তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে ভালোবাসা দিবস উদযাপন
ভালোবাসায় যেমন নেই কোনো বয়স বা সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা। তেমনি নেই কোনো লৈঙ্গিক বিভেদ। তাই এবারের ভালোবাসা দিবসটি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে নিয়েই পালন করল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিবসটি উদযাপন করে তারা।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মহুয়া তলায় আয়োজনটি শুরু হয়। হিজড়াদের অর্থায়নে পুরো অনুষ্ঠান হয়। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দেয় তারা। কেউ টাকা দিতে চাইলেও তারা নেয়নি।
শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে গেঞ্জিতে নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে যান হিজড়ারা। তাদের গেঞ্জিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা, মন্তব্য বা ভালোবাসার কথা লিখে দেয় জাবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
আয়োজনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম একটি উৎসবের আয়োজন করা যাবে কখনো ভাবিনি। যখনই প্রস্তাব পেয়েছি, সানন্দে গ্রহণ করেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুবই ভালো, তারা আপনাদের ভালোভাবে গ্রহণ করবে। আপনারা কখনো নিজেদের আলাদা ভাববেন না। আপনারা আমাদের এই সমাজেরই অংশ।’
আয়োজনের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজোয়ানা করিম স্নিগ্ধা। আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন তিনি।
রেজোয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘আমরা যাদের হিজড়া বলে দূরে ঠেলে দেই, নেতিবাচক ধারণা পোষণ করি, তারাও কিন্তু আমাদের মতোই মানুষ।সমাজের নিচু স্তর থেকে উঁচু স্তর পর্যন্ত বেশির ভাগ মানুষই তাদের ব্যাপারে ভুল ধারণা পোষণ করে। এ আয়োজনের উদ্দেশ্য সে ভুল ধারণাটা ভেঙে দেওয়া।’
অনুষ্ঠানে কথা হয় তৃতীয় লিঙ্গের শাম্মী হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরাও কিন্তু আপনাদের মতোই মানুষ। আপনাদের মতোই সভ প্রয়োজনীয়তা, অনুভূতি আমাদের আছে। কিন্তু আমরা পরিবার-পরিজন, বাবা-মা, সমাজ, রাষ্ট্র সবকিছু থেকেই বিচ্ছিন্ন। যে ভালোবাসা ছাড়া কোনো মানুষ বাঁচতে পারে না, তা থেকেও আমরা বঞ্চিত। আমাদেরও তো ভালোবাসা পেতে মন চায়। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এ আয়োজন করেছি। কারণ এখানকার শিক্ষার্থীরাই এক সময় দেশের বড় বড় জায়গায় যাবে। তখন আমাদের সম্পর্কে তাদের যেন কোনো ভুল ধারণা না থাকে।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধার সঞ্চালনায় এই আয়োজনে একাত্মতা ঘোষণা করেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজা হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা লাকি, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আতিকুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ নিজার আলম, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনন জামান। এ ছাড়া ছিলেন ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পিংকী সাহা, পারভিন জলি, বাংলা বিভাগের আহসান হাবিব প্রমুখ।
দুপুর ২টা পর্যন্ত এ মেহেদি উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়।