সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/02/22/photo-1424587670.jpg)
‘সেই কন্যা নয়নের মণি,আন্ধার ঘরের পিদিম’
কন্যার নাম জুলেখা বিবি। ১৪ বচ্ছর বয়স তার। বড়ো আহ্লাদের কি না সেই মেয়ে! বাপে-মায়ে দুনিয়া খুঁজে, ময়-মুরুব্বিদের কাছ থেকে ভালোমন্দ জেনে; তবে রেখেছে এই নাম! জুলেখা বিবি। গ্রামে তার বয়সী আর কোনো মেয়ের এমন নাম নাই। তার বয়সী আর কোনো মেয়েও বাপ-মায়ের এমন কইলজার কইলজা,পরানের পরান হয়ে তুলু তুলু অবস্থায় নাই।
বাপে-মায়ে তারে কি না মনে করে কোলের না-বুঝ ছাও! তো, তারা নিজ কন্যারে যতো কোলের-ছাওই বলুক; গ্রামের দশজনে কয়, ভিন্ন কথা। চৌদ্দ বচ্ছর বয়সের যে, সেয় আস্তা একখান সাব্যস্ত মাতারি। যে তারে না-বুঝ ছাও বলে, সেয় আক্কল-ছাড়া, আন্ধা। দশজনে দেখতাছে তো, গ্রামে এই কন্যারে নিয়া বাপে-মায়ে কী তামশাটা করতাছে!
তবে কন্যা নিয়া অই মা-বাবার কীর্তিকাণ্ড দেখে সকলে তাগো নিন্দা করে ঠিক, কিন্তু সেই ডাঙ্গর মেয়েরে দশজনে ভালা ছাড়া বুরা বলতে পারে না। বড়ো বুঝ-বুদ্ধি-অলা সেই কন্যা! বহুত লক্ষ্মীমন্ত, বড়ো ঢকের, বড়ো নরম স্বভাবের! অমন বুঝদার যে কন্যা, সে কি না একলা যায় ছাড়াবাড়ির পুষ্কুনিতে গোসল করতে! ঠা ঠা দোপোরের কালে একা সে যায়!
দেওভোগ গ্রামের প্রায় সববাড়িই বড়ো ভিটির। সেইসব ভিটির উত্তর-পুব-পশ্চিম-দক্ষিণ –সকল দিকেই ঘর, মধ্যে ছড়ানো উঠান। একটা বাড়ি শুধু নিরালা, ছিমছাম, ছায়ছোট্ট। বাড়ির উত্তর সীমানায় দুইখান মাত্র ঘর সেইখানে; একটা দোচালা বড়োঘর,অন্যটা একচালা। সেটা রান্ধন ঘর।
দক্ষিণমুখী অই ঘর দুইখানের সামনের সবটা উঠান। উঠান-জোড়া এলেবেলে আমগাছ। খালি আমগাছ। উঠানের দক্ষিণে, বাড়ির শেষ সীমানায় আছে এক নিমগাছ। ছিমছাম জোয়ান নিমগাছ। এই সবের সঙ্গে সেই বাড়িতে বসত করে তিনজন মানুষ। বাপে-মায়ে আর জুলেখায়। বাড়িতে লোক বলতে অই তিনজন।
দিনজুড়ে গাছ থেকে পাতার নিয়মে পাতা ঝরে পড়ে উঠানে। কিন্তু মায়ে পারলে অষ্টপ্রহরই ঝাঁটাখান হাতে নিয়েই থাকে। রাত যায় কোনোমতে, কিন্তু দিনভরে উঠানে একটা পাতা পড়ে সারে না; উঠানে ঝাট পড়ে। আর,জুলেখায় হাঁটতে শেখার পর থেকে, সেই উঠানরে লেপতে তো মায়ে আলসামি করেই না। এই এট্টুক মাত্র উঠান, এই জায়গাটুকুই তার মেয়ের লড়াচড়ার জায়গা। তারে সাফ-সাফা না রাখলে চলে! লেপা-পোছা, তকতকা উঠানে, এখন, জুলেখায় সারাদিন এক্কা-দোক্কা খেলে। একা একা খেলে। পুরাটা দিন একা একা।
বছর দুয়েক আগেও সইসাথীরা যখন তখন ঝাঁক-বেঁধে এসে হাজির হতো বাড়িতে। তখন খেলার সঙ্গীর অভাবটা পায় নাই মেয়ে। এখন বলতে গেলে গেরামে, জুলেখার সই-সঙ্গী বলতে একজনও নাই। এগারো বছর না পুরতেই সকল সইয়ের বাপে মায়ে তাদের মেয়েগো সোয়ামীর-ঘরে পাঠাইছে। লোকে জানে, বিয়া কাম ফরজ কাম। তা করতে গাফিলতি করোন নাই। গুনা হয়। কোনো বাপ-মায়ের অমন গুনা করার সাধ হয় নাই! খালি জুলেখার বাপ-মায়ে ছাড়া। ১৪ বচ্ছর বয়স হইয়া গেলো মেয়ের,তারে এখনও বিয়া দেয় নাই!
প্রায় পুরাদিন একা একা এক্কা-দোক্কা খেলা ছাড়া জুলেখার আর করার কিছুই নাই। ঘর সংসারের কোনো কাজে তার হাত লাগানো নিষেধ। কি জানি কখন হাত না পোড়ায় এই না-বুঝ মেয়ে! হাত না কোন সময় কাটে!
খালি ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে একপ্রহর পর্যন্ত কাল তারে সিফারা পড়তে হয় মায়ের কাছে। তারপর তারে ছুট্টি দিয়ে মায়ে যায় ঘর-সংসারের কাজে। বাপে তো কোন বিয়ানে কাজে যায় গা! ফেরে সন্ধ্যারাতে। সারাদিন জুলেখা একা একা, মায়ের চোক্ষের সামনে। একা একা এক্কা-দোক্কা নিয়ে নড়েচড়ে। মায়ে পরান ভরে দেখে তারে। দেখতে দেখতে সুখের নিঃশ্বাস পড়ে মায়ের, যখন তখন।
পাড়ার সকল বাড়িতে বড়ো যাওয়ার বাসনাটা হয় জুলেখার, কিন্তু কোনোখানে একটা পাও পর্যন্ত দিতে পারে না সে। মায়ে তারে একদণ্ড চোখের আড়ালে যেতে দিলে তো! মায়ে তারে কোনো বাড়িতেই যেতে দেয় না। কয়, ‘কাম নাই মাইনষের কুদিষ্টির সামনে যাওনের! নজর লাগব!’
জুলেখায় সারাদিন বোবামুখে একা একা। মায়ে আছে বাড়িতে, তবে সর্বক্ষণ ঘর-গৃহস্থালির কাজকামে আছে। জুলেখার জন্য নানান পদের খাওন করতে করতেই মায়ের প্রতিটা দিন শেষ হয়। জুলেখারে কাছে নিয়া এই-সেই হাবিজাবি কথা কওয়ার ফুরসতখান আর হয় না তার। সারাদিন ক্ষণে ক্ষণে জুলেখারে হাঁক দেয় মায়ে, ‘কই গেলি! জুলি!’ জুলেখায় সঙগে সঙ্গে জানান দেয়, ‘এই যে গো মা, আমি এইনে!’ সারাদিন ধরে মায়ের সঙ্গে এই কথাখানই ঘুরেফিরে হয় তার,বহু বহু বার।
বাবা ঘরে থাকলে অন্যবিষয়। তখন বাবা যত মেয়ের সাধ-ইচ্ছার খোঁজটা নিতে থাকে, মেয়ের মায়ে ততো বাপকে সাবধানি দিতে থাকে। ‘এত আহ্লাদ দেওন কিন্তুক ভালা না, জুলির বাপ!’ জুলেখার ঝুলনি ঝুলতে সাধ হয়। বাপে উঠানের মাঝ বরাবর থাকা, আধ-মাঝারি আশ্বিনী আম গাছের পোক্ত এক ডালে মেয়ের জন্য ঝুলনি বাঁধে। ঝুলনিতে বাঁধা পিঁড়িতে তো বসল জুলেখায়; এখন তারে পেছন থেকে ঠেলা দেয় কে! কে আবার! বাবায়।
মেয়ে শক্ত হাতে ঝুলনির দুপাশের দড়ি ধরে রাখে, বাপে পেছন থেকে দোল দেয়। আস্তে দোল দেয়, আস্তে দোল দেয়। কিন্তু মেয়ে জোর বায়না দিতে থাকে,‘বাজান, আট্টু জোরতে দেন। আট্টু জোরতে!’ বাবা দোল দেয়, ঝুলনি উড়াল দিয়ে উঠে যায় কোনো উঁচুতে। দূর উঁচুতে।
ঝুলনি আন্ধাধোন্ধা উড়াল দেয়, আর মেয়ে উরাধুরা হাসে। মেয়ের ঝিলমিলানি হাসিতে বাতাসসুদ্ধ ঝলমল করতে থাকে। সেই হাসি দেখে বাপের অন্তর মায়ায় কাঁপতে থাকে, আল্লা! আমার পরানের ধনরে বাঁচাইয়া রাইক্ষো!’
মেয়ে হাসে, আর আবদার করে; ‘বাজান,আট্টু দেন! আট্টু জোরতে। বাজান!’
বাবা আরো জোর ধাক্কা দেওয়ার আগেই মা রান্নাঘর থেকে হরদিশা পায়ে বার হয়ে আসে। ‘খবরদার কিন্তুক! আর না।’ মায়ে তরাসভরা গলায় চিল্লানি দিতে থাকে, ‘আপনেও আক্কলছাড়া হইলেননি! জোরতে যে এমুন ঝুল দিতাছেন, মুসিবত আইতে কতখোন! মাইয়া কইলাম পইড়া মরবো!’
কথাখান শোনা মাত্র বাপের পরান ধক করে ওঠে। খোদারে! কি থেইক্কা হেষে কি না হইয়া যায়! বাবা ঝুলনির দুইপাশের দড়ি শক্ত হাতে চেপে ধরে। ঝুলনি থেমে যায়। ‘কাম নাই মাগো, বিপদ ডাইক্কা আনোনের।’ বেজার মুখের মেয়েরে বাবায় বুঝ দেয়, ‘তুমি মা এক্কা-দোক্কা খেলো গা! কাউলকা তোমারে কদমা কিন্না দিমু নে!’
এই জুলেখা বাবা মায়ের তিয়াসের পানি, নিঃশ্বাসের বাতাস, চক্ষের তারা। আল্লার দরবারে আট বচ্ছর কান্নাকাটি করার পরে এই মেয়ে কোলে পায় তারা। কান্নাকাটির সঙ্গে সঙ্গে কত রোজা কত নামাজ কত মানত কত তাবিজ কত মাজারে মাজারে ঘোরা কত পানি-পড়া খাওয়ার নিয়ম যে তাদের পালন করতে হয়েছে, তার হিসাব নাই। যে যা বলেছে, তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মুখ বুজে, চোখ বন্ধ করে- তাই-ই মান্যি করে গেছে। শেষে এই মেয়ে। কোলের নিধি আল্লায় যা দিছে তা নিয়াই শুক্কুর বাপে-মায়ে! তারে মা বাপে মাথায় রাখে না উকুনের ডরে! মাটিতে রাখে না পিঁপড়ার ডরে।
দেখতে দেখতে মেয়ে ডাঙর হয়ে এখন চৌদ্দ বচ্ছরের। নানান জায়গা থেকে তার বিয়ার জন্য ভালো ভালো সম্বন্ধ আসছে। ভালো ভালো সব ঘর। যে কোন একটা সম্বন্ধরে শুধু মুখের সম্মতিটুক দিলেই সাদরে তারা মেয়ে নিয়ে যাবে! বাপ-মায়েরে দেওয়া-থোওয়া নিয়ে কোনো চিন্তাও করতে দিবে না।
কিন্তু সেই কথা মনে করেই মা বাপের পরান খালি ছাত ছাত, হায় হায় করে। এই নয়নের মনি, আন্ধার ঘরের বাত্তিটুক বিদায় দিয়া মা বাপে কি নিয়া বাঁচবে! কোন আশায় দিন পার করবে, সন্ধ্যাকালে কুপিখান ধরাবে! হাতরথ আর চলতে চাবে তাদের, তারপর? চাবে না।
এই সেই দশ রকমের কথা মনে আসে মা-বাপের। ভিতরটা আউলা-বাউলা হয়ে যায়, পরানে শান্তি থাকে না। এই গুহ্য জ্বালা অন্তরে আছে বলে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারখান নিয়া নানা মতে গড়িমসি করতে থাকে তারা। কোনো সম্বন্ধরেই পছন্দ করতে পারে না। কোনো পোলারেই য্যান মনে ধরে না।
তাদের বড়ো ইচ্ছা একখান ঘর-জামাই পায়। একখান ভালা ঘরের ভালা পোলা আইসা থাকুক তাগো কোলের কাছে। পোলা বলতেও থাকব সে, জামাই বলতেও সেইই। কিন্তু যত যত সম্বন্ধ আসে জুলেখার জন্য, তাদের কোনোজনও ঘর-জামাই হওয়া তো দূর, সেই বিষয়ে একটা আওয়াজ পর্যন্ত কানে নিতে চায় না।
বাপ-মায়ের কীর্তি দেখে পাড়ার লোকে ছি. ছি. করতে থাকে। এমন বুদ্ধিনাশা সর্বনাশা মা-বাপ জগতে কেউ কোনোদিন দেখছে! দেখে নাই। মাইয়াটার একটা গতি করোনের চিন্তাটানি আছে তাগো! মাইয়া মাইনষের বয়স! যাইতে কতখোন! তহন, লোকের পাওয়ে ধরলেনি তাগো ঘরে নিবো-কুছবি মোখের বাত্তি মাইয়া! থাকব এই মাইয়া শেষে-ঘরের খাম্বা হইয়া! বোজবো তহন বাপে-মায়ে ঠ্যাটামির করোনের মজাখান!
জুলেখার বাপে মায়ে লোকের আকথা কুকথা শোনে, আর মেয়েরে আগলে আগলে রাখে। না না না! কোনো মতে এই সব মন্দ কথা মেয়ের কানে যেতে দেওয়া যাবে না! এমন সব অন্তর-কাটা কথাবার্তা কানে গেলে সোনার প্রতিমা জুলেখার অন্তর আর আস্ত থাকবে না। মেয়ে লাজে-কষ্টে শেষ হয়ে যাবে। পরানে বাঁচবে না। এই চিন্তা মাথায় নিয়ে একদিকে মায়ে বাপে মেয়েরে আগলায়, আরেকদিকে বেদিশা হয়ে ঘর-জামাইয়ের তল্লাশ করতে থাকে।
তিরিশ বঙ্গাব্দের সেই চৈত্র মাসে মেয়েরে নিয়া এমন বেতালা অবস্থার মধ্যে তখন জুলেখার বাবা মায়ে। সেই দিন জুলেখার বাবা -তার কাজে কামাই দিয়ে- গেছে কাইক্যার টেক। ভালো একঘরের এক পোলার সন্ধান পাওয়া গেছে। বংশ ভালো, কিন্তু পোলা এতিম, অনাথ। থাকার মধ্যে আছে তার কেবল কোনোরকম বসতভিটাটা। কামাই-রুজি তেমন কিছু না, তবে মাথার উপরে মুরুব্বি কেউ থাকলে কামাই-রুজি হতে কতোক্ষণ! সেই পোলারে যদি মনে ধরে; আর পোলা যদি ঘর-জামাই সম্বন্ধে যেতে রাজি থাকে, তবে এইখানেই কাজখান করার ইচ্ছা বাবার।
এদিকে, সেইদিন সকাল থেকেই মেয়ে বায়না ধরেছে যে, আজকে দুপুরে সে চাপিলা মাছ আর তেঁতুল দিয়া রান্ধা চুকা-ঝোলের সালুন খাবে। কিন্তু সেই সালুনে রসুন আর শুকনা মরিচের কড়া বাগার থাকা লাগবে। মায়ে য্যান সেইটা না ভোলে। মায়ের যেই মন-ভোলা দশা!
ভোর থেকে বাপের আজকে দুনিয়ার হুড়াতাড়া। কাইক্যার টেক তো আর বাড়ির কাছে না। পথে দুই দুইটা গাঙ পার হওয়ার আছে, দুনিয়ার রাস্তা হাঁটার আছে। বিয়ান বিয়ান মেলা দিলেও গিয়া পৌঁছতে পৌঁছতে তার দুপুর হয়ে যাবে। আলাপ সালাপ সেরে বাড়ি ফিরতেও রাত কতো হবে, কে জানে!
এমন লৌড়ালৌড়ির দিনে মেয়ের কিনা চাপিলা মাছ খাওয়ার বাসনা হয়! বাপে আর কি করে- সেই ভোর সকালেই দৌড়ায় বাজারের দিকে। বাজার তো আর কাছেপিঠে কোনোখানে না। সেও বহুত দূরের রাস্তা পাড়ি দিয়ে,তবে কোনোরকম ছিঁড়াত্যানা এক বাজার। গোশত না, আন্ডা না, মন্ডা না; মেয়ে তো খালি খাইতে চাইছে এট্টু চাপিলা মাছের চুকা। বাপে কোন পরানে তার ব্যবস্থা না করে যাত্রা করে!
বাজারে গিয়ে বাপে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যায়, কিন্তু কোনো মাউচ্ছার ডালায় যুদি চাপিলা মাছের নামনিশানা থাকে! আজকা মাইয়ার কিসমতে চাপিলা মাছ কি নাই নাকি! বাপে বেজার মনে বাড়ির পথে মেলা করার সময় দেখে, বাজারের এক কোণের এক মাউচ্ছার ডালায় পড়ে আছে গুঁড়াগাঁড়া কয়টা চাপিলা মাছ। তারে কিনতে সেইদিন দরদামের নামও নেয় না বাবায়।
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (ষষ্ঠ কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (পঞ্চম কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (চতুর্থ কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (তৃতীয় কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (দ্বিতীয় কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (প্রথম কিস্তি)