সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন
ইসুফ মিয়া ভাইয়ে এইনে কইত্তেনে আইলো!
এই নিরালা ঘাটে যে জুলেখায় আইছে, হেয় হেইটা জানলো ক্যামনে!
দেহো তো মিয়াভাইয়ে কেমুন! জুলেখায় ডুব দিতে আইছে না? হেইনে এমনে আইয়া খাড়াইলে—জুলেখার শরম লাগবো না! মিয়াভাইয়ে থাকলে ক্যামনে ডুব দিবো তাইলে উয়ে! শরম না!
এক ঝটকা চাওন দিয়া মিয়াভাইরে এট্টু হাছা-মিছা দেখতে দেখতে এই এত্তাটি কতা মনে আহে জুলেখার! একবার তার মোনে শরম আহে, একবার এট্টু খুশিও আহে। দেহো মিয়াভাইয়ে ক্যামনে ঠিকঅই জুলেখার খোঁজ পাইছে! ক্যান আইছে হেয়! এইনে আইছে ক্যান! বাইত দেহি যায় না হেয়! আউজকা কতোদিন হয় তারে তো পোথে-ঘাটেও দেহে না জুলিয়ে! অহন কিনা এইনে আইছে হেয়!
মিয়াভাইরে দেইক্ষা খুশি লাগে যেমুন-তেমুন, লগে লগে আবার মোনের ভিতরে ডরও করতে থাকে জুলেখার! কেউ যুদি দেইখ্যা ফালাইয়া থাকে যে, নিরালা ঘাটলায় একলা জুলেখা লগে দেহা করছে মিয়াভাইয়ে! তাইলে না মাইনষে মন্দ কইবো! মায় না হোনলে জানে মাইরা ফালাইবো জুলিরে!
অর বিয়ার কতা না পাক্কা করতে গেছে বাবায় আউজকা! হেই মাইয়ায় নি আরেক ছেড়ার লগে ছাড়া-বাড়ির পুষ্কুনীর ঘাটলায় বইয়া কতা কয়! আল্লা গো! কেউ দেখলে কলঙ্কী কইবো না জুলেখারে! মিয়াভাইয়ে ক্যান এইনে আইছে! কেটায় কোনদিগ তেনে না-জানি দেইখ্যা ফালায়!
মোনের ভিতরের এই ডর মোনে লাড়া-চাড়া দিয়া সারেও না জুলেখায়, না জানি ক্যামনে দেখো—মোনের সেই ভেদের কথাখান ইসুফ মিয়াভাইয়ে ধইরাও ফালায়! জুলেখার অন্তরের কথাখান ধরতে পাইরা সেয় সেইকথার জব দিতে এট্টুও দেরি করে না।
‘জুলেখা! আউজকা আর আমার দেখা না দিয়া উপায় আছিলো না!’ মিয়াভাইয়ে কয়।
মিয়াভাইয়ে দেখো কেমুন কইরা কথা কয়! কী কয় এইটা সেয়!
দেখা না দিয়া আর উপায় আছিলো না! এইটা আবার কিমুন কথা! কোন কারোনে তারে দেখা দিতে হইবো! জুলেখার লগে আলাদা কইরা দেখা দেওনের কিছু তো নাই! মিয়াভাইয়ে কবে আর তারে অতো গুরুত্বি দিয়া থুইছিলো! কী জানি মিয়াভাইয়ে এমনে কথা কয় ক্যান আউজকা!
জুলির মনের ভিতরে এই যে এমুন নানান রকম ধন্ধ লড়তে-চড়তে থাকে, সেই কথাও ক্যামনে জানি মিয়াভাইয়ে আউজকা বুইজ্জা ফালায়, পইড়া ফালায়।
সেয় মোখ থতমত কইরা জুলেখারে কয়, ‘আউজকা পরথম তো! আউজকা আমার কথা একটুক উল্টা-সিধাই লাগতে পারে জুলেখা! আউজকা যে পরথম!’
ইসুফ মিয়াভাইয়ে কী কয় দেহো! হেয় বোলে আউজকা পইল্লাবার জুলির লগে কথা কইতাছে! ইইস! মাতা খরাপ হইছে নি হের!
জন্মের তেনে বোলে একলগে বড়ো হইলো দোনোজোনে! কতা কী হেরা দোনোজোনে আউজকা-কাউলকার তেনে কইতাছে! যুগ-জনম ধইরা কইতাছে! অহন দেহো কী কইতাছে হেয়! আউজকা বোলে পইল্লা বার! মিয়াভাইয়ে জুলির লগে তামশা করে!
মিয়াভাইয়ের আজাইরা তামশাটারে ধরতে পাইরা তাইলে কি আর জুলি না হাইস্সা থাকতে পারে! পারে না। উয়ে করে কী—খিলখিলাইয়া হাসি দিয়া ফালায়।
ওম্মা! জুলিরে হাসতে দেইখ্যা মিয়াভাইয়ে সেইদিন কেমুন অচিন রকম কারবার করে দেহো! অন্য অন্য সোম না জুলি হাসলে হেয়ও হাইস্সা কুটিপাটি হয়! আউজকা সেয় জুলির লগে লগে হাসোনের নামও নেয় না!
সেয় জানি কেমুন উতালা চক্ষে চাইয়া থাকে জুলেখার মোখের দিগে! কেমুন য্যান বেদিশা দেখাইতে থাকে তারে! য্যান সেয় জুলেখার হাসিটুক দ্যাখতাছে, না, চক্ষের সামোনে আচানক সোহাগের কিছুরে দ্যাখতাছে—সেইটা পরিষ্কার কইরা ধইরা উঠতে পারতাছে না! মিয়াভাইয়ে এমুন অস্থির বেতালা, এমুন খুশি খুশি হইতাছে ক্যান জুলির হাসি দেইখ্যা!
এই না একটু আগে জুলির মোনের কথাটি ফরফরাইয়া ধইরা ফালাইলো মিয়াভাইয়ে, আবার এই অখন দেখো জুলির ভিতরের এই কথাখানেরে য্যান মিয়াভাইয়ে আর ধরতেই পারতাছে না।
কোন কথাখান?
এই যে জুলির মোনে যেই কথাটা লড়তাছে! কথাখান হইলো জুলির মোখের আঁতকা হাসি দেইখ্যা ক্যান অমুন খুশি খুশি হইতাছে মিয়াভাইয়ে আউজকা! কোন কারণে এমুন করতাছে! সেয় তো আগে কোনোকালে এমুন করে নাই!
না! জুলির অন্তরের সেই কথাখানের দিগে মিয়াভাইয়ের কোনো হুঁশ নাই। সেয় করতাছে অন্য কিছু। দেখো দেখো, কী করে ইসুফ মিয়াভাইয়ে!
সেয় জুলেখারে আর একটা কথাও না কইয়া করে কী, তার দুই হাত আর মোখ বকুলগাছের দিগে উঠায়। উঠাইয়া থির হইয়া থাকে সেয়। কোনো একটা আওয়াজ নাই তার মোখে, কোনো সাড়া নাই।
মিয়াভাইয়ের মোখ পুরা বন্ধ; তাও জুলি পষ্ট হোনে যে, মিয়াভাইয়ে বকুল গাছেরে কইতাছে, ‘সই! দুগা ফুল দেও! যেই হাসির কাছে আমার জীবন-মরণ সব বিকাইছি, তার পাওয়ের কাছে তোমার ফুলটুক থুইয়া আউজকা নিজের সঁপি আমি!’
মিয়াভাইয়ে অই কথা কয়, আর কথা হুইন্না বকুলগাছে য্যান পুরা তবদা খাইয়া যায়। গাছের একটা পাতা তরি লড়ে না। এমনে এমনে অল্পখোন যায়, না বহুখোন যায় জুলিয়ে দিশা পায় না।
তার বাদে কেমুন এক আচানকের কারবার যে ঘটে! নিজের চক্ষে দেইখ্যাও বিশ্বাস করোনের নি কোনো রাস্তা থাকে জুলির সামোনে! আল্লা!
জুলি দেখে, বকুলগাছের তেনে ফুল পড়া ধরছে। পড়তাছে বকুল ফুল! ঝুর ঝুর ঝুর ঝুর!
গাছের আর কোনো ঠাইল্লার তেনে ফুল পড়ুন্তির নামও নাই! খালি পড়তাছে অই একদিগে। মিয়াভাইয়ে যেইনে তার দুই হাত পাইত্তা থুইছে, ফুলেরা ঝুবঝুবাইয়া পড়তাছে সেই হাতের উপরে! একটা ফুলও এমনে সেমনে এইদিগে সেইদিগে ছিট্টা পড়তাছে না। তারা অস্তে কইরা কইরা আইয়া নামতাছে মিয়াভাইয়ের দুই হাতের আঁজলায়!
মা মা মা! এমুন আচানক বিত্তান্ত জুলি জীবনে দেখছে না হোনছে! মিয়াভাইয়ে কেমুন আচানক কাইজ-কারবার করতাছে আজকা!
আঁজলাভরা বকুল ফুল নিয়া মিয়াভাইয়ে করে কী, সেয় অস্তে পাওয়ে সিঁড়ি বাইয়া নামা ধরে। কই যায় সেয়? জুলেখায় পরথমে ধরতে পারে না।
অম্মা! বেশি নামার দিগে তো সেয় যায় নয়া! সেয় যায় জুলেখার পাও রাখা আছে যেই সিঁড়িতে, সেইনে।
ধীর কদমে সেইনে গিয়া সেয় এট্টু খাড়ায়, তার বাদে আলগোছ কইরা বয় সেয় জুলেখার পাও বরাবরি সিঁড়িতে!
ওমা গো! দেহো বইয়া সেয় কী করে! সেয় করে কী, অঞ্জলির সবটি ফুল অস্তে কইরা ঢাইল্লা দেয় জুলির দুই পাওয়ের পাতার ওপরে। আর, সেই ফুলের তেনে কী বাস যে উঠতে থাকে! ফুলে ফুলে ঢাকা পইড়া গেছে জুলির পাওয়ের পাতারা! নাকি সুগন্ধে সুগন্ধে ঢাকা পইড়া গেছে অরা!
হায় হায়! দেহো তো—এইটা কি পাগলামি করতাছে ইসুফ মিয়াভাইয়ে!
পাওয়ের পাতার উপরে ফুল থোয়! ক্যান থুইতাছে সেয় এমনে! এমনে যে থোওন যায়—এই কতা নি জানছিলো জুলি আগে কোনো দিন! মিয়াভাইয়ে আউজকা জুলিরে এটি কী জানায়! ক্যান জানায়!
জিন্দিগী ভইরা না জুলি হোনছে, ফুল মাইনষে হাতে ধরে হাতে রাখে! তাইলে অখন ইসুফ মিয়াভাইয়ে এইটা কী করে! ক্যান এমুন করে সেয় আউজকা জুলির লগে! জিন্দিগীতে যা করে নাই, আউজকা সেই নাই-কাম করে ক্যান হেয়!
আর কিছু না কইতে চায় মিয়াভাইয়ে, তাইলে সেয় না কউক। সেয় খালি জুলেখার এই কতাখানের জব দেউক! ভাইঙ্গা কউক সেয়, কী কারোনে কী ঘটতাছে!
কিন্তু জুলিয়ে দেখে মিয়াভাইয়ে অই কথার জব দিবো কী, সেই জব দেওনের দিশাই তার নাই। সেয় উতলা হইয়া গেছে জুলেখার পাওয়ের থ্যাতলানি-খাওয়া বুইড়া আঙ্গুলটারে নিয়া। হের অন্তর য্যান হের চউখ দিয়া আফসোস করতাছে। উষ্টা-খাওয়া আঙ্গুলটার লেইগা য্যান আফসোসে কাঁপন দিয়া ওঠতাছে!
মিয়াভাইয়ের মোখ বন্ধ, কিন্তুক জুলিয়ে পষ্ট হোনে যে, মিয়াভাইয়ে কইতাছে, ইইস! কেমুন চোটটা পাইছে দ্যাখছো! আহ!
এই কথা কইয়া মিয়াভাইয়ে জুলির দিগে চায়। আর দেখো—সেই চউখে জুলেখার দিগে খালি কষ্টমাখা চাউনিই দেয় না। তারা মিন্নতি কইরা কইতে থাকে যে, জুলি গো! অই চোটের জায়গাটা এট্টু ধইরা দেহি, সোনা?
না না! আপনে কী কন মিয়াভাই! পাওয়ে নি মাইনষে হাত দেয়! আপনে মুরুব্বি না! বড়ো হইয়া ছোটোর পাওয়ে হাত দিবেন! আমার গুনা হইবো তো!
আর আমার যে শরম করতাছে, আপনে বোজেন নয়া ক্যান! না না! অই পাওয়ে এমুন কিছু জখম অয় নাইক্কা! তেমুন কিছু চোট না এইটা!
জুলেখায় শরমে-লাজে তরাতরি তার দুই পাও থুবাইয়া লইতে যায়! তোবা তোবা! জুলি নি দিবো মিয়াভাইরে অর পাওয়ে হাত দিতে! তোবা তোবা! কী শরমের কথা!
জুলির অন্তরের লাজ-ডর য্যান মিয়াভাইয়ের কাছে এট্টুও গুপ্তি থাকে না। সেয় করে কি তরাতরি তার হাত সরাইয়া নেয়। নিয়া কতক্ষণ থির বইয়া থাকে। য্যান কী করবো, কী কইবো—তার কোনো দিশা-বিশা পাইতাছে না হেয়।
তার বাদে অল্প পরেই সেয় করে কী, আবার এট্টু ওঠে। উইট্টা, নামার দিগের শেষ সিঁড়ি কয়টা বাইয়া সেয় গিয়া পানিতে তার হাতের মুষ্টিটা চুবায়। ঠাকুর বাড়ির পুষ্কুনীর পানি! সেইটা দুনিয়ার শীতলের শীতল, দুনিয়াছাড়া কালা কুইচকুইচ্চা!
সেই কালা পানিতে মিয়াভাইয়ে তার হাতখানরে ডুবায়। হায়রে দেখো! পানির মিদে হাতের কেমুন শোভাখান দেখা যাইতাছে! য্যান কালা মেঘের ভিতরে এট্টুখানি ছলবলাইয়া নাচতাছে বিজলি! সোনার বরণ বিজলি!
সেই বিজলি দেইখ্যা জুলেখার পরানের ভিতরে আউজকা এমুন টনটন ব্যাদনা করে ক্যান!
মিয়াভাইয়ের শইল্লের বন্ন এমুন ঘিয়া হইলদা কবে হইলো! সেয়ও না জুলেখার মতোনই কালাকোলা! সেয়ও না গেরামের আর সগলতের লাহানই আষাঢ় মাইস্যা দিনের নিমপাতার বরনের! হেরে অহন এমুন ঝলমলা দেহায় ক্যান!
মিয়াভাইরে এমুন অচিন দেহায় ক্যান আউজকা!
মিয়াভাইয়ে যেমুন আঁতকা খেয়ালে গিয়া পানিতে তার ডাইন হাতখানরে ডুবায়, তেমুন আঁতকা কইরাই আবার পানির তেনে তার হাত তুইল্লা লয়। লইয়া সেয় ফিরা হাঁটা দেয় জুলেখার দিগে। তয় অহন হাত আর খোলা নাইক্কা। সেইটা মুষ্টি-বান্ধা।
কী আছে হের মুষ্টিতে!
ফিরা আইয়া মিয়া ভাইয়ে জুলেখার পাও বরাবরি সিঁড়িতে বসা দেয়। বইয়া যেই সেয় মুষ্টি খোলে, জুলেখায় দেহে মুষ্টির ভিতরে এই এত্তাটি দুব্বা-বাটা! কিমুন মিহিন কইরা যে বাটা হইছে দুব্বাটি!
আঁতকার মিদে এমুন দুব্বা-বাটা আইলো কইত্তেনে! মিয়াভাই!
এই কথা আর জুলেখায় মোনে মোনে কয় না। সেয় একদম পষ্ট কইরা জিগায় কথাখান; কিন্তু মিয়াভাইয়ে হেই কথার কোনো একটা জব করে নয়া। য্যান সেয় হোনেই না কতাটা।
উল্টা সেয় জুলিরে কী কয় দেখো!
কয়, ‘আলা আঙ্গুলটায় দুব্বাটুক লাগাইতে দেন! পাওটায় কষ্ট পাইতাছে তো! এই হাতখানেরে এই সুকর্মটা করোনের নসিবটা পাইতে দেন, জুলেখা!’
এমুন কইরা কথা কইলে মাইনষে সাড়া না দিয়া থাকতে পারে! পারে কেউ অই? পারে না।
জুলেখায় তখন আর কী করে! করে কী; উয়ে তখন লাজ-শরমের মাথা খাইয়া তার ডাইন পাওখান অল্প এট্টু আগ্গাইয়া দেয় মিয়াভাইয়ের দিগে। মিয়াভাইয়ের আঙ্গুলেরা জুলির থ্যাতলানি-খাওয়া আঙ্গুলে অতি সাবধানে, অতি তরিজুতের সঙ্গে দুব্বা-বাটা লেইপ্পা দিতে থাকে। দেইখ্যা মোনে অইতে থাকে য্যান—সেয় কোনো ডাঙ্গর মাইনষের পাওয়েরে যতন দিতাছে না! যতন দিতাছে একটা সাত দিনের ছাওরে! মা মা!
নিজের থ্যাতলা-খাওয়া আঙ্গুলের জখমি-চোটেরে এমুন দর্দ জুলি নিজে নি কোনদিন করছে জিন্দিগীতে! করে নাইক্কা তো!
মিয়াভাইয়ে তাইলে এমুন কইরা কইরা ক্যান মায়া-বাস্না বাড়াইতাছে জুলির দিলে! ক্যান এমুন করতাছে হেয় আউজকা! হেয় জানে না, আউজকা জুলেখার বাবায় গেছে বিয়ার সম্বন্ধ পাক্কা করতে?
জুলেখার না বিয়া হইয়া যাইতাছে হেই কোন দেশি কার লগে জানি! তাইলে হেই জুলেখারে অখন ক্যান সেয় এই মায়াটি দেহায়! বেহুদা কামে ক্যান দেহায়!
জুলেখার চক্ষে পানি টলটলাইয়া ওঠে! সেই পানি জমিনে পড়তে দেখা তো দূর, চক্ষের ভিতরে তিরতিরাইতে দেইখ্যাই মিয়াভাইয়ে কেমুন বেচইন হইয়া যায়। সেয় তো তহনও জুলির আঙ্গুলে দুব্বা-বাটা লাগানির কাম শেষ করে নাই।
জুলির চক্ষের পানির ঝাপোট তারে কেমুন ধু ধু উদাস, তালছাড়া যে বানায়! সেয় করে কী—নিজের ডাইন হাতখান দিয়া পাগলের মতোন জাবড়ানি দিয়া ধরে জুলির ডাইন পাওয়ের পাতাখানরে।
পরথমে এক হাত দিয়া জাবড়ানি দেয় সেয়। তার বাদে তার আরেকখান উতালা হাতেও আইয়া জাবড়ানি দিয়া ধরে জুলেখার পাওয়ের পাতাখানরে।
আহ! সেয় নাইলে মায়া কইরা ধরছে জুলির জখমি পাওটারে! সেয় মায়াদার মানুষ—মায়া করতাছে!
হেইর মিদে কিছুর তেনে কিছু না—জুলির এমুন ফোঁপাইয়া কান্দন আহে ক্যান! কোন কারোনে এমুন কইলজা ছিঁড়া কান্দন আহে! কারে না পাইলে জানি দিন-দুনিয়া, দেহ-পরান আন্ধার হইয়া যাইবো—এমুন মোনে আইতাছে ক্যান জুলির অহন! এমুন হায় হায় লাগতাছে ক্যান—তার পরানের ভিতরে!
একটা টু-আওয়াজ না করতেও যেইনে জুলির অন্তরের কতো কতো কথা ধইরা ফালাইতে পারতাছে আউজকা মিয়াভাইয়ে; সেয় কী অখন বোজতাছে না-জুলির পরান পুইড়া যাইতাছে হের লেইগা! এই যে সেয় অখন সামোনে বহা! সেয় এইটা বোজতাছে না? বোজে না হেয়!
না না! সেয় জুলির অন্তরের জ্বালা বোজতাছে না! সেয় কঠিন রকম দর্দ দিয়া, বহুত মায়া নিয়া তার দুই হাতে ধইরা আছে জুলির ডাইন-পাওয়ের পাতাখান, কিন্তু অইত্তো দেহা যায় সেয় চাইয়া আছে বকুলগাছের ঠাইল্লার দিগে।
অই যে পুষ্কুনীর উপরে ঝুইক্কা পড়ছে বকুলগাছের ঠাইল্লাটা; অই যে অইটার পাতা-ঝাড়ের ভিতরে বোবা অইয়া বইয়া রইছে কুকিলাটায়- মিয়াভাইয়ে অর দিগে চাইয়া রইছে। সেয় বোবা মোখে না চাইয়া রইছে কুকিলার দিগে, কিন্তু এইটা কী বিষয়! জুলেখায় দেহি পষ্ট হোনতাছে যে, হেয় কতো কীইই না কইয়া যাইতাছে কুকিলারে!
(চলবে)