শাবিতে সংস্কৃতিকর্মীকে পেটালেন ছাত্রলীগ কর্মীরা

শরীরে হাত লেগে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক সংস্কৃতিকর্মীকে ছাত্রলীগের কর্মীরা কয়েক দফা পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে ক্যাম্পাসের ইউনিভার্সিটি সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় সংস্কৃতিকর্মী জুয়েল রানাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর সহপাঠীরা।
জুয়েল রানা ক্যাম্পাসের নাট্যবিষয়ক সংগঠন দিক থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য। তিনি গণিত চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের কাছে চায়ের দোকানে থিয়েটার কর্মী ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মী আলী হাসানের ধাক্কা লাগে। এতে আলী হাসান নাকে আঘাত পান, তিনি সঙ্গে সঙ্গে জাহিদকে থাপ্পড় দেন।
এ সময় জাহিদকে থাপ্পড় দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন জুয়েল। এ নিয়ে আলী হাসানের সঙ্গে জুয়েলের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসিব রহমান বিষয়টি সমাধান করে দেন।
এ সময় আলী হাসানের কাছে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন জুয়েল রানা ও জাহিদ। তারপরও ফের দুজনকে থাপ্পড় দেন আলী হাসান।
পরবর্তী সময়ে বিষয়টি প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমদকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন জুয়েল রানা। কিন্তু তার আগেই আলী হাসানের প্রায় ১০-১৫ জন সমর্থক জুয়েলকে ফের মারধর করেন। যদিও এ সময় আলী হাসান ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদের সামনেই মারধরের ঘটনা ঘটে।
হামলায় পেট, পিঠ, কোমর ও পায়ে আঘাত পান জুয়েল। বর্তমানে তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনতলায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলী হাসান বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। মারধরের সময় আমি ছিলাম না, এমনকি আমি জানতামও না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মারধর ফেরানোর চেষ্টা করেছি।’
প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেউ কাউকে মারধর করতে পারে না। ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘হাসান ছাত্রলীগের কেউ না। তাঁর ব্যক্তিগত ঘটনায় দায় শাবি ছাত্রলীগ নেবে না। জুয়েল সংস্কৃতিকর্মীর পাশাপাশি ছাত্রলীগের একজন সদস্য। আমরা এ ধরনের হামলার ঘটনার বিচার চাই।’
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। বিক্ষোভ মিছিল থেকে হামলায় অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তি ও বিচার দাবি করা হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রিফাত হায়দার জানান, ‘দোষীদের শাস্তির দাবিতে আমরা আন্দোলন চলিয়ে যাব। ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটা প্রত্যাশিত নয়। দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।’