জাবির ১১০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে শোকজ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ১১০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন আইনানুগ শাস্তি নেবে না, এ বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্য চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩ জন বর্তমান ও বাকি ৭৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তারা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশটি সম্প্রতি কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর লিখিত বক্তব্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৭ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১১ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি) লুৎফর রহমান আরিফ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন তিনি নিজেই। বিজ্ঞপ্তিটি গত ৫ জুন স্বাক্ষরিত বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সিন্ডিকেট সভায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৮৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে এসব শিক্ষার্থীর লিখিত বক্তব্য জানতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হলে তারমধ্যে ১১০ জন শিক্ষার্থী কোনো সাড়া দেননি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য জানতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে লুৎফর রহমান আরিফ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, হামলায় জড়িতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যেহেতু এসব শিক্ষার্থীর অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, তাই সংগঠিত অপরাধের ব্যাপারে আমরা তাদের কাছ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্য চেয়েছি। যদি কেউ বক্তব্য না দেয় তাহলে উক্ত ফাইন্ডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত একটি (সাবেক শিক্ষার্থীদের) শোকজ নোটিশে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ জুলাই রাত ১১টা থেকে দিনগত রাত ৩টা পর্যন্ত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ১৫ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার সময় ১০নং (ছাত্র) হলের (সাবেক-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সম্মুখে এবং একই দিন রাত ১২টার সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষক ও আশ্রয়প্রার্থী ভীতসন্ত্রস্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ এবং ১৭ জুলাই বেলা ৩টার সময় প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় আপনার সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অধিকতর তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিষয়ে সুস্পষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপরে উল্লিখিত আপনার কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
“এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংগঠনের দায়ে কেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনাকে প্রদত্ত সনদ বাতিল করা অথবা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়ের করা হবে না সে মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থনে আপনার লিখিত বক্তব্য আগামী ৭ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য বলা হলো।”
এছাড়া তদন্তে বর্তমান অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে তাদেরকে ভিন্ন একটি নোটিশে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ জুলাই রাত ১১টা থেকে দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ১৫ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার সময় ১০নং ছাত্র হলের (সাবেক-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল) সম্মুখে এবং একই দিন রাত ১২টার সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষক ও আশ্রয়প্রার্থী ভীত সন্ত্রস্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ এবং ১৭ জুলাই বেলা ৩টার সময় প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় আপনার সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অধিকতর তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিষয়ে সুস্পষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপরে উল্লিখিত আপনার কর্মকাণ্ড জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮ এর ৫ (ঘ) এবং অথবা ৫ (ঢ) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

“এ অবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮ এর ধারা ৩। (২) (ক) অথবা উক্ত অধ্যাদেশের অন্য যে কোন ধারায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা যথাযথ রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়ের করা হবে না সে মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থনে আপনার লিখিত বক্তব্য আগামী ৭ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।”
উভয় বিজ্ঞপ্তিতে হামলায় জড়িতদের আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো বক্তব্য না পেলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও রাষ্ট্রীয় আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।