যে দেশে ভালো অস্ত্র পাব, সেখান থেকে কিনব : সেনাপ্রধান

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে আরো আধুনিকায়ন করতে ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। এজন্য কোনো বিশেষ রাষ্ট্র নয়, যে দেশে ভালো অস্ত্র পাওয়া যাবে সেখান থেকেই অস্ত্র কেনা হবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে প্রকৌশল কোরের চারটি ইউনিটকে রেজিমেন্টাল কালারস বা পতাকা প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান।
জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমি যেখানেই যে অনুষ্ঠানেই বক্তব্য দিচ্ছি, আমি বলছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় আমরা যে ভিশন-২০৩০ প্রণয়ন করেছি এবং সেটার আলোকে সেনাবাহিনীর কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে ও সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন করেছি। এ আধুনিকায়নের জন্য আমরা সারা বিশ্ব থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সরঞ্জাম ক্রয় করে থাকি। এ ক্ষেত্রে কোনো একটি বিশেষ দেশ থেকে যে সরঞ্জাম ক্রয় করব তা নয়, আমরা যেখান থেকে ভালো পাব, যেটা আমাদের চাহিদা মেটাবে এবং আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকবে, আমরা সে দেশ থেকে ক্রয় করব। এর জন্য কোনো একটি বিশেষ দেশের চুক্তি স্বাক্ষর করা, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন করার অস্ত্র ক্রয় করা, এ ধরনের কিছু করা হচ্ছে না। তবে প্রশিক্ষণের জন্য বা অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা অনেক দেশের সঙ্গে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর এমন অনেক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।’
সেনাপ্রধান আরো বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন মজবুত হচ্ছে। আমরা চাইব, আগে আমাদের যে ধরনের সরঞ্জাম ছিল তার থেকে আধুনিক সরঞ্জাম কেনার জন্য। আমাদের বিমানবাহিনী যেমন চাচ্ছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার জন্য, তেমনি আমরা চাচ্ছি আধুনিক ট্যাংক, মিসাইল কেনার জন্য। এখন আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নতির দিকে চাচ্ছে। তাই আমরা এখন ভালো ভালো জিনিস কিনব। আমরা এখন আর কম দামি জিনিস কিনব না। আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। অর্থনীতি যত চাঙ্গা হবে আমাদের সামরিক বাহিনীর জিনিসপত্র তত উন্নত হবে।’
এর আগে সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে প্যারেড পরিদর্শন এবং প্রকৌশল কোরের চারটি ইউনিটের মধ্যে পতাকা প্রদান ও সালাম গ্রহণ করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। পরে উপস্থিত সেনা সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশীদার থাকতে চায় সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলাসহ দেশের আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভূতপূর্ব অবদান রাখছে এবং কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সদর দপ্তর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ‘বর্ডার রোড প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, জাতীয় মহাসড়ক, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ, হাতিরঝিল প্রকল্পসহ জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহে আজ সেনাবাহিনী তথা কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলছে, যা সত্যিই আমাদের গর্বের বিষয়। একই ধারায় ভবিষ্যতেও মাতৃভূমির অখণ্ডতা রক্ষা তথা জাতীয় যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রশিক্ষণের গুণগতমান উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন এটিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ২০টি এটিপি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।’
এ সময় বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে আন্তরাষ্ট্রীয় চুক্তি সম্পর্কে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মাইন অপসারণে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ হতে সেনাসদস্য মোতায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৭০০ জনবলের দুটি মাইনিং ব্যাটালিয়ন এবং বিএমসি সদর দপ্তরের সঙ্গে ১৮ জন জনবল সৌদি আরবের জাযান এবং নাজরান এলাকায় নিয়োজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে সমঝোতা স্মারক সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সমঝোতা স্মারকটি অনুমোদন হওয়ার পর চূড়ান্তভাবে কার্যক্রম শুরু হবে।’
স্যাপার্স সদস্যদের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, ‘প্রিয় কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সদস্যবৃন্দ, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অত্যাধুনিক ও বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। আর কোনো প্রশিক্ষণই ফলপ্রসূ হবে না যদি আমাদের মৌলিক প্রশিক্ষণে ঘাটতি থাকে। তাই বেসিক সোলজারিংয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণেও উৎকর্ষতা আনতে হবে। সবাইকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধক্ষেত্রের সকল ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, প্রশিক্ষণই সর্বোচ্চ কল্যাণ।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠান আজ ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং, কাদিরাবাদ সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান এবং কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের কর্নেল কমান্ড্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং সেনাবাহিনী তথা দেশমাতৃকার সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ইউনিটগুলোকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সূত্র ধরে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ১ ও ৮ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং ৫ ও ৭ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন আজকের কালার প্যারেডে অংশগ্রহণ করে এবং প্রধান অতিথির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিমেন্টাল পতাকা গ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর সামরিক ঐতিহ্য অনুযায়ী যেকোনো ইউনিটের জন্য রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তি অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।
সেনাবাহিনী প্রধান তাঁর বক্তৃতায় দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং কোরের প্রতিটি সদস্যকে অভিনন্দন জানান। তিনি উল্লেখ করেন, কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স একটি কারিগরি, সরঞ্জামাদি নির্ভর এবং বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন কোর যার সহায়তা যুদ্ধক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যৎ যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অত্যাধুনিক, বাস্তবমুখী এবং উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা সম্পন্ন প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।