সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/06/03/photo-1433308831.jpg)
আবার আইতাছে চৈত মাস। এই চৈত মাসে জুলেখার হারানি যাওনের পাঁচ বচ্ছর পূর্ণ হইবো!
দেওভোগ গেরামের দুই-চাইর জোন পুরুষপোলা ছাড়া আর কেউই সন-বচ্ছরের হিসাব দিয়া দিন পার করে না! তারা সগলতে খেয়াল রাখে বার, মাস আর চান্দের। অইট্টুক হিসাব নিয়াই দেওভোগ গেরামের লোকে সোন্দর জিন্দিগি পার করতাছে! কতো যুগ-জনম ধইরা এমনেই চলতাছে সগলতে।
তবে অন্য অন্য মাসগিলি নিয়া যেমন তেমন, চৈত মাসের কথা উঠলেই তাগো সগলেরই এট্টু কেমুন জানি লাগে! এই মাসখানরে তারা পারতে স্মরণ করতে চায় না। স্মরণ করতে হইলে কোনোমতে ঠেকার কাম শেষ করে। তাগো সগলতের কাছে অখন চৈত মাসের একটাই মরতবা। কি সেইটা?
না, এই মাসে তাগো গেরামের একটা মাইয়ায় সেই যে হারানি গেছে, তার সন্ধান আর পাওয়া যায় নাই! এই মাসখান দেওভোগ গেরামের লেইগা জব্বর রকমের একটা কুফা মাস!
দেওভোগ গেরামে ইমাম হুজুরেই খালি বছর, মাস, চান্দের হিসাব ধইরা দিন পার করে। লোকের ঠেকা পড়লে তার কাছ তেনেই সন-বচ্ছরের খোঁজখান দিয়া নেয়। তার বাদে ঠেকার কাম সারে। অন্য অন্য বারের মতোন এইবারও ইমাম হুজুরে, চৈত মাস আওনের দিন-ক্ষণ গুনতে গিয়া, আবার নতুন কইরা জুলেখার হারানির কথাটা মোনে আনে।
এইবার চৈত মাসে পাঁচ বচ্ছর পুরা হইবো! পাঁচ-পাঁচটা বচ্ছর ধইরা যার যার কোনো সন্ধান পাওয়া গেলো না, আর কি তার সন্ধান পাওনের কোনো আশা আছে? হুজুরের মোনে য্যান কয় যে, আর কোনো আশা নাই!
দেওভোগ গেরামে আরো একজোন আছে যেয় অখনও অন্তরে অন্তরে, দিন ক্ষণ গইন্না গইন্না সেই সর্বনাশরে মোনে করে নিত্যি! কিন্তু সেই বিষয়ে কোনো কথা কওয়ার বাঞ্ছা আর তার নাই। সেয় আর এখন জুলেখার হারানি নিয়া মোখে আর কোনো আওয়াজই করে না। কোনো কথা শোনারও গরজ দেহায় না। ইমাম হুজুরেও যুদি সেই বিষয়ে কোনো কথা তোলা দেয়, সেয় আলগোচ্ছে তার সামোন তেনেও সইরা যায়। ভঙ্গি করে য্যান—তার এইসগল কথা শোনতে বড়ো বিতৃষ্ণা হয়!
হ! তার বিতৃষ্ণা তো হয়ই! আর সেই কথা কইয়া কী ফল! যেয় গেছে সেয় তো খালি একলা যায় নাই। সেয় তার লগে আরো কয়জোনের অন্তরের আশা-বাঞ্ছারে গোড়াসুদ্ধা বিনাশ কইরা লইয়া যায় নাই? গেছে।
আশা-ভরসা কি খালি জুলেখার মায়েরই শেষ হইছে? আর একজোনের সগল বাঞ্ছা কি ছন্ন-ভন্ন, ব্যাতা ব্যাতা হইয়া মাটিত মিশ্যা যায় নাই! সগলতে দেখতাছে ইসুফ মিয়ার সব ঠিক যাইতাছে। জানুক; লোকে অই জানুক। আর, ভিতরের নাই-দগ্ধানির খবরখান থাকুক খালি তার তার নিজের গোচরে।
অখন তারে আর পষ্টরকম মোনেও আহে না ইসুফ মিয়ার! কেমুন আছিলো তার মোখের গঠনখান? নিজেরে জোর কইরাও সেই মোখের ঢক-নমুনা পষ্ট মোনে আনতে পারে না আর সেয়। যা কিছু মোনে আহে তার, সব য্যান খুয়া খুয়া, ঝাপসা-রকম! জুলি য্যান আর জ্যাতা নাই তার অন্তরে! খালি জ্যাতা আছে নিজের পরানের টাটানিখান! না, মিটোন্তি আশাখানের লেইগা কষ্টটা তাজা আছে খালি! আর কিছু নাই।
সেয়ও মতে মতে দিনক্ষণ ধইরা গইন্না দেখে, এই চৈত মাসে পাঁচ-পাঁচটা বছর হইয়া যাইবো জুলেখার হারানি যাওনের! এই চলতাছে ১৩৩৫ সন। চৈত গেলে গা আইবো বৈশাখ! নয়া সন। সেই সনও যাওয়া ধরবো আবার নয়া কইরা! কিন্তু জুলির কোনো খোঁজ মিলবো না!
জুলেখারে যে আর পাওয়া যাইবো না—এই কথা গেরামের সগলতে বুইজ্জা ফালাইছে সেই কবে! তারে ফিরত পাওনের যে আর আশা নাই, সেইটা ভালারকম বুইজ্জা গেছিলো জুলেখার বাপেও। সেই কারোনেই সেয় ফরজন্দ ফরজন্দ, ওয়ারিশ ওয়ারিশ কইরা অমুন বেতালা হইয়া গেছিলো। বিয়া কইরা নয়া বউ ঘরে তোলোনের লেইগা বেজাহানি হইছিলো!
কিন্তু এই যে সাদা হাছা কথাখান—এইটা একজোনরে কেউই বোঝাইতে পারে নাই। কেউই তারে বিশ্বাস করাইতে পারে নাই যে, জুলেখার আর ফিরা আওয়ার আশা নাই! আর আশা নাই!
সেয় কেটায়?
আর কে! সেয় হইলো জুলেখার মাওয়ে!
আগে আগে লোকের মোখে যেই সেই কুকথাখান শোনতো জুলেখার মায়ে; শোনতো যে তার মাইয়ারে আর ফিরা আওনের আশা নাই—কথাখান তার কানে আইতো, না য্যান তারে কেউ জোর ধাক্কা দিয়া মাটিত ফালাইয়া দিতো। না, দাঁতি খাইতো না সেয়।
সেই পইল্লা বারের পর আর কোনোদিনও তারে কেউ দাঁতি খাইতে দেখে নাই। সেয় মাটিতে আছড়াইয়া পইড়া মাটি, মা-কাকির লগে নিজের মাথারে ঠোক্কাইতো, আর চিক্কুর দিতে থাকতো। হাইরে-মাইরে চিক্কুর। কতো কতো দিন এইই করতে করতে সেয় নিজের কপাল ফাটাইয়া, লউ বাইর কইরা, সে এক রক্তারক্তি কারবার বান্ধাইয়া ছাড়ছে। একেক দিন তহন, দশ মাতারি যাইত্তা ধইরা নি তারে থামান গেছে!
বেপার দেইক্ষা ক্রমে গেরামের লোকে বোজছে যে, জুলেখার মায়ের বাঁচাইতে চাইলে তার সামোনে তার মাইয়া তুইল্লা একটা টুঁ-আওয়াজও করোন উচিত কর্ম হইবো না। তাও যুদি জুলেখা বিষয়ে তাগো কিছু কওন লাগেই, তয়, হেইটা কইবো তারা জুলেখার মায়ের আগোচরে, আউইলে। তার সামোনে আর কোনো অবস্থাতেই না! কইয়া কি মাতারিরে আরো আজাবের তলে ফালাইবো নি!
অখন কেউই আর জুলেখার মায়ের সামোনে জুলেখার নাম তরি মোখে আনে না! পারতে তারা কেউই—অই মাতারিরে জুলেখার মা কইয়া—ডাক পর্যন্ত দিতে যায় না। কিগো বইন, কিগো মা— কইরা ডাকখোঁজ নিয়াই তারা দরকার সারে। কী দরকার এক দুক্ষিনীর চিত্তে নাই-জ্বালা বাড়ানের!
এদিগে, লোকে যতো মাইয়ার কথা কওয়া তার সামোনে বন্ধ করছে; জুলেখার মায়ের অন্তরে ততো বিশ্বাস গাড়াইছে যে, মাইয়া তার আইবোই আইবো! আইবোই। লোকে আলা যা মোনে চায় কউক, মায়ের অন্তর কয় যে মাইয়ারে পাওন যাইবোই!
দুনিয়াদারির কতো সাধ-আল্লাদের বাত্তি তার চক্ষের সামোনে নিভ্ভা গেলো! ভরাপুরা সংসারের বউ সেয়, ক্রমে হইয়া গেলো রাঁড়ি-বেওয়া! তিনবেলা যেই বাইত চুলা জ্বলতো; সেই বাড়িতে ক্রমে একবেলা কোনোরকমে চুলা জ্বলন্তির দিনও আইয়া খুঁটা-গাইড়া বইলো, কিন্তু মাইয়ারে ফিরতি পাওনের বিশ্বাসখান অন্তরের তেনে মোছলো না তার।
কোনো একদিন শীতলক্ষ্যা গাঙ্গের হেই পাড়ে, নবীগঞ্জে, তার বাপের বাড়ি আছিলো! বাপে মরছিলো তার ছোটোকালেই। মায় গেছে বিয়ার বছর ঘুরতে না ঘুরতে। মায়ের কোলের এই একখান ছাওই আছিলো সেয়। আর তাগো বাড়িভরা আছিলো জুয়ান জুয়ান সতালো সাত ভাই। মায়ও চোখ বোজলো, তারও বাপের বাড়ির পোথে জন্মের মতোন কাঁটা বিছাইয়া দিলো বিধিয়ে।
দেওভোগ গেরামের এই ভিটিখান ছাড়া তার আর যাওনের কোনো জায়গা নাই। কোনো ইষ্টি নাই-খেসি নাই-আত্মীয় নাই-মোখ বোলা কোনো কুটুমও নাই! কোনো একটা জোন নাই যারে সেয় খোসামদ করে।
একটা কেউই নাই, যারে জুলেখার মায়ে খোসামদ কইরা কয়, সেয় য্যান আভাগী মায়ের দিগে চাইয়া, আল্লার ওয়াস্তে, আবার নয়া কইরা জুলেখারে বিছরানির একটা কোনো বেবস্থা করে! খালি একবারের লেইগা! কেউরে আর জিন্দিগিতেও কোনো খোসামদ করবো না জুলেখার মায়!
পইল্লা বার যেমুন নানান গেরামে, গঞ্জের নানা জায়গায়, সগলতে তল্লাশ দিছিলো! আবার যুদি দিতো! একবার খালি দিতো! কে জানে এতোকাল বাদে বাইদ্যানীরা টুন্ডা-লুলা বানাইয়া জুলেখারে দিয়া গঞ্জের রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করাইতাছে কিনা! লোকে যুদি আরেকবার খোঁজ নিতো! যুদি আরেকটা বার!
অন্তরের এই বাসনাখান সেয় একলা একলা নিজের ভিতরে রাখতে রাখতে একসোম আর রাখোনের শক্তিখান পায় না। কেউইরে কওনের লেইগা জান বাইর অইয়া যাইতে থাকে তার। পরা তার কারে কই-কারে কই কইরা তড়পাইতে থাকে!
ইসুফ মিয়ার মা ভাউজরে কওন তো যায়ই! অখন তো জুলেখার মায়ের সগল নাই আবদারের কথা কওনের মানুষ অই একজোনই! কিন্তু ক্যান জানি তার মোনে অয়, তার চিত্তির এই বাঞ্ছাখান—জুলেখারে নয়া কইরা বিছরান্তির কথাখান—ভাউজে গোণায় নিবো না। কইবো, আর এই নিয়া মাইনষেরে যাতনা দিয়া কাম নাই! অখন আল্লার হাতে ছাইড়া দে। সেয় যা ভালা বোজবো, করবো!
আর একজোন আছে, যারে কোওন যায়! কিন্তু তার কাছে জুলেখারে নিয়া কিছু কইতে গেলে অন্তরটা তার কেমুন জানি মোচড়ানি দিয়া ওঠে! গলা ভাইঙ্গা যাইতে চায়!
জুলেখার মায়েরে কেউ কিছু খোলাসা কইরা কয় নাই কোনোদিন; কিন্তুক কানাঘুষায় সেয় তো শোনছে কিছু। ইসুফ মিয়ার মায়ের ভাবে তো সেয় বোজছেও কিছু! আহ! কেমুন মা সেয়!
আহ! ক্যান সেয় সময়কালে খেয়াল করে নাই বিষয়খান? ক্যান তার নজরে আহে নাই!
এট্টু যুদি বোজতো, এট্টু যুদি আন্দাজ করতে পারতো, তাইলে নি সেয় এমনে ধ্বংস হইতে দিতো কোনোকিছু! দরকারে নাইলে সেয় ভাউজের পাও ধইরা পইড়া থাকতো। পইড়া থাইক্কা মাইয়ারে গছাইতো তার হাতে!
জানতে এতো দেরি হইলো ক্যান তার! আর, না-ই যখন জানছিলো, তাইলে সব শেষ হওনের পর, সেই বিষয় তার কানে আওনেরই বা কোন কাম আছিলো! বিধির খেয়াল দেখো! এইটা তার কেমুন লীলা! সেয় জুলেখার মায়রে দশরকমে পোড়া, ভাজা ভাজা না করলে তার সুখ হইতাছিলো না!
বাইরে বাইরে ইসুফ মিয়ার লগে নানান পদের দরকারি কথা তো কয় জুলেখার মায়ে; কিন্তু ভিতরে তার অই এক কান্দুনিই চলতে থাকে! চলতেই থাকে। কারে সেয় অখন করে এই দুক্ষের দোসর! কারে! কেউইরে না।
মাঘ মাসে দেওভোগ গেরামের মাইনষেরে একখান বিধি পালন করোন লাগে। আউজকা বহুতদিন ধইরা তারা এই বিধি পালন্তি কইরা যাইতাছে। ক্যান করতাছে—তারা কেউ তা জানে না। তয় জানে, তারা যে এইটা করতাছে, করতাছে মুরুব্বিগো হুকুমমাফিক। আগের আমলের মুরুব্বিরা আঁতি-পাতি কইরা তাগো এইটা পালনি করতে কইয়া গেছে।
বিধিখান তেমুন ঘোরালো কিছু না! বিধি হইলো, গেরামের সগল ঘরের মাইনষেরে মাঘ মাইস্যা যেকোনো শনি-মোঙ্গলবারে নয়া-চাইলের খুদ দিয়া খুদের-ভাপা রাইন্ধা খাওন লাগবো। তবে একলা খালি নিজেরা নিজেরা খাইলেই হইবো না। নিজেগো লগে অন্য বাড়ির দুই-চাইর জোনরেও দাওয়াত দিয়া খাওয়ান লাগবো।
এই গেরামে সেই বিধি আউজকা চইল্লা আইতাছে বহুত জন্ম ধইরা। লোকে সুখে থাকুক, দুক্ষে থাকুক, মাঘ মাইস্যা দিনে বিধিখান পালন করেই করে।
গেলো চাইর বচ্ছরের একবারও ইসুফ মিয়ার মায়ে জুলেখার মায়রে বিধি পালন্তির লেইগা চুলা ধরাইতে দেয় নাই। সেয় তাগো বাড়ির তেনেই, ভাও মতোন রান্ধন-বাড়ন কইরা এই বাড়িতে দিয়া পাঠাইছে। এইবার জুলেখার মায়ের সাধ হইছে, সেয় নিজে রান্ধবো। দাওয়াতও দিবো অল্প কয়জোনরে।
কারে কারে দাওয়াত দিতে চায় সেয়?
এই ইমাম হুজুররে; মংলার মায়রে, আর ইসুফ মিয়ারে।
এই তিনজোনরে সেয় খুদের-ভাপা আর শুঁটকির ভর্তা দিয়া বিয়ানের নাশতা খাইতে দাওয়াত দেয়।
মজিদে সকাল তেনে ইমাম হুজুরের থাকে নানান পদের কাম। সেই কারোনে আসি আসি কইরাও আওনের ফুরসতটা হইতে থাকে না তার। এদিগে খুদের-ভাপা তো জুড়াইলে লাগবো মাটি মাটি! মংলার মায়ে বুদ্ধি কইরা হুজুরের খাওন মজিদে দিয়া আহে। একটা ঝামেলা শেষ কইরা মংলার মায়রে খাইতে বসাইবো জুলেখার মায়, দেখে ইসুফ মিয়ায় আইতাছে।
তাইলে তাগো দোনোজোনরে একলগে বহাইলে কেমুন হয়!
মংলার মায় কয় যে, জিন্দিগিতেও সেয় দাওয়াতি গো আগে খাইতে বইবো না!
তাইলে সেয় অখন জুলেখার মায়ের লগে লগে ইসুফ মিয়ারে খাওয়ানির বিষয়খান দেখুক! আগ্গানি-পাচ্ছানির দরকারি কাম করুক! তার বাদে সেয় আর জুলেখার মায়ে একলগে বইবো নে খাইতে।
ইসুফ মিয়ার পাতে খাওন তুইল্লা দিতে দিতে জুলেখার মায়ের পরান দুক্ষে ছলছলায় ঠিকই, তয় একমোনে তার য্যান ভালাও লাগতে থাকে। কে কইছে পর? পর না তো! ইসুফ মিয়ায় তার ধর্মপুত না? ধর্মপুত। পেটের পোলার জায়গায়ই তো ধর্মপুতের আসনখান!
কোনো কামেই আইজ-কাইল ইসুফ মিয়ায় মোখে কোনো আওয়াজ করে না। কিন্তু কর্মে সেয় বড়ো বুঝদার, দয়ালদার পোলা! জুলেখার মায়রে সেয় যতনও তো করে আত্মা ঢাইল্লা! পিন্ধনের কাপোড় বলো, তেল-সোডাটুক বলো—উয়ে ঠিক বুঝ মতোন দিয়া যাইতাছে ধর্মমায়রে!
এইটা কিসমতের দয়া! আল্লার দান। সেই পুতেরে খাওয়াইতে বইলে পরানখান খুশি হওনই তো উচিত, নাকি? কিন্তু জুলেখার মায়ের কেমুন খরাপ-স্বভাব! ইসুফ মিয়ার পাতে যখনই সেয় খাওন বাইড়া দেয়, তখনই দমকে দমকে তার কান্দন আইতে থাকে। মাইয়াটার কথা আরো বেশি কইরা ভিতরে জাগনা দিতে থাকে। এইটা কেমুন বদ-খাসলত তার!
সেইদিনও ইসুফ মিয়ার পাতে গরম গরম খুদের-ভাপা তুইল্লা দিতে দিতে সেই একই কারবার শুরু হয়। চক্ষের পানিরা মাটিতে পড়োনের লেইগা পাগলা হইয়া ওঠে। সেই পাগলা পানির ধারারে কোনোমতে চক্ষের ভিতরে আটকানি দিয়া রাইক্ষা, জুলেখার মায়ে তার ধর্মপুতেরে কয়, ‘বাজান! গোস্বা যুদি না হন; তয় একটা কথা কইতাম!’
ইসুফ মিয়ায় কথাখান হোনোনের লেইগা পাতের তেনে মোখ তোলে।
‘কইছিলাম কি বাজি! না-বুঝ পরানরে বুঝ মানাইতে পারতাছে না কিসমত-পোড়া মায়!’
‘সেইকালে চেষ্টা তো কেউই কম করে নাই! কিন্তুক আরেকবার যুদি এট্টু দেখতেন! যুদি আভাগী জুলেখারে আরেকবার ইট্টু বিছরানের বেবস্থা করোন যাইতো! মরোনের আগে এই শেষ বাসনাটা যুদি আল্লায় পুরা করতো! আল্লার দিগে চাইয়া আরেকবার যুদি করতেন! বাজান!’
পাতের খাওনে হাত দিয়া এট্টু কতখোন থোম ধইরা থাকে ইসুফ মিয়ায়। য্যান তারে যা কওয়া হইছে, সেই বিষয়খান সেয় পষ্ট বোঝে নাই! য্যান সেয় অখন সেইটা বোজোনের লেইগা ইতিবিতি চেষ্টা করতাছে। কিন্তুক কিছুই য্যান খোলাসা হইতাছে না তার কাছে!
বিত্তান্ত খেয়াল কইরা জুলেখার মায় অন্তরে অন্তরে শরমে দাপাইতে থাকে।
ইছ! সেয় এইটা করলো কী! খাওনের পাতে বহা পোলাটারে সেয় এমুন অশান্তির মিদে ফালাইলো! কোন আক্কলে পারলো সেয়! বুড়া মাতারি হইয়া এমুন বে-আক্কইল্লা কাম সেয় কোন বুঝে করলো! শরম শরম!
জুলেখার মায়ের পিছে বওয়া মংলার মায়ে বিষয়খান সামলানি দেওনের লেইগা তখন করে কী, হুড়াহুড়ি কইরা ইসুফ মিয়ার সামোনে একখান ছোটো খোরা আগ্গাইয়া দেয়। খোরার মিদে দুইটা কাঁচা মরিচ, এট্টু নুন।
সেইগিলির দিগে ইসুফ মিয়ার চোখ পড়ে, না য্যান তার হুঁশ ফিরা আহে। সেয় তখন পাতে একটা কাঁচামরিচ নিতে নিতে আলগোচ্ছে কয়, ‘আইচ্ছা দেহি!’
মুখে তো সেয় অই বুঝ দেয় জুলেখার মায়রে, কিন্তু আদতে সেয় জানে না কী করবো সেয়! কেমনে কী করবো! সেই কামে হাত-রথ আর তার উঠবো কি না, জানে না সেয়! কিছুই জানে না ইসুফ মিয়ায়।
(চলবে)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩৪)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩৩)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩২)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩১)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩০)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন(কিস্তি ২৯)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২৮)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২৭)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন(কিস্তি ২৬)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২৫)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২৪)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন(কিস্তি ২৩)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন(কিস্তি ২২)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২১)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২০)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৯)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৮)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৭)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৬)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৫)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৪)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৩)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১২)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১১)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১০)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৯)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৮)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (সপ্তম কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (ষষ্ঠ কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (পঞ্চম কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (চতুর্থ কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (তৃতীয় কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (দ্বিতীয় কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (প্রথম কিস্তি)