সৌদি আরবে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের অদূরে চলছে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের কাজ। বেশ দ্রুত এগোচ্ছে ওই কাজ। ইন্টারন্যাশনাল পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাবেক পরিচালক রবার্ট কেলির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার তিন মাসের মধ্যেই সৌদি আরব এর কাজ শুরু করে দিয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, রিয়াদে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের জন্য একটি পরীক্ষামূলক চুল্লি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন কংগ্রেস। অন্যদিকে ইরানও এ বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
আগামী ৯ মাসের মধ্যেই পরীক্ষামূলক এই পারমাণবিক চুল্লির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে ধারণা করছেন রবার্ট কেলি।
বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণের জন্য এই পারমাণবিক চুল্লির নকশা তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান আইএইএর সাবেক এই পরিচালক।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকির মুখে ফেলে কোনোভাবেই সৌদি আরবকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির সুযোগ করে দেব না।’ পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ব্যবহার করতেও দেওয়া হবে না বলে শুক্রবার একটি টিভি সাক্ষাৎকারে জানান তিনি।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। সেই সময় তিনি সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মানবাধিকার বা পারমাণবিক অস্ত্র কার্যক্রম কোনো সমস্যাই নয়।’
এদিকে এই পারমাণবিক কার্যক্রম একটি শান্তিপূর্ণ কাজ বলে সৌদি আরবের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত বছর বলেছিলেন, ‘কোনো সন্দেহ ছাড়াই যদি ইরান পারমাণবিক বোমা বানায়, তাহলে আমরাও পারমাণবিক বোমা বানানোর পথ অনুসরণ করব।’
নয় বছর আগে পারমাণবিক শক্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল সৌদি আরব। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ হিসেবে এই আকাঙ্ক্ষা তরান্বিত হয়েছে।
ভিশন ২০৩০-এর প্রতিচিত্রে বলা হয়, সৌর পদ্ধতি ও বায়ু থেকে শক্তি উৎপাদন ছাড়াও এক তৃতীয়াংশ শক্তি উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচির চেষ্টা চালানো হবে।
তেলের ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার জন্য এ ধরনের কর্মসূচির দিকে আগাচ্ছে সৌদি আরব।
২০৪০ সালের মধ্যে ১৭ গিগাওয়াট পারমাণবিক শক্তির ধারণক্ষমতা অর্জনের চিন্তা করছে সৌদি আরব। যা দেশটির ১৫ শতাংশ শক্তির চাহিদা মেটাবে।
গত ৫ নভেম্বর সৌদি আরবের প্রথম পারমাণবিক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। রাজধানী রিয়াদে কিং আবদুল আজিজ সিটি ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে তা স্থাপন করা হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অন্যান্য কাজে সৌদি আরব বর্তমানে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপরে নির্ভরশীল। দেশটি আগামী দুই দশকে ১৬টি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।