মিয়ানমারে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ড
রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহকারী বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত।
ইয়াঙ্গুনের দক্ষিণ জেলা জজ ইয়ে লইন তাঁর রায়ের বলেন, ‘ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ও (২৮) তথ্য সংগ্রহের সময় উপনিবেশিককালের অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট (রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার আইন) ভঙ্গ করেছেন।’
‘তাঁরা অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের তিনের একের সি ধারা ভঙ্গ করেছেন। এ জন্য তাঁদের সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। গত ১২ ডিসেম্বর থেকে তাঁদের কারাবাস, এই সময় তাঁদের সাজা থেকে বাদ যাবে,’ যোগ করেন বিচারক।
গত বছরের ২৫ আগস্ট নির্যাতনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। একে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে। সারা বিশ্ব যখন মিয়ানমারের এই ‘হত্যাযজ্ঞের’ বিরুদ্ধে সরব, তখনই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সো ও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে মামলা হয়। তার পর থেকে তাঁরা কারাগারেই ছিলেন।
যদিও দুই সাংবাদিক তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। আন্তর্জাতিক মহল থেকে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হচ্ছিল মিয়ানমার সরকারকে। সবকিছু উপেক্ষা করে আজ আদালত তাঁদের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২৭ আগস্ট এই মামলার রায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন বিচারক অসুস্থ থাকায় রায়ের তারিখ পিছিয়ে আজকের দিন নির্ধারণ করা হয়। আজ সকালে দুই সাংবাদিককে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন।
রায় ঘোষণার পর ওয়া লোন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার কোনো ভয় নেই। আমি কোনো ভুল করিনি। আমি ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র আর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’
রয়টার্সের সম্পাদক স্টিফেন অ্যাডলার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আজ মিয়ানমারের জন্য সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সো ও এবং বিশ্বের যেকোনো স্থানের সাংবাদমাধ্যমের জন্য একটি দুঃখের দিন।’
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছর ওয়া লোন ও কিউ সোর ও রয়টার্সের একটি বিশেষ প্রতিবেদন নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন। সেই প্রতিবেদনটি পরে প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও মিয়ানমার সেনাদের যোগসাজশে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনা বিস্তারিতভাবে উঠে আসে।
প্রতিবেদনটিতে নিহতদের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোর ঘটনার বর্ণনা তুলে আনতে ওয়া লোন ও কিয়াও সো মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষের সাক্ষাৎকার নেন। সঙ্গে জুড়ে দেন প্রয়োজনীয় ছবি। নিহত রোহিঙ্গাদের মধ্যে জেলে, দোকানদার ও কিশোর বয়সী ছাত্র ছিল বলে জানা যায়।
পরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এই হত্যায় সৈন্যদের ভূমিকা আছে বলে স্বীকার করে সাত সৈন্যকে কারাগারে দেয়। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিকদের বিচারকাজ চলছে।
এই অনুসন্ধান কাজ করার সময়ই মিয়ানমারের একটি রেস্তোরাঁ থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সেখানে তাদের রাষ্ট্রীয় গোপন নথিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এসব নথি সংগ্রহ করেছিলেন এ দুই সাংবাদিক।
কিন্তু রয়টার্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ছিল পুলিশের সাজানো এক ছক।