নির্বাচনোত্তর তিন খুনের ঘটনায় বসিরহাটে বনধ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটের সন্দেশখালিতে নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক সহিংসতায় দুই বিজেপির কর্মী ও এক তৃণমূল কর্মীর নিহতের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। এসব ঘটনায় আজ পশ্চিমবঙ্গে ‘কালো দিবসের’ ডাক দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
সেইসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছে দলটি। আজ সোমবার সকাল থেকেই বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টা বনধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই মহকুমায়। বিজেপির দাবি, খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
সকালেই শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখার ভ্যাবলা স্টেশনে রেল অবরোধ শুরু করেন বিজেপি সমর্থকরা। স্টেশনে রেললাইনের উপর বসে পড়েন কয়েকশ বিজেপি সমর্থক। ফলে এই শাখায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। এর ফলে এই পথের যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
একইসঙ্গে বসিরহাটে বনধ চলার কারণে এই এলাকার উপর থেকে ঘোজাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে যাওয়া পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।
বনধের জেরে বসিরহাটের অন্যতম বাসন্তী হাইওয়ের কানমারি মোড়ে সড়ক অবরোধ শুরু করেছেন বিজেপি সমর্থকরা। ফলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছে সরকারি বাসসহ অনেক যানবাহন। বেলা যতো বাড়ছে, ততোই দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের লাইন।
বিজেপির কর্মীদের বক্তব্য, আমাদের দুই কর্মী খুনের বিচার চাই। নিখোঁজ এক কর্মীকেও খুঁজে দিতে হবে। কোনো বাস চলতে দেব না।
অবরোধের পাশাপাশি সুনশান গোটা এলাকা। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় নেই লোকজন। বিভিন্ন রাস্তায় চলছে বিজেপি কর্মীদের অবরোধ।
গত শনিবার সন্দেশখালির ন্যাজাটে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে নিহত হন বিজেপিকর্মী প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল। নিখোঁজ রয়েছেন দেবদাস মণ্ডল নামে বিজেপির অপর এক কর্মী। ওইদিন খুন হন কাইয়ুম মোল্লা নামে তৃণমূলের এক কর্মীও।
এ ঘটনার পর এখনো ন্যাজাটসহ বসিরহাটের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যে কোনো সময়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি যেন আয়ত্তের বাইরে না যায় এজন্য প্রশাসন সন্দেশখালির ন্যাজাট এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে বসিরহাটের ব্যাপারে প্রতিবেদন চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বসিরহাটে শান্তি বজায় রাখতে যা যা প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী যেন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা যেসব পুলিশ কর্মী ও কর্মকর্তা দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেননি, তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।
তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ মানতে বাধ্য নয় রাজ্য সরকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাজ্যের এখতিয়ারভূক্ত, এমন যুক্তি দেখিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার।
সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাতে উল্লেখ করা হয়, বাংলা যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ। তাতে উসকানি দিয়ে অশান্তি করার চক্রান্ত করছে বিজেপি। এই ধরনের নির্দেশের মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের।
এদিকে আজই রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সেখানে ন্যাজাটের রাজনৈতিক সংঘর্ষের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে বসিরহাটের ঘটনা রাজ্য ছাড়িয়ে কেন্দ্রকেও ভাবিয়ে তুলছে বলে মনে করছেন অনেকে।