ক্রাইস্টচার্চের ‘খুনির’ মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ৫০ জনকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি ব্রেন্টন ট্যারেন্টের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ শুক্রবার সকালে নিউজিল্যান্ডের উচ্চ আদালতের বিচারক ক্যামেরন ম্যান্ডার এ আদেশ দেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
বিচারক ম্যান্ডার বলেছেন, আসামি আদালতে বিচারকাজে দাঁড়ানোর জন্য উপযুক্ত কি না, সেটি বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখবেন।
আসামির মানসিক স্বাস্থ্য উপযুক্ত কি না, তার জন্য দুটি পরীক্ষা করা হবে বলেও জানিয়েছেন বিচারক।
এদিকে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ট্যারেন্টের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে।
আসামি ট্যারেন্টকে জেলখানা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোর্টে উপস্থাপন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সটি এমনভাবে করা হয়েছে, যেন আসামি শুধু বিচারক ও আইনজীবীদের দেখতে পান। এ ছাড়া সাধারণ গ্যালারি থেকে ভিডিও ক্যামেরাটি দূরে রাখা হয়।
এই ভিডিও কনফারেন্সে যখন আসামি ট্যারেন্টকে দেখা যাচ্ছিল, তখন ট্যারেন্টের পরনে একটি ধূসর রঙের সোয়েটার ও হাতে হাতকড়া পরানো ছিল।
ভিডিও কনফারেন্সে ট্যারেন্ট শুধু একবার কথা বলেছে। সে আদালতকে শুধু জানিয়েছে, সে আসন গ্রহণ করেছে। এ সময় ভিডিওর শব্দ বন্ধ থাকায় তাঁর কণ্ঠ বাইরে আসছিল না। ভিডিওর শব্দ ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ ছিল, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ক্রাইস্টচার্চ হামলায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। হামলায় আহতদের মধ্যে কেউ কেউ হুইলচেয়ারে করেও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া আদালতে ২০ জনের বেশি সাংবাদিক ও প্রায় ৬০ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শুনানি চলাকালে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় উপস্থিত মানুষদের শুভেচ্ছা জানান আদালতের একজন রেজিস্ট্রার।
ক্রাইস্টচার্চ হামলায় বাবা হারানো ওমর নবী আদালতের বাইরে আসামি ট্যারেন্টের ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই না তার মৃত্যু হোক। আমরা চাই, সে এখানে থেকেই ভুগতে থাকুক। আমরা চাই, সে যেন এর শাস্তি পায়। আপনারা জানেন, ৫০ জনকে হত্যার শাস্তি কী হতে পারে।’
এই হামলায় জীবিত ফিরে আসা তোফাজ্জল আলম বলেন, ‘আমি আমার ৫০ জন বন্ধুকে হারিয়েছি, যাঁদের প্রতি শুক্রবার আমি মসজিদে নামাজ পড়তে দেখতাম। আমি দেখতে চাই, ৫০ জনকে হত্যার পর সে কী অনুভব করছে, সে জন্যই আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি।’
তোফাজ্জল আরো বলেন, ‘এই হত্যাযজ্ঞের জন্য মোটেও অনুতপ্ত নয় সে (ব্রেন্টন)। তার ভেতরে কোনো অনুভূতি নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সব ঠিকই আছে। আমি অনেক দুঃখিত, নিজের জন্য ও হামলায় নিহত আমার বন্ধুদের জন্য। এবং তার জন্যও।’
আগামী ১৪ জুন আসামি ট্যারেন্টকে আবারও কোর্টে হাজির করা হবে। সে পর্যন্ত তাঁকে হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
আসামি ব্রেন্টন ট্যারেন্টের বিরুদ্ধে ৫০ জনকে হত্যা ও ৩৯ জনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনা।
গত ১৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে নির্বিচারে গুলি করেন। এতে ৫০ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি রয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের পরই নিউজিল্যান্ডের পুলিশ ট্যারেন্টকে আটক করে।
সে সময় টেস্ট সিরিজ খেলার জন্য নিউজিল্যান্ডে ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওই দুই মসজিদের একটিতে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য রওনা দেন তামিম-মুশফিকরা। কিন্তু মাঝপথে এক নারী তাঁদের সাবধান করে দেন। পরে ক্রিকেটাররা দ্রুত হোটেলে ফিরে যান।