ঢাবিতে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) থামছে না ছাত্রলীগের মারামারি। গতকাল রোববার রাতে সারা দেশ যখন কালরাত্রি পালনে ব্যস্ত তখন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই নেতাকর্মী।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে ঢাবির এই হলে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ওই রাতে নিহত হন হলের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরা। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে হলের মধ্যে মোমবাতি প্রজ্জ্বালনের পরই দুই দফায় এই সংঘর্ষ হয় বলে জানা যায়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মোট ছয়টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহতও হয়েছেন ডজনখানেক নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থী।
হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, হলের মধ্যে মোমবাতি প্রজ্জ্জ্বালনের পরে ছাত্রলীগের নেতারা ক্যান্টিনে খেতে যায়। হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদারের অনুসারীরা খেতে বসলে সভাপতি সোহানুর রহমানের অনুসারীরা উচ্চস্বরে কথা বলে। এ সময় আসিফের অনুসারী হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন, সহসভাপতি কামাল উদ্দিন রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক সোহানুর রহমানসহ আরো কয়েকজন সভাপতি সোহানের অনুসারী শিপন, সজিব, নূর হোসেনদের আস্তে কথা বলতে বলেন। তাঁরা আস্তে কথা না বলে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর রেগে যান এবং একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
এই ঘটনার পরে হলের গেমস রুমে সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদারের অনুসারীরা খেলতে যায়। এর কিছু পরে সভাপতি সোহানুর রহমানের অনুসারীরাও খেলতে যায়। তখন সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের খেলা শেষ করতে বললে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়।
এই ঘটনার আধা ঘণ্টা পর উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে আবারও রড, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা রড, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে সভাপতির অনুসারীদের ধাওয়া দেয়। এর কিছুক্ষণ পর সভাপতির সমর্থক নেতাকর্মীরা রড, লাঠি নিয়ে জড়ো হলে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে হলের দুজন আবাসিক শিক্ষক, হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে এলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনায় সভাপতির সমর্থক হিসেবে পরিচিত তৃতীয় বর্ষের মো. বায়জিদ ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থক হিসেবে পরিচিতি সহসম্পাদক মনিরুজ্জামান আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন ছাত্রলীগের নেতারা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ হল শাখার সভাপতি সোহানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার বলেন, হলের জুনিয়ররা মারামারি করেছে। আমরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। এখন সব ঠিক আছে।
সোহানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও আসিফ তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের অনুসারী। এ বিষয়ে এই দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলওয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে দুজন আবাসিক শিক্ষককে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। আমরা বিষয়টি দেখব।