বিশ্বসেরা ১০০ বই
ভার্জিলের ঈনিড
ল্যাটিন আমেরিকান মহাকাব্য ‘ঈনিড’। এটি লিখেছিলেন ভার্জিল (উচ্চারণভেদে ভিরগিল)। খ্রিস্টপূর্ব ২৯ এবং ১৯-এর মধ্যে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। এই মহাকাব্যে মূলত যোদ্ধা ঈনিয়াসের অসীম সাহসিকতার গল্প বর্ণিত হয়েছে। রোমানদের পূর্বপুরুষ বলা হয় তাঁকে।
এই মহাকাব্যে মোট ৯ হাজার ৮৯৬টি লাইন রয়েছে। ঈনিড মহাকাব্যে রয়েছে ১২টি অধ্যায়। এর মধ্যে প্রথম ছয়টি অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে ঈনিয়াসের ট্রয় থেকে ইতালি যাওয়ার দীর্ঘ ভ্রমণের কথা।
আর পরের ছয় অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে তাঁর অসীম সাহসিকতার কথা। লাতিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের বীরত্বগাথা।
কাহিনী সংক্ষেপ
মহাকাব্যটি শুরু হয় ভূমধ্যসাগরে ঈনিয়াস ও তাঁর সহযোদ্ধাদের যাত্রা দিয়ে। তাঁদের বাসস্থান ছিল ট্রয় নগরীতে। কিন্তু গ্রিকদের আক্রমণে তাঁরা বাস্তুচ্যুত হন। তাই ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তাঁরা। ঈনিয়াসের উদ্দেশ্য ছিল রোম নগরী খুঁজে বের করা এবং সেখানেই তাঁদের নতুন বসতি স্থাপন করা।
কিন্তু ভূমধ্যসাগরে প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে তাঁরা আশ্রয় নেন কার্থেজে। কার্থেজের প্রতিষ্ঠাতা ও রানি ডিডো স্বাগত জানান ঈনিয়াস ও তাঁর সঙ্গীদের। ডিডোকে নিজেদের করুণ কাহিনী বর্ণনা করেন ঈনিয়াস। জানান, নিজেদের পূর্বপুরুষের ভিটা ছেড়ে উন্নত জীবনের আশায় ইতালির রোমের দিকে যাচ্ছেন তাঁরা।
ঈনিয়াসের সংগ্রাম এবং অতীত ইতিহাসের কথা জেনে তাঁর প্রেমে পড়ে যান ডিডো। তিনিও তাঁর অতীত সম্পর্কে ঈনিয়াসকে জানান। ডিডো একজন ফিনিশীয় রাজকন্যা। ক্ষমতার জন্য ডিডোর ভাই খুন করেন তাঁর স্বামীকে। এরপর পালিয়ে এসে কার্থেজে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন ডিডো।
ডিডোর প্রেমে সাড়া দেয় ঈনিয়াস। কিন্তু একসময় তাঁকে ডিডোর বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসতে হয়, নতুন বসতির খোঁজে। কারণ তিনি তাঁর পূর্বপুরুষ ও সহযোদ্ধাদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাঁদের নতুন রাজ্য তৈরির জন্য। কিন্তু ঈনিয়াসের প্রস্থান মেনে নিতে পারে না ডিডো। ঈনিয়াসের ফেলে যাওয়া তলোয়ার দিয়ে আত্মহত্যা করে তিনি।
ইতালিতে যাওয়ার পথে সিসিলিতে আবারও সমুদ্রে বাধার সম্মুখীন হন ঈনিয়াস ও তাঁর সহযোদ্ধারা। ইতালির লাতিয়াম উপকূল ধরে এগোতে থাকেন তাঁরা।
ইতালিতে পৌঁছানোর পর রাজা লাতিনাস তাঁদের সাদরে গ্রহণ করেন। কারণ ভবিষ্যদ্বাণী মতে, রাজার মনে ধারণা হয় ঈনিয়াসই সেই বিদেশি যাঁর সঙ্গে রাজকন্যা লাভিনিয়ার বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু লাতিনাসের স্ত্রী রানি আমাতা তাঁর মেয়ে লাভিনিয়ার বিয়ে দিতে চান ট্রুনাসের সঙ্গে। আর সে কারণেই রানি আমাতা ও ট্রুনাস মিলে ঈনিয়াসের সহযোদ্ধাদের তাড়ানোর ফন্দি আটতে শুরু করেন।
ঈনিয়াসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ট্রুনাস। এতে ঈনিয়াসের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা মারা যান। নদী দেবতা তিবেরিনাসের পরামর্শে পার্শ্ববর্তী আদিবাসীদের কাছে সাহায্য চাইতে যান ঈনিয়াস। এরই মধ্যে আবারও হামলা চালান ট্রুনাস।
এই প্রাণহানি থামাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দুই দলের নেতা ঈনিয়াস ও ট্রুনাস মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হবেন। যিনি জিতবেন, তিনি ইতালিতে থাকবেন, বাকিরা চলে যাবেন।
লেখক পরিচিতি
পুরো নাম পাবলিয়াস ভারজিলিয়াস মারো (Publius Vergilius Maro)। তবে তিনি পরিচিত ভার্জিল বা ভেরগিল নামে। জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৭০-এর ১৫ অক্টোবর। অগাস্টান যুগের প্রাচীন রোমান কবি তিনি। লাতিন সাহিত্যে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ইকলোগুস’, ‘জিওরজিকস’ ও ‘ঈনিড’।
রোমের অন্যতম সেরা কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভিরগিলকে। তাঁর রচিত মহাকাব্য ‘ঈনিড’কে প্রাচীন রোমের জাতীয় মহাকাব্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ভার্জিলের কাজ দ্বারা পশ্চিমা সাহিত্য নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’র কথা বলা যায়।
খ্রিস্টপূর্ব ১৯-এর ২১ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।