সাকা-মুজাহিদের আপিলের পূর্ণ রায় প্রকাশ
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে এ রায় প্রকাশ হয় বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আমিনুল ইসলাম।
urgentPhoto
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে রায় প্রকাশ করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আপিলের এই বেঞ্চই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিলেন।
রায়ের কপি আসামি ও তাঁদের আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
পূর্ণ প্রকাশের পর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এ আবেদন খারিজ হয়ে গেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে এর আগে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন তাঁরা।
সাকার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মুজাহিদের আইনজীবী শিশির মনির জানান, রায়ের পূর্ণ কপি হাতে পাওয়ার পর তাঁরা রিভিউ আবেদন করবেন। তাঁরা আশা করেন, আসামিরা খালাস পেয়ে যাবেন।
মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ‘হিরোশিমা ও নাগাসাকির (পরমাণু বোমা হামলা) ঘটনা যেমন ভোলা যাবে না, তেমনি ১৯৭১ সালের ঘটনাও ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। ’
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
গত ২৯ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল ১-এ প্রমাণিত নয়টি অভিযোগর মধ্যে ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বাতিল করে ওই অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়, বাকি অভিযোগগুলোতে ট্রাইব্যুনালের আদেশই বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর করে ৪০ বছর এবং ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর করে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- ১এ ২৩টি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্টে বহাল রাখা দণ্ডগুলো
২ নম্বর অভিযোগ : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা ২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা গ্রামে হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ায় অভিযান চালিয়ে ওই এলাকার শতাধিক হিন্দুকে ডাক্তার মাখন লাল শর্মার বাড়িতে জড়ো করেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সৈন্যরা সেখানে তাঁদের ব্রাশফায়ার করে হত্যা করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৩ নম্বর অভিযোগ : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা ৩ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাউজানের গহিরা শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ সময় নিজে নূতন চন্দ্র সিংহকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাকাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
৪ নম্বর অভিযোগ : প্রসিকিউশনের ৪ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জগৎমল্লপাড়ায় অভিযান চালান। এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দুই সহযোগীর ডাকে সেখানকার হিন্দু নর-নারীরা কিরণ বিকাশ চৌধুরীর বাড়ির আঙিনায় জড়ো হয়। সেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ৩২ জন নারী-পুরুষ মারা যান। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৫ নম্বর অভিযোগ : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাঁর অনুসারীদের নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালান। সেনাসদস্যরা বণিকপাড়ায় প্রবেশ করে ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে অভিযান চালিয়ে নেপাল চন্দ্র ধর, মণীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে গুলি করে। এতে প্রথম তিনজন শহীদ ও শেষের জন আহত হন। হত্যাকাণ্ড শেষে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাঁদের অনুসারী ও পাকিস্তানি সৈন্যদের সুলতানপুর গ্রাম ত্যাগ করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৬ নম্বর অভিযোগ : এ অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ক্ষীতিশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে হিন্দু নর-নারীদের একত্র করে পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৮ নম্বর অভিযোগ : এ অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রাইভেটকারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রামে শহরে আসছিলেন। পথে হাটহাজারী থানার খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি তিন রাস্তার মোড়ে পৌঁছামাত্র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা শেখ মোজাফফর আহম্মেদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে স্থানীয় পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁদের আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
১৭ নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যারাতে চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ী থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গুডসহিলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেড় ঘণ্টা তাঁদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে ওই দিন রাত ১১/১২টার দিকে নিজাম উদ্দিন ও সিরাজকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে গিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়। সেখানে তাঁরা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত বন্দী ছিলেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৮ নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও থানার মোহারা গ্রামে আবদুল মোতালেব চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা সালেহ উদ্দিনকে অপহরণ করেন। এর পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গাড়িতে নিয়ে তাঁকে গুডসহিল বাসভবনের নির্যাতন সেলে নেওয়া হয়। সেখানে বাড়ির বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে থাকা সাকা চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় সালেহ উদ্দিনকে উদ্দেশ করে ফজলুল কাদের চৌধুরী জানতে চান, তিনি সালেহ উদ্দিন কি না? এ কথা বলতে বলতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে সালেহ উদ্দিনের বাঁ গালে সজোরে একটি চড় মারেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপি নেতা।
হরতালের আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এর পর ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ
গত ১৬ জুন আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। এ ঘটনায় ২০১১ সালের ২১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন কর্মকর্তারা। এর পর ২ আগস্ট তাঁকে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ২০১২ সালের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ
অভিযোগ-১ : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার চামেলীবাগ থেকে সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনকে অপহরণ করা হয়। মুজাহিদের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণাধীন সাত-আট যুবক তাঁকে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। আজ পর্যন্ত তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ-২ : প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় অভিযোগে বলা, ১৯৭১ সালের মে মাসে একদিন আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের নেতৃত্বে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানার বিভিন্ন গ্রামের ৩০০-৩৫০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। পরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ৫০-৬০ জন হিন্দু নর-নারীকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-৩ : তৃতীয় নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের কোনো একদিন ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক করে। ফরিদপুর পুরোনো সার্কিট হাউসে আসামি আলী আহসান মুজাহিদের সামনে পাকিস্তানি সেনা অফিসার মেজর আকরাম কোরাইশীর কাছে হাজির করা হয় বাবু নাথকে। তখন মুজাহিদ ওই মেজরের সঙ্গে কথা বলার পর বাবু নাথের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর একটি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়। নির্যাতনের পর মুজাহিদের ইশারায় তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশে বিহারি ক্যাম্পের উত্তর পাশে আবদুর রশিদের বাড়িতে নিয়ে রাজাকাররা আটকে রাখে। পরের রাতে রণজিৎ নাথ বাবু তাঁর আটক ঘরের জানালার শিক বাঁকা করে ওই ঘর থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচান।
অভিযোগ-৪ : চতুর্থ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ জুলাই সকালে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে স্থানীয় রাজাকাররা মো. আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করে। এর পর তাঁকে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে রাখা হয়। আটক বন্দীদের মধ্যে আবু ইউসুফ পাখিকে দেখে মুজাহিদ পাকিস্তানি মেজরকে কিছু একটা বলার পরই তাঁর ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেখানে এক মাস তিন দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ নির্যাতনে আবু ইউসুফ পাখির বুকের ও পিঠের হাড় ভেঙে যায়।
অভিযোগ-৫ : পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাত ৮টায় পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের আরেক নেতা মতিউর রহমান নিজামীসহ ঢাকার নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে যান মুজাহিদ। সেখানে তাঁরা আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাঁদের গালাগাল করেন এবং পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে বলেন, প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগেই তাঁদের হত্যা করতে হবে। আসামি মুজাহিদ অন্যদের সহায়তায় আটকদের একজনকে ছাড়া অন্য নিরীহ-নিরস্ত্র বন্দীদের অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশ গুমের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন।
অভিযোগ-৬ : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা এ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৭ মার্চের পর ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্প করে। পরে রাজাকার, আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প করে। মুজাহিদ ছাত্রসংঘের শীর্ষ নেতা হওয়ার সুবাদে আর্মি ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ছাত্রসংঘের ও আলবদর বাহিনীর সুপিরিয়র নেতা হিসেবে আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন।
এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুজাহিদ ১০ ডিসেম্বর থেকে পরিচালিত বুদ্ধিজীবী নিধনসহ হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়নের মতো যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংঘটিত করেন।
অভিযোগ-৭ : প্রসিকিউশনের আনা সর্বশেষ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ মে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দুদের ওপর গণহত্যা চালায়।