পবিত্র আশুরায় কাশ্মীরে কড়াকড়ি, শূন্য সড়কে কেবলই ব্যারিকেড
সড়কে আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশের টহল। প্রতি পাঁচশো মিটার পর পর ব্যারিকেড। সড়কে আড়াআড়ি করে রাখা আধাসামরিক বাহিনীর ট্রাক। যেন এগুলো দেয়াল।
কাশ্মীরের শ্রীনগরের জাদিবাল এলাকার চিত্র এটি। ওই এলাকায় শিয়া মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আজ পবিত্র আশুরা। আজকের এ দিনে মুসলমানদের তাজিয়া মিছিল করার কথা। কালো পতাকা নিয়ে বিশাল জমায়েত হওয়ার কথা। কিছুই নেই। সড়ক আর পাড়া-মহল্লা যেন একেবারে শূণ্য ময়দান।
আশুরার দিনটিও পালন করতে পারেনি কাশ্মীরের মুসলমানেরা। ভারতের সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮ জানিয়েছে, সড়ক ছিল আধাসামরিক ও পুলিশের দখলে।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম হোসেনের কাছে এবারের অবরোধটা একেবারেই ‘ব্যতিক্রম।’ তিনি বলেন, ‘ওষুধ আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পর্যন্ত কিনতে পারছি না।’
১৯৯০ এর পর এত কড়াকড়ি এই প্রথমবার দেখা গেল। তবে ১৯৮৯ সাল থেকেই আশুরা উপলক্ষে কাশ্মীরে বড় ধরণের জমায়েত নিষিদ্ধ। এসব জমায়েত ভারত বিরোধী সমাবেশে পরিণত হয়। তারপরেও শ্রীনগর, বুদগাম এবং বারামুল্লায় আশুরা উপলক্ষে বড় ধরণের জমায়েত দেখা গেছে। কিন্তু এবার কোনো ধরণের সমাবেশই হয়নি।
গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা দেওয়া ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারাটি বাতিল করে ভারত সরকার। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে আইনটি বাতিল করেন। এরপর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের ওপর বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপ করে কেন্দ্রীয় সরকার।
আশুরা উপলক্ষে চলতি সপ্তাহে ছোট ছোট জমায়েতের চেষ্টা করে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তাঁদের অভিযোগ পুলিশ তা ভন্ডুল করে দেয়। শ্রীনগর মিউনিসিপ্যাল কমিটির নির্বাচিত সদস্য তানভীর পাঠান বলেন, ‘আমরা তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। পুলিশ সেখানে টিয়ার গ্যাস মারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশ আমাকে আটক করতে চেয়েছিল।’ তাঁকে পালিয়ে যেতে হয় বলে তিনি জানান।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘যদি হাজার হাজার মানুষ অমরনাথ মন্দিরে যেতে পারে এবং সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে, তবে আমরা কেন তাজিয়া মিছিল বের করতে পারব না।’
তবে প্রশাসনের আশঙ্কা তাজিয়া মিছিলের অনুমতি দিলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মানুষকে জমায়েত হওয়ার অনুমতি দিতে পারি না। অনেক কিছু আছে যা সমস্যা তৈরী করতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে তানভীর পাঠান বলেন, ‘আমরা তাজিয়া মিছিল থেকে পাথর ছুঁড়ি না। তাজিয়া আমাদের ধর্মীয় অধিকার। যদি গণতন্ত্র থেকেই থাকে তবে আমরা ধর্মচর্চা করতে পারব।’