্যন্ত করেছে।
বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করে বলেন, যখন ওই এলাকা শুকিয়ে যায়— এতই অলস ছিল যে হোমো ইরেক্টাসরা অভিযোজন করতে পারেনি। অবশেষে জলবায়ুর পরিবর্তন হলো এবং তারা তাদের পথ বদলাল না। আর এসবের কারণেই মারা পড়ল।
অ্যারাবিয়ান উপদ্বীপের একটি এলাকা, যেখানে হোমো ইরেক্টাসরা বাস করত ছবি : সংগৃহীত
হোমো ইরেক্টাসদের সঙ্গে আধুনিক মানুষেরও চমৎকার মিল পাওয়া যাচ্ছে। এটা খুবই হতাশার যে যখন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তখন মানুষ তাদের মাথা বালিতে গুঁজে রাখছে। শিপটন বলেন, হোমো ইরেক্টাসদের বিস্ময়ের অনুভূতি ছিল না, যেমন আমাদের নেই!
বিজ্ঞানীরা তাদের আলস্যের কথা জানাতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, যদি হোমো ইরেক্টাসদের গোপন কোনো দল এখনও থাকে এবং তারা যদি ইন্টারনেট সংযোগ পায়, তাহলে তারা নিশ্চয়ই ভালো আছে। সারাদিন ইন্টারনেট ঘাটছে আর মাস্তি মেরে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে!
আধুনিক মানুষও কি এমন স্বভাবের নয়?
জানা যায়, আফ্রিকাতে হোমো ইরেক্টাসদের উৎপত্তি ঘটেছিল, যদিও ইউরেশিয়াকে একেবারে বাতিল করে দেওয়া যায় না। আনুমানিক ১৭ লাখ বছর আগে এই প্রজাতির সদস্যরা আফ্রিকার ক্রান্তীয় অঞ্চল, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এ কারণে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে ইরেক্টদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।
কিছু স্থানে আবার সরাসরি জীবাশ্ম পাওয়া না গেলেও তাদের ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী যেমন পশুর ভাঙা হাড় ও পাথরের উপকরণ পাওয়া গেছে। হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির সদস্যদেরকেই ইরেক্ট বলা হয়। তারা ছিল মাঝারি উচ্চতার মানুষ এবং দুই পায়ে সোজা হয়ে হাঁটতে পারতো। তাদের মস্তিষ্কের খুলিটি অবনত, কপাল একটু পেছনের দিকে হেলানো এবং নাক, চোয়াল ও তালু প্রশস্ত। আধুনিক মানুষের তুলনায় তাদের মস্তিষ্কের আয়তন কম কিন্তু দাঁতের দৈর্ঘ্য বেশি।
ধারণা করা হয়, আনুমানিক দুই লাখ বছর আগে বা আরো কিছুকাল পরে তারা বিলুপ্ত হয়ে হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছে।