ব্রিটিশ পার্লামেন্ট স্থগিত, কোন পথে ব্রেক্সিট?
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে হঠাৎ করেই যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া ব্রেক্সিট বিষয়ে আলাপ-আলোচনা ও বিতর্কের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যরা খুব কম সময় পাচ্ছেন।
আগামী ৩১ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের ইইউ ছাড়ার নির্ধারিত তারিখ। অর্থাৎ ব্রেক্সিটের আর বাকি নয় সপ্তাহ। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে ওই সময়ের আগে পাঁচ সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়ে গেল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কার্যক্রম। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
যাঁরা ব্রেক্সিটের বিপক্ষে, তাঁরা বরিস জনসনের এ পদক্ষেপকে ক্যু বলছেন। এমনকি ব্রেক্সিটের পক্ষে অবস্থানকারীদের কেউ কেউ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন।
আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে নতুন কার্যক্রমসহ নতুন পার্লামেন্ট সেশন শুরু করতে চান বরিস জনসন। ১০ সেপ্টেম্বর নাগাদ পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিত করে দিতে ইচ্ছুক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এই অল্প সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া আটকানো কষ্টসাধ্য বলে মনে করছেন ব্রিটিশ এমপিরা।
এমনিতে বছরের এই সময়টায় কয়েক সপ্তাহের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিতই থাকে। কিন্তু ব্রেক্সিট আসন্ন—এমন অবস্থায় পার্লামেন্টের সেশনের সময় ছেঁটে ফেলার বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
প্রথমে যুক্তরাজ্যের ইইউ ছাড়ার দিন ধার্য ছিল গত ২৯ মার্চ। কিন্তু ব্রেক্সিট বিষয়ে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের চুক্তি তিন দফা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নাকচ হয়ে গেলে বাড়ে ব্রেক্সিটের সময়সীমা। এখন যুক্তরাজ্যের ইইউ বিচ্ছেদের তারিখ ৩১ অক্টোবর।
ব্রেক্সিটের পক্ষে যেসব ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন, বরিস জনসন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। চুক্তিসহ কিংবা চুক্তি ছাড়া—যেভাবেই হোক, ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে চান বরিস জনসন। ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করেই ছাড়বেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু পার্লামেন্টে বিরোধী দলের বেশিরভাগ এমপি ও সরকারদলীয় কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপিই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করে আসছেন। এই এমপিদের আশঙ্কা, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট বাস্তবায়িত হলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। বেড়ে যাবে পণ্যের দাম। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যক্ষেত্র ইউরোপে ব্যবসা করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে।
চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট নয়—এমন সিদ্ধান্তে সরকারের সঙ্গে কোনো ঐকমত্যে না পৌঁছালে বরিস জনসনের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ডাক দিতে পারেন এই এমপিরা। কিন্তু তড়িঘড়ি পার্লামেন্ট স্থগিত করে সে পথ অনেকটাই কঠিন করে দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।