ধানের পাঁচটি নতুন জাত আনল ব্রি
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা পাঁচটি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। আজ বুধবার জাতীয় কারিগরী কমিটিতে ধানের ওই নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮২, ব্রি ধান ৮৩, ব্রি ধান ৮৪, ব্রি ধান ৮৫ ও ব্রি ধান ৮৬ নামের জাতগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
ব্রি’র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উদ্ভাবিত জাতগুলো অল্প দিনে উচ্চফলনশীল হওয়ায় দেশের মোট ধান উৎপাদনে এগুলো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
ব্রি’র মহাপরিচালক ড.মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘উদ্ভাবিত নতুন পাঁচটি জাতের মধ্যে তিনটি আউশ মৌসুমের ও দুইটি বোরো মৌসুমের। আউশ মৌসুমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য আছে সরকারের। সেজন্যই আমরা এবার আউশের ওপর জোর দিয়েছি। নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো বুধবার কারিগরি কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।’
শাহজাহান কবীর আরো বলেন, ‘বোরোতে এখন পর্যন্ত যত জাত আছে সদ্য উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮৪ তে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে জিংক রয়েছে। ব্রি ধান৭৪ জাতের ধানে ২৪ শতাংশ জিংক থাকলেও নতুন জাতে এর পরিমাণ ২৭ দশমিক ৬। নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান৮৬ জাতটিতে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।’
ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. তমাল লতা আদিত্য এ ব্যাপারে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে ব্রি’র বিজ্ঞানীরা ধানের নতুন ৫ জাতের উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমবারের মতো একটি জাতে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।’
ব্রির বিজ্ঞানীরা জানান, সদ্য উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮২ রোপা আউশ মৌসুমের স্বল্পকালীন একটি জাত। এর জীবন কাল ১০০ থেকে ১০৫ দিন। জাতীয় কারিগরি কমিটিতে অনুমোদন পাওয়া এ জাতটির গড় ফলন হেক্টরে সাড়ে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত। উদ্ভাবিত নতুন জাতটির চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ। এর আকৃতি মাঝারি মোটা এবং এর রং সাদা। এর চাল থেকে ভাত হবে ঝরঝরে। প্রতিটি দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এর ১ হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ৮৪ গ্রাম।
বিজ্ঞানীরা আরো জানান, ব্রি ধান ৮২ এর জীবনকাল হবে রোপা আউশ মৌসুমের প্রচলিত জাত ব্রি ধান ৪৮ এর চেয়েও ৪ থেকে ৫ দিন কম। উদ্ভাবিত জাতটি স্বল্পকালীন হওয়ায় রোপা আউশ মৌসুমে ধান আবাদের পর আমন আবাদেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে বাড়বে ধানের মোট উৎপাদনও।
ব্রি ধান ৮৩ বোনা আউশ মৌসুমের একটি জাত। এর গড় ফলন হেক্টরে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত, যা প্রচলিত ব্রি ধান ৪৩ এর চেয়েও ১ টন বেশি। এ জাতীয় ধানের গাছের উচ্চতা ১০৫ সে. মি.। উদ্ভাবিত নতুন এ জাতের জীবনকাল ১০০ থেকে ১০৫ দিন। এর চাল মাঝারি মোটা ও সাদা এবং এ ধরনের চাল থেকে হওয়া ভাত হবে ঝরঝরে। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬ শতাংশ এবং দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৭ শতাংশ।
ব্রি সূত্রে জানা গেছে, ব্রি ধান ৮৪ বোরো মৌসুমের একটি স্বল্পমেয়াদি জাত। একই সঙ্গে এটি উচ্চফলনশীল জিংক সমৃদ্ধও। এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন এবং হেক্টরে গড় ফলন ৬ থেকে সাড়ে ৬ টন। গাছের উচ্চতা ৯৬ সে. মি.। চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন এই জাতের ধান থেকে হওয়া চালের আকার আকৃতি লম্বা চিকন এবং চালের রং লালচে বাদামি। এ চালের ভাত ঝরঝরে হয়। দানায় জিংকের পরিমাণ ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ব্রি ধান৮৪ এর জীবনকাল বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান২৮ এর মতোই। এর জীবনকাল স্বল্প হওয়ায় বোরো মৌসুমের এ ধান আবাদের পর পাট চাষেরও সুযোগ তৈরি হবে।
ব্রি ধান ৮৫ রোপা আউশ মৌসুমের নতুন একটি জাত। এ জাতটির গড় ফলন সাড়ে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত। গাছের উচ্চতা ১১০ সে. মি.। নতুন এই জাতের জীবন কাল বন্যামুক্ত পরিবেশে ১০৬ থেকে ১১০ দিন। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। চালের আকার আকৃতি লম্বা ও মাঝারি চিকন এবং রং সাদা। ভাত ঝরঝরে। দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ১ শতাংশ। আর ১হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২২ দশমিক ৩ গ্রাম।
জানা যায়, ব্রি’র জৈব প্রযুক্তি বিভাগ (এন্থার কালচার) ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমবারের উদ্ভাবন করেছে ‘ব্রি ধান ৮৬’। সদ্য উদ্ভাবিত এ জাতটির গড় ফলন ৬ টন থেকে সাড়ে ৬ টন পর্যন্ত। তবে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এর ফলন ৮ টন পর্যন্ত হতে পারে। উদ্ভাবিত ব্রি ধান৮৬ এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪২ দিন। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ শতাংশ। চালের আকার আকৃতি লম্বা ও চিকন এবং রং সাদা। ভাত হবে ঝরঝরে ও খেতে সুস্বাদু। দানায় প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। স্বাভাবিক অবস্থায় গাছ প্রতি গুছির সংখ্যা ৯ থেকে ১০ টি। ১ হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ২৩ গ্রাম। জাতটির ফলন ও জীবনকাল ব্রি ধান২৮ এর মতো এবং ব্রি ধান২৮ চাষযোগ্য জমিতে চাষাবাদের উপযোগী হওয়ায় ব্রি ধান২৮ এর পরিপূরক জাত হবে।