চলচ্চিত্র কথা
মোহাব্বত আলীর ঘুড্ডি
ঘুড্ডি আসলে কী? ঘুড়ি? সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর দুর্লভ সেই ছবি? নাকি সুবর্ণা? আমি যদি বলি ঘুড্ডি আমাদের জীবন? সবগুলোই এক অর্থে ঠিক। কিন্তু ঘুড্ডি মানে আমাদের মনে প্রথম যে ছবিটা আসে সেটা হলো উদম গায়ের দাড়িওয়ালা রাইসুল ইসলাম আসাদ আর তার সাথে পাতলা শাড়ির স্লিভলেস ব্লাউজের সুবর্ণা মুস্তাফা। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে সেই বিখ্যাত গান, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা, শুধু দুজনে...’
‘ঘুড্ডি’ বলতে আমারও চিন্তাভাবনা সে পর্যন্তই ছিল। জানতাম যে ছবির পরিচালক সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী। ‘ঘুড্ডি’কে বলা হয় দুর্লভ ছবি। ‘বিলুপ্তপ্রায়’ ছবিও বলা যায়। কারণ এটি অনলাইনে পাওয়া যায় না। ডিভিডিও নেই। খুঁজতে খুঁজতে ঘুড্ডির দেখা পেলাম এবং দেখলাম। ৩০ জুন ২০১৫, মঙ্গলবার, আমিও সেই সৌভাগ্যবানদের কাতারে যোগ দিলাম যাঁরা একবার হলেও পুরো ‘ঘুড্ডি’ ছবিটা দেখেছেন।
ঘুড্ডি ছবিটা যিনি খুঁজে দিয়েছেন তিনি বিধান রিবেরু। তাঁর সুপারিশ এবং আমার আগ্রহে শেষমেশ দুই ঘণ্টা ২৫ মিনিটের ছবিটা দেখলাম বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে। এর জন্য কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি। আরো দুজন সরকারি কর্মকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা যাঁদের আন্তরিকতার কারণে ছবিটা দেখা হলো। একজন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের বর্তমান মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সহকারী পরিচালক (অপারেশন) মো. মনিরুজ্জামানের প্রতি।
ঘুড্ডি ছবির গল্প সম্পর্কে লোকমুখে শোনা প্রাথমিক যে ধারণা ছিল তা হলো, আসাদ একজন ভবঘুরে, বন্ধুর লন্ড্রি থেকে কাপড় ধার করে মেয়েদের সাথে প্রেম করে বেড়ায় এবং তার লক্ষ্য থাকে বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে রাজকন্যা এবং সাম্রাজ্য হাতিয়ে নেওয়ার।
গল্পের শুরুটা সেই লন্ড্রিতেই। আসাদের বন্ধুর লন্ড্রি। এই ছবির মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চরিত্রের আলাদা করে কোনো নাম দেওয়া হয়নি, তারা বাস্তবের নামেই পর্দায় উপস্থাপিত হয়েছেন। অর্থাৎ আসাদের নাম এখানেও আসাদ, সুবর্ণার নাম সুবর্ণা। তবে আসাদ-সুবর্ণার দুটি ছদ্মনাম আছে। সে নামে আসছি।
আসাদ বন্ধুর লন্ড্রিতে সময় দেন সকালবেলা। কারণ তাঁর কোনো কাজ নেই। যে চাকরিটা তিনি করতেন সেটা বাদ দিয়েছেন। থাকেন একটা টিনের ঘরে, হাতিরপুল বা ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির কাছে (ছবিটা মাত্র একবার দেখার কারণে স্মৃতি থেকে লিখতে হচ্ছে, কিছু বিষয়ে দ্বিধা কাজ করছে)। সকালে লন্ড্রির কাজে সাহায্য করে দুপুরে মতিঝিলে বন্ধুবান্ধবদের অফিসে খাওয়া-দাওয়া এবং আড্ডা।
আসাদের কথায় ঢাকাইয়া টান আছে। ‘কয় কি হালায়’, ‘বুজছোস মামা’-এসব বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার টোন। অবশ্য সুবর্ণা এবং তাদের বন্ধুদের সামনে তাঁর ভাষা ভদ্রস্থ এবং মার্জিত। লন্ড্রি থেকে আসাদ একটা শার্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। রিকশাভাড়া পকেটে নেই। শাহবাগের কাছে এসে বন্ধুর গাড়িতে উঠে পড়ে। বন্ধুর কাছ থেকেই রিকশাওয়ালাকে দুই টাকা ভাড়া দিয়ে দেয়।
এরপর তাদের গন্তব্য ‘কন্টি’। কন্টি মানে সেই সময়ের হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, আজকের শেরাটন বা রুপসী বাংলা। কন্টির পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে আসাদের বন্ধু চলে যায় ভিতরে। আসাদ বাইরে গাড়িতেই বসে থাকে। এই সময় আসেন ছবির নায়িকা সুবর্ণা। আসাদের সাথে তার দেখা। নিজের গাড়িটা বের করার জন্য আসাদের গাড়িটা সরাতে অনুরোধ করেন তিনি। আর সে সময়েই আসাদের নতুন কেনা গাড়ির প্রশংসা করেন সুবর্ণা। আসাদও সুযোগটা লুফে নেন। ভাব নেন, তিনিই গাড়ির মালিক, ড্রাইভারকে পাঠিয়েছেন ভেতরে।
এই সুযোগে আলাপ জমলেও সুবর্ণার গাড়ি আর স্টার্ট নেয় না। এমন সুযোগ হাতছাড়া করে না আসাদ। লিফট দেওয়ার অফার দিয়ে বসে এবং দৌড়ে গিয়ে বন্ধুর কাছ থেকে চাবি নিয়ে আসে। গাড়িওয়ালা বন্ধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আর তার গাড়িতেই সুবর্ণাকে নিয়ে আসাদের চম্পট।
পথে আসাদের বন্ধুর সেই লন্ড্রিতে থামে সুবর্ণা। সেখানেই টি-শার্ট আর স্কার্ট বদলে শাড়ি পরে নেন সুবর্ণা। আসাদের বন্ধু আসাদকে চিনলেও ইঙ্গিত পাওয়ায় এড়িয়ে যান। তখনো কেউ কারো নাম জানেন না। এরই মধ্যে সুবর্ণার এক বান্ধবী পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে তাকে ডাক দেন, ‘এই ঘুড্ডি’! সুবর্ণাও জবাব দেন, ‘আরে লাড্ডু, তুই?’
এভাবেই আসে ছবির নাম। সে হিসেবে ধরলে সুবর্ণাই এই ছবির নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন। আসাদ যখন এই নামের অর্থ জানতে চাইলেন তখন সুবর্ণা হেসে জবাব দিলেন, ঘুরতে খুব পছন্দ করেন তিনি আর সে কারণেই বন্ধুরা আদর করে ঘুড্ডি ডাকে তাঁকে।
এবার আসাদের নাম জানার পালা। সুবর্ণার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসাদের নাম যখন জিজ্ঞেস করে সুবর্ণা তখন আসাদ লজ্জা পায়। বলে সেকেলে নাম, দাদা রেখেছেন, শুনে হাসবেন না। খুবই লাজুক ভঙ্গিতে নিজের ছদ্মনাম উচ্চারণ করেন আসাদ- ‘মোহাব্বত আলী।’
প্রথম দেখায় প্রেম। নায়ক স্বপ্ন দেখে রাজ্যসহ রাজকন্যার আর নায়িকা স্বপ্ন দেখে মুক্তির। এই সরলরৈখিক হিসেবে গল্প আগায়। আসাদের সেই লন্ড্রিকেন্দ্রিক বাউন্ডুলে জীবন। সুবর্ণার সঙ্গে আবার সেই লন্ড্রিতেই দেখা। তবে পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবে বলে লুকিয়ে থাকেন আসাদ। এদিকে সুবর্ণার ছবি দেখার তাড়া। দুপুর ৩টার শো, শ্যামলী সিনেমা হলে। বিড়বিড় করে সেটা বলেই কাপড়গুলো লন্ড্রিতে রেখে সুবর্ণার দৌড়। আসাদও নায়িকার পেছনে পেছনে শ্যামলীতে পৌঁছে যায়, যদিও পকেটে টাকা নেই।
হলে ঢোকার মুখেই দুজনের ধাক্কা। যদিও সেটা আসাদের ইচ্ছে করেই করা যাতে সুবর্ণার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। সিনেমার ব্রেকে দুজনের আবার দেখা দুটি পেপসি আর দুটি রোলে। আসাদ একটু সময়ে চেয়ে আড়াল হয়ে যান। গিয়ে দেখেন পকেটে কত আছে। হিসেব করেন, ‘দুইটা রোল দুই টাকা আর পেপসি। যাহ শালা! ফাইস্যা গেলাম নাকি’!
এবার দুজনের খাতির জমে। সুবর্ণা স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্রী। আসাদ বলে বসেন, এটা তারও প্রিয় বিষয়। এরপর সুবর্ণাকে দেখি বুয়েটে, তার ক্যাম্পাসে। আর ইয়ামাহা হোন্ডায় আবিষ্কার করি হ্যাপিকে। ছবির মতো ছবির কয়েকটি চরিত্রও আজ দুর্লভ, সহজে দেখা মেলে না। তাদের একজন হ্যাপি আখন্দ। সে সময়ের বিখ্যাত গিটারিস্ট, মিউজিশিয়ান। ছবির ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি তারই গাওয়া। হ্যাপি সুবর্ণাকে নিয়ে যান তারিকদের বাসায়। তারিক সুবর্ণার চাচাতো ভাই। তারিক মানে তারিক আনাম খান।
আবার আসাদ-সুবর্ণা। ছবির নায়ক-নায়িকা যে তারাই। সুবর্ণার গাড়িতে করে গাজীপুরের শালবনের দিকে চলে যান তাঁরা। কিন্তু সুবর্ণার গাড়ির তো নষ্ট হওয়ার বাতিক। তাই হলো। আর সেই গাড়ি ঠ্যালার জন্য তাদের সঙ্গে যোগ দিল একদল ছেলেপোলে। গাড়ি ঠ্যালাটাই ওদের জন্য মজার একটা খেলা।
সেই খুশিতে আসাদের দরাজ গলায় গান আর সুবর্ণার মিটিমিটি হাসি। শালবনে দুজনের বাধহীন ছোটাছুটি। শুধু বন্ধুদের দেওয়া নামই নয় সুবর্ণা আসলেই যেন আসাদের জীবনে আসে এক ঘুড্ডি হয়ে। সেই ঘুড্ডি ওড়াতেই ধার করা গাড়ি, শার্ট নিয়ে আসাদের মুখে কথার এত ফুলঝুড়ি।
দামি রেস্টুরেন্টে আবার দুজনের সাক্ষাৎ। সেখানেই আসাদের ফিলোসফি যেন আসকারা পায়। আসাদ বলে রেস্টুরেন্টের দামি খাবার আর সিনেমার নায়িকারা (শাবানা, নূতনের নাম নেয় আসাদ) নাকি একইরকম। তাদের দেখতে ভালো লাগে, সবসময় পেতে ইচ্ছে করে কিন্তু কখনোই ছোঁয়া যায় না। সাধারণের জন্য নন তাঁরা।
সুবর্ণাদের বাসার আড্ডায় পাওয়া যায় সবাইকে। প্রথমবারের মতো পাওয়া যায় সুবর্ণার বাবা হাসান ইমামকে। সেখানেই রাজনীতি নিয়ে তর্ক লেগে যায় তারিকের সাথে। তারিক তাঁর চাচাকে প্রশ্ন করে বসেন, যে মানুষটা পঞ্চাশের দশকে কমিউনিস্ট ছিলেন তিনি কীভাবে এভাবে নিজের পরিচয় পাল্টে ধনসম্পদ গড়ে তুলেছেন? হাসান ইমাম ক্ষেপে গিয়ে তাঁকে উত্তর দেন, ইতিহাসের অনেক কিছুই তুমি জান না।
একেক দিন একেক বন্ধুর গাড়ি ধার করে সুবর্ণাকে নিয়ে ঘুরতে যায় আসাদ (সুবর্ণার কাছে যে মোহাব্বত আলী)। সুবর্ণারও এই যুবককে বেশ লাগে। ক্লাস অ্যাসাইনমেন্টে মোহাব্বত আলীকে নিয়ে সাভারের স্মৃতিসৌধে চলে যায় সুবর্ণা। সেখানে আমরা দেখি শুধু একটি স্তম্ভ। তখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি আজকের বিশাল স্মৃতিসৌধের কাজ।
তারপর আরেকদিন সোনারগাঁ। সেখানে ওদের পথ চিনিয়ে দেয় যে ছোট্ট ছেলেটা, ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে ছাদ থেকে পড়ে হঠাৎ মারা যায় সে। মানুষের জীবনটাও হয়তো এ রকমই ঘুড়ি ওড়ানোর মতোই। একবার সুতো ছিঁড়ে গেলে নিশ্চিত পতন। সে পতন ঠেকানোর সাধ্য কারো নেই।
চাকরি বাকরি ছেড়ে আসাদের ইচ্ছে ছিল হিরো হওয়ার। মতিঝিলে তাঁর এক পয়সাওয়ালা ব্যবসায়ী বন্ধু আছে। তার ওখানেই সে পড়ে থাকে। সেই বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার নেয়, গাড়ি ধার নেয় আর সুবর্ণাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আসাদের যে হিরো হওয়ার ইচ্ছে বন্ধু সেটা ভালোমতোই জানেন, তাই একদিন আসাদকে তিনি নিয়ে যান সিনেমার শুটিংয়ে। সেখানেই নূপুরের (নায়লা আযাদ নুপূর) সাথে দেখা আসাদের। সুবর্ণার মতো আসাদের খোলা আকাশে নূপুরও যেন ঘুড্ডি। সেও উড়তে থাকে নিজের মতো করে। আসাদ কাউকে বাধা দেয় না বরং সঙ্গ দেয়।
চলে আসে নূপুরের জীবন। নূপুর একজন ডান্সার। ছবিতে নাচে, ক্লাবে নাচে। আসাদের সঙ্গে নিজের জীবনের গল্প করে সে। জানায় ঢাকা শহর ছেড়ে সে যেতে চায় না। কারণ ২৫ মার্চের কালরাতে এই শহরেই সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েছে। তার মনে হয় এই শহরে থাকলে কখনো হয় তো আবার সেই মানুষটার সঙ্গে তার দেখা হবে। কিন্তু হয় না। এক সন্ধ্যায় শেষ শো করে ঢাকা থেকে চলে যায় নূপুর।
থেকে যায় আসাদ। থেকে যায় সুবর্ণা। পুরো ছবিটাই আসাদ-সুবর্ণার ঘোরাঘুরি দিয়ে ঘেরা। সোনারগাঁয়ের পর তাঁদের গন্তব্য কক্সবাজার। কিন্তু আসাদের পকেটে তো টাকা নেই। বন্ধুর কাছে টাকা ধার চাইলেও বন্ধু দিতে চায় না। আসাদকে বাস্তবে ফিরে আসতে বলে সে। সুবর্ণার পেছনে খরচ করার জন্য সে আর কোনো টাকা দিতে পারবে না। অথচ আসাদের বাড়িভাড়া বকেয়া। সেটা নিয়ে কোনো তাগিদ নেই তাঁর।
ঠিকই সুবর্ণাকে নিয়ে কক্সবাজার পাড়ি জমায় আসাদ। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে শুধু অন্তর্বাস পরা আসাদ যেন প্রকৃতির সন্তান। সঙ্গী সুবর্ণা। দুজনের কারোরই ঘরে ফেরার তাড়া নেই। সমুদ্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও হারিয়ে যেতে চায় গভীরে।
এরই মধ্যে আপনি থেকে তুমিতে উন্নীত হয়েছে ওদের। সুবর্ণার ঘর বাধার স্বপ্নও পাকা। আসলে ঘর বাধা নয়। বাবার বাড়ি সে ছাড়তে চায় নিজের জগৎ গড়তে। যেখানে আসাদের মতো সঙ্গীই তাঁর প্রয়োজন। সুবর্ণা শুধু ঘুড্ডি হয়ে উড়তে চান, যার নাটাই থাকবে আসাদের হাতে।
সুবর্ণার তাই আসাদের বাড়ি যেতে চান। আসাদও নিয়ে চলেন। কিন্তু বাড়িতে নয় এক টুকরো জমিতে। যেটা আসাদ নিজের দাবি করে বলেন সেখানেই নিজেদের জন্য নতুন বাড়ি করবেন তাঁরা। সুবর্ণার শুধু একটাই আবদার। শোবার ঘরের জানালায় তিনি গোলাপ রাখতে চান।
ঢাকায় ফিরে এসে আসাদের জীবনে ছন্দপতন ঘটে। বাড়িভাড়া দিতে না পারায় বুড়ি বাড়িওয়ালি আসাদকে বের করে দেন। আর আসাদের অফিসে গিয়ে সুবর্ণাও জানতে পারেন আসলে মোহাব্বত আলী নামের যে বড়লোকি ইমেজটা তার সামনে তৈরি হয়েছিল সেটা শুধুই একজন অভিনেতার। বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। অফিস থেকেই আসাদের ঠিকানা পাওয়া- সেদিকেই ছুটে যাওয়া সুবর্ণার। আসাদ তখন ভাড়াবাড়ি ছেড়ে রাস্তায়। সুবর্ণাকে দেখে তিনি পালিয়ে যান।
কিন্তু আসলে কি পালাতে পারেন? রাজকন্যা-রাজত্ব আর হিরো হওয়ার মোহে পড়ে আর কিছু না হলেও ভালোবাসাটা ঠিকঠাক হয়ে গেছে আসাদের। সুবর্ণার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মতো মুখ নেই তাঁর। তবু তাঁকে যেতেই হবে, অন্তত ভালোবাসার কথাটা বলার জন্য হলেও। সংকোচ নিয়ে আসাদ ফিরে আসেন সুবর্ণার কাছে।
বুড়িগঙ্গার পাড়ে এক বিকেলে সুবর্ণার সঙ্গে তখন তারিক। নদীর ওপর এক রেস্টুরেন্টে সুবর্ণার পথ আটকান আসাদ। বলেন তার সব মিথ্যে হলেও ভালোবাসাটা সত্যি। আসাদ আকুতি করেন, ‘আমার সমস্ত শরীরজুড়ে ভালোবাসা। একবার ছুঁয়ে দেখ।’ সুবর্ণা সে ভালোবাসা ছুঁয়ে দেখতে পারেন না। নদীতে ঝাপ দেন আসাদ, তাঁকে আর পাওয়া যায় না।
কিন্তু আসাদকে না পেলে সুবর্ণা তো অপূর্ণ। সিনেমাও নায়কের মৃত্যুতে অপূর্ণ। তাই আসাদ ফিরে আসেন। সশরীরে নয়, ফিরে আসে আসাদের চিঠি। প্রাপকের ঠিকানায় তারিকের নাম। সুবর্ণার সঙ্গে দেখা করতে চায় আসাদ। অভিমানী সুবর্ণা দেখা করবে না, কিন্তু ভেতরে সেও তো আসাদের জন্য কাবু।
আসাদকে দেখা যায় নৌকার মাঝি হিসেবে। সেখানে গোলাম মুস্তফাকেও এক ঝলক দেখা যায় মাঝির চরিত্রে। জীবন প্রসঙ্গে মাঝির আলাপ অনেক বেশি সঙ্গত মনে হয় আসাদের। সে নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মাঝনদীতে। সেখানেই হাজির হয় সুবর্ণা, আরেক নৌকায়। আসাদ অভিমানে ফিরে যেতে চান। কিন্তু সুবর্ণা তো আসাদকে দ্বিতীয়বার হারাতে দেবেন না। আসাদের নৌকায় যাওয়ার জন্য ঝাঁপ দেন তিনি, পড়ে যান নদীতে। সুবর্ণাকে বাঁচাতে আসাদও ঝাঁপ দেন, নৌকায় তুলে নেন সুবর্ণাকে।
আসাদের হাতে বৈঠা, নৌকায় সুবর্ণা। পাড়ে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা, ফিরে যাচ্ছেন জীবনের কাছে।