জাতিসংঘ-মিয়ানমার চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন চান প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পাদিত চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সময় আজ শুক্রবার ভোরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের চুক্তি আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সংকট সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারে, সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমরা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা অগ্রাহ্য করতে পারি না, চুপ থাকতেও পারি না।’
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমার সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কথা জাতিসংঘে তুলে ধরেন। এক বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টার কথা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে, তাই সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে। জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে, আমরা তারও আশু বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে চাই। আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’
গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ সমস্যার স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে তুলে ধরা পাঁচ দফা প্রস্তাবের কথা মনে করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় প্রথম থেকেই তিনি আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একাধিক চুক্তি হলেও মিয়ানমার যে নানা কৌশলে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করছে, সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে গত বছর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আমি পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম। আমরা আশাহত হয়েছি যে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। মিয়ানমার মৌখিকভাবে সব সময় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেব বলে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যে বাংলাদেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে, বাংলাদেশ যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকা ১০টি দেশের একটি, সে কথাও বিশ্বনেতাদের মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
সহিংস উগ্রবাদ, মানবপাচার ও মাদক প্রতিরোধে বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার নীতি যে বিশেষ সুফল দিয়েছে, সে কথাও জাতিসংঘ অধিবেশনে শেখ হাসিনা জানান। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন আবাসভূমির দাবির বিষয়টিও তাঁর ভাষণে উঠে আসে।