সাহিত্যিকদের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান, চাপে ভারত সরকার
ভারতে ধর্মীয় মৌলবাদদের ক্রমাগত বাড়বাড়ন্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উত্তেজনা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রতিবাদে একের পর এক পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার পথে হেঁটেছেন দেশের কবি-সাহিত্যিকরা। আর এ ঘটনায় এবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার। এ ঘটনায় ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা ওই সব সাহিত্যিক-কবি-লেখকের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করা ঠিক। কিন্তু তাই বলে বিশেষ মতাদর্শের ভিত্তিতে দলবেঁধে এভাবে প্রতিবাদ জানানো ঠিক হচ্ছে না। সাহিত্যিকদের উচিত, দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে জানানো। এমনকি লেখক-সাহিত্যিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা সে পথে হাঁটেননি। প্রতিবাদ তো সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে, সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় না। ফলে আজ যাঁরা এই পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের উচিত অতীত খতিয়ে দেখা।
মহেশ শর্মা আরো বলেন, প্রতিবাদের যে পথ তাঁরা নিয়েছেন, তা ঠিক নয়। সরকারের কাছে তাঁরা অভিযোগ জানালে আমরাও তাঁদের সমর্থন করতাম। কারণ, কাউকে খুন করার ঘটনা আমরা সমর্থন করি না। উল্লেখ্য, ভারতের উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গো-মাংস খাওয়ার অভিযোগে এক গ্রামবাসীকে হত্যা করার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের কবি-সাহিত্যিকরা একযোগে তাঁদের পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদের পন্থা নিয়েছেন। আর এ ঘটনায় বেশ চাপের মুখে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী এই মহেশ শর্মাই অবশ্য ওই ঘটনাকে নেহাত দুর্ঘটনা বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তার পর চারদিক থেকে ক্রমাগত নিন্দার ঝড় এবং লেখক-সাহিত্যিকদের ক্রমাগত পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে চাপে পড়ে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী। এদিকে, দাদরি-কাণ্ডে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান তথা সাবেক বিচারপতি সিরিয়াক জোসেফ সোমবার জানিয়েছেন, দাদরির ঘটনায় মানবাধিকার ভয়ানকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। আমাদের কাছে কিছু অভিযোগও এসেছে। কিন্তু বিষয়টি এরই মধ্যে সংখ্যালঘু কমিশনের অধীনে চলে যাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী আমরা আর এ ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না। তবে কিছু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে, দাদরির ঘটনায় সোমবার ফের একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতের একগুচ্ছ লেখক-সাহিত্যিক। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কাশ্মীরি লেখক গুলাম নবী খায়াল, উর্দু ঔপন্যাসিক রহমান আব্বাস, কন্নড় লেখক তথা অনুবাদক শ্রীনাথ ডি এন, হিন্দি লেখক মঙ্গলেশ দাবরাল, পাঞ্জাবি লেখক ওয়ারিয়ম সান্ধু, কন্নড় অনুবাদক জে এন রঙ্গনাথ রাও এবং গুজরাটের লেখক অনিল যোশি। তাঁদের বক্তব্য, সাম্প্রদায়িকতার বিষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে চাইছে। সে সঙ্গে জনগণের মধ্যে বিভাজন রেখাও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এই ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকা এবং সাহিত্য একাডেমি টুঁ শব্দটি না করায় একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
এখন পর্যন্ত ভারতের ১৬ জন লেখক-সাহিত্যিক-কবি একাডেমি পুরস্কার ছাড়ার পথে হাঁটলেন। অন্যদিকে, সোমবার এসব লেখক ও সাহিত্যিকের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশিষ্ট লেখক সালমান রুশদি। টুইটারে তিনি লেখেন, নয়নতারা সেহেগাল এবং অন্যান্য সাহিত্যিক, যাঁরা সাহিত্য একাডেমির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তাঁদের সমর্থন করি। ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এ এক ভয়ের সময় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।