কোরিয়ান ফার্মের বিরুদ্ধে ফেসবুকের মামলা
‘সুনাম ক্ষুণ্ণ’ ও ‘বিশ্বাস ভঙ্গের’ অভিযোগ এনে দক্ষিণ কোরিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে গত শুক্রবার দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্ম ‘রেংওয়েব’ কমপক্ষে ৩০টি অ্যাপ ব্যবহার করে বেআইনিভাবে ফেসবুকের নিজস্ব তথ্য-উপাত্ত তাদের মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপণের কাজে ব্যবহার করেছে।
ফেসবুক এমন একটি সময়ে এই মামলা করলো যখন, গ্রাহকের তথ্য ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ের অভিযোগ এনেছেন ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস হিউজেস। তিনি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ফেসবুক ভেঙে দেওয়ারও দাবি করেছেন।
ফেসবুকের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ান ফার্ম ‘রেংওয়েব’ এর এই বেআইনি কার্যক্রমের মাধ্যমে ফেসবুকের কী পরিমাণ তথ্য কিংবা কত সংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ফেসবুকের একজন পরিচালক জেসিকা রোমেরো বলেন, রেংওয়েবের বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখছে। কিন্তু ফার্মটি এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বিবিসি ‘রেংওয়েব’ কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য নিতে পারেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘রেংওয়েব’র নিজস্ব একটি কনজ্যুমার অ্যাপ ছিল। এটি ব্যবহার করে তারা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পোস্টগুলোকে ‘অনুসরণ ও বিশ্লেষণ’ করত। এর মাধ্যমে ফার্মটি জনপ্রিয়তা যাচাই ও ‘সামাজিকভাবে প্রভাবিত’ করত বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ গত শুক্রবার ফ্রন্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
অপরদিকে ঘৃণা ও ভুয়া খবর ঠেকাতে ব্যর্থতার কারণে এখনই বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে ভেঙে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস হিউজেস। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ কথা বলেন ক্রিস হিউজেস।
ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরো বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থীদের দেওয়া উসকানি বন্ধ করতেও ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক।’
ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের কন্টেন্ট বিক্রি করে বিপুল অর্থ আয় করছে বলেও অভিযোগ করেন ক্রিস। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের ২০০ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী ক্ষমতাহীন ও অসহায়। আর অপরদিকে, ফেইসবুক তার ব্যবহারকারীদের কন্টেন্ট বিক্রি করে একচ্ছত্র বিপুল অর্থ আয় করছে। তাই এখনই ফেসবুক ভেঙে দেওয়ার সময়।’
এ ছাড়া ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গের ক্ষমতা ও তাঁর একক আধিপত্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিস হিউজেস। তিনি বলেন, ‘মার্কের ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। প্রতিষ্ঠানে কোনো গণতন্ত্র নেই। ফেসবুকে প্রাইভেসি বা অন্য যেকোনো ত্রুটির কারণে জাকারবার্গকে দায়ী করতে হবে। এখনই ফেসবুকের একচ্ছত্র আধিপত্যে লাগাম টানা উচিত।’
২০০৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় মার্ক জাকারবার্গ ও ডাস্টিন মস্কোভিৎজের সঙ্গে ফেসবুকের জন্ম দেন ক্রিস হিউজেস। ২০০৭ সালে ফেসবুক ছেড়ে দেন তিনি।
এর আগে ফেসবুকের বিরুদ্ধে তার প্রায় নয় কোটি ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মতো কেলেঙ্কারি সবচেয়ে বড় প্রমাণ। যা নিয়ে মার্কিন সিনেট ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে জাকারবার্গকে। এমনকি, গোপনীয়তা ও ভুয়া তথ্যের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় পদ ছেড়েছেন প্রতিষ্ঠাটির বড় কর্মকর্তারা।