আত্মহত্যা নিয়ে কথা বললেন ফারিয়া
জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন এখন মালয়েশিয়াতে আছেন। সেখানে মিডিয়ায় মার্কেটিং বিষয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। গত সোমবার মডেল রিসিলার আত্মহত্যার খবর শুনে মর্মাহত হন ফারিয়া।
ফেসবুক লাইভে এসে রিসিলা প্রসঙ্গে এবং নিজের বক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক অজানা কথা ভক্তদের সঙ্গে সরাসরি শেয়ার করেন ফারিয়া।
ভিডিওর শুরুতে রিসিলার প্রসঙ্গ টেনে ফারিয়া বলেন, ‘হ্যালো এভরিওয়ান, কিছু ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আজকে আমার লাইভে আসা। কিছুক্ষণ আগে একটা খবরে দেখলাম আমাদের এক সহকর্মী রিসিলা বিনতে ওয়াজের সুইসাইড করেছে। ও র্যাম্পে কাজ করত, মডেলিং করত। আই ডোন্ট নো হাউ টু এক্সপ্রেস। কী বলা উচিত তাও জানি না। কিন্তু, র্যাম্পে আমি যতগুলা মানুষ দেখেছি, আমার দেখা মতে, রিসিলা ছিল অসম্ভব বিনয়ী। অসম্ভব ভদ্র এক মেয়ে ছিল। খুবই ফ্রেন্ডলি একটা মেয়ে ছিল। এখন আমাদের বলতে হচ্ছে ‘ছিল’। আসলে আমি কারো ব্যাপারেই বলতে চাই না-‘ছিল’ বলতে হোক। কারণ হচ্ছে যে, লাইফ ইজ বিউটিফুল। কেন আমরা নিজের হাতে নিজের লাইফটা শেষ করব। এন্ড অব দ্য ডে, আমাদের সবারই মরতে হবে। আলটিমেট ডেসটিনি ইজ ডেথ। তো, কেন আমাদের নিজের হাতে নিজের লাইফ শেষ করতে হবে? কেন আমরা এত সন্দুর একটা জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছি? হতাশায় এ রকম একটা বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে?’
নিজেরও আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করেছিল বলে জানিয়ে ফারিয়া বলেন, ‘আমি আসলে আমার ব্যক্তিগত কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। একটা সময় আমারও মনে হতো, আই শুড কমিট সুইসাইড। হ্যাঁ, ইটস ট্রু। আমি বলব, এটা খুব বাজে একটা চিন্তা, এটা মনে হওয়া। কারণ হচ্ছে, লাইফ একটাই। আমাদের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। আমাদের মা ১০ মাস ১০ দিন পেটে রেখেছেন, কষ্ট করে জন্ম দিছেন। কষ্ট করে আমাদের বড় করছেন।
‘হয়তো কোনো একটা মানুষের জন্যই কেউ আত্মহত্যা করে। বা কোনো একটা মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েই হয়তো পথটা বেছে নেয়। কিন্তু কেন? আমাদের কী একবারও মনে হয় না যে, আমার মায়ের কী হবে? আমার বাবা যখন জানবে যে, তার মেয়েটা আর নাই বা তার ছেলেটা আর নাই। এই যে বাবা, এত কষ্ট করে, চাকরি করে, আমাদের জন্য টাকা উপার্জন করতেছে। সেই মানুষটার কী অনুভূতি হবে? এই যে মাটা, আমাদের জন্ম দিছেন বা পেটে রাখছেন, কত আশা নিয়ে বড় করছেন। ওই মাটার কী হবে? (গলা ধরে আসে)
আমরা না আসলে ভাবি না। মানুষ আমাদের কষ্ট দিল বা সমাজের কারো কাছ থেকে আমরা হার্ট হলাম; আমরা আসলে সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা করি যে, এই জীবনটা রাখার দরকার নাই। কিন্তু কেন? আমাদের আল্লাহ হাত-পা সব দিছেন। সুস্থ একটা মানুষ হিসেবে তৈরি করছেন। কেন আমাদের সুইসাইডের পথ বেছে নিতে হবে? যাদের হাত নাই, পাই নাই-এমন অনেক মানুষ বেঁচে আছে সমাজে। যারা ওই হাত না থাকা অবস্থায়ও পা দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জীবনের স্বপ্ন দেখে। এমন অনেক মানুষ আছে যারা চোখে দেখে না, অন্ধ। অন্ধদের জন্য যে বিশেষ স্কুল আছে ওখানে পড়াশোনা করতেছে। কিন্তু কেন? কারণ তারা বাঁচতে চায়, স্বপ্ন দেখতে চায়। কেন আমরা নিজের জীবনটাকে... আমরা তো আলটিমেটলি সবাই একদিন মরে যাব। কে কতদিন বাঁচব, আমরা কেউ-ই জানি না। কী অদ্ভুত আমাদের জীবন যে, ওই ডোন্ট নো হোয়াট নেক্সট।’
রিসিলার প্রসঙ্গ আরও টেনে ফারিয়া বলেন, ‘আজকে আমি যখন নিজউটা পড়লাম, তখন আমি ভাষা হারিয়ে ফেলছি। মেয়েটার এত সুন্দর ফুটফুটে একটা বাচ্চা আছে! আমার মনে হচ্ছে যে, ওর বাচ্চাটা যখন মা মা করে ডাকবে, ওই বাচ্চাকে কে বোঝাবে যে ওর মা আর আসবে না! আমি একটা নিউজে পড়লাম, ওখানে লেখা ছিল ‘রিসিলা ওয়াজ মাদকাসক্ত ছিলেন।’ আমি জানি না ব্যাপারটা কতটা সত্যি। কারণ আমরা যাঁরা মিডিয়াতে কাজ করি, তাদের এন্ড অব দ্য ডে’তে কিছুর সাথে জুড়ে দিতে পারলে হয়তো সবাই খুশি হয় যে খারাপ ছিল, মাদকাসক্ত ছিল। যদি সে সত্যিই মাদকাসক্ত হয়ে থাকে, তাহলে দেয়ার মাস্ট বি রিজন। নিশ্চয়ই মানসিকভাবে সে হতাশ ছিল। তা না হলে একটা মেয়ে এত সুন্দর ফুটফুটে একটা বাচ্চা, যে তাকে মা বলে ডাকে, তাকে রেখে এই দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার সাহস সে করত না। নিশ্চয়ই ওখানে কোনো রিজন ছিল। কিন্তু তাও আমি বলব, যদি সার্টেন কারো জন্য বা কারো কথায়, আচরণে কষ্ট পেয়েও যদি আত্মহত্যা করে থাকে-তাহলে সেটা কি ঠিক? আমি বলব, না। কারণ তার বাচ্চাটার কী অপরাধ ছিল? বাচ্চাটা এখন কাকে মা ডাকবে? বা বাচ্চাটার এখন কী হবে, তার ভাবা উচিত ছিল।’
নিজের সাবেক প্রেমিক সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ফারিয়া বলেন,‘আমি আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে বলব মিডিয়াতে আসার কয়েক বছর পর আমার একজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। প্রথমদিকে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। সে আমাকে পরে মানসিকভাবে খুব নির্যাতন করত। আমাকে পড়তে দিত না। আই ওয়াজ অ্যা লজ স্টুডেন্ট। আমার বাবা-মার অনেক স্বপ্ন ছিল আমি ব্যারিস্টার হব। কিন্তু ইন্টেনশনালি আমার পরীক্ষার আগে, পড়াশোনার আগে মানসিকভাবে নির্যাতন করত, পড়তে দিত না। আমার লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমি যাইনি বা আমার কারণে যাইনি। সে আমাকে সবসময় বলত, এত পড়াশোনা করে কী হবে? তুমি কি আরো দুইটা দিন বেশি বাঁচবা। আলটিমেটলি তো আমাদের সবারই মরে যেতে হবে, ব্লা ব্লা ব্লা...। সে আমার ফেসবুক হ্যাক করে রাখে। দিনের পর দিন, দুই বছর, তিন বছর আমার ফেসবুক হ্যাক ছিল।’
নিজের জীবনে কোন বিনোদন ছিল না বলে জানান ফারিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার লাইফটা আসলে একটা বক্সের মধ্যে বন্দি হয়ে গিয়েছিল। আমি ক্লাস করতাম, ক্লাস করে বাসায় আসতাম। আমার লাইফে আসলে কোনো এন্টারটেইনমেন্ট ছিল না। একটা মাত্র ফেসবুক ছিল, যার মাধ্যমে আমি বন্ধুদের সঙ্গে যোগোযোগ করতাম। ভালো লাগত ফ্রেন্ডরা লাইক দিলে, কমেন্ট করলে। সবাই জানে আমি খুব কাজ কম করতাম। পড়াশোনার চাপ ছিল, আমি যে ফ্যামিলি বিলং করি অনেক কিছুই সাপোর্ট করত না। অনেক কাজই আমি ছেড়ে দিয়েছি, সবকিছু চিন্তা করে।’
মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফারিয়া বলেন, ‘এই মিডিয়া আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। এই মিডিয়ার কাছে আমি অনেক বেশি গ্রেটফুল।’
মিডিয়ার নেতিবাচক কিছিু বিষয়েও ফারিয়া কথা বলেছেন,‘কিন্তু মিডিয়ার অনেক মানুষ আমাকে অনেকভাবে অপমান করেছে। কারণ তাদের নোংরা প্রস্তাব আমি মেনে নিতে পারিনি বা খারাপ কিছু করতে পারিনি। আমি লাক্সের উইনার হওয়া সত্ত্বেও লাক্সের অনেক বড় বড় প্রতিযোগিতায় কখনো আমন্ত্রণ পেতাম না। কারণ কিছু সারটেইন পিপলের সাথে আমার ওই রিলেটেড সম্পর্ক ছিল না। বা ওই রিলেটেড সম্পর্ক করতে রাজি হইনি। আমাকে অনেক বড় বড় কারণ, সোজা বাংলায় বলে যে খারাপ কাজ করতে পারিনি। কিন্তু দিন শেষে আমাকে শুনতে হয় যে, মিডিয়ার মেয়ে মানেই নষ্ট।’
সাবেক প্রেমিক সম্পর্কে ফারিয়া আরো বলেন, ‘যে ছেলেটার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল, সে যখন আমাকে নির্যাতন করত, পড়ালেখা সাপোর্ট করত না বা পড়তে দিত না। আমার রেজাল্ট খুব খারাপ হয়। আমি ব্যারিস্টার হতে পারি নাই। আমার বাবা-মার স্বপ্ন আমি নিজের হাতে ধ্বংস করছি। জাস্ট বিকজ অব দ্যাট রিলেশনশিপ। ভুক্তভোগী কিন্তু আমি, ভুক্তভোগী আমার বাবা-মা। এখন তারা আমাকে অ্যালাউ করেছেন-নতুনভাবে সবকিছু করার জন্য, পড়াশোনা করার জন্য। আমি পড়াশোনা করছি। কিন্তু ওই সময়টায় আমাকে যখন নির্যাতন করা হতো, আমার মনে হতো যে, আই শুড কমিট সুইসাইড। মানে, আমাকে এতটা মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো-আমার ফেসবুক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিকজ আই অ্যাম নট হ্যাপি উইথ হিম। আমি তাকে বলতাম যে, তোমাকে ছেড়ে চলে যাব। আমি ফেসবুকে সবাইকে জানাতাম যে, তোমার সাথে আমি থাকতে চাই না। বা ফেসবুকের সবার জানা উচিত যে উই আর নট ইন অ্যা রিলেশনশিপ। তখনই সে আমার ফেসবুকটা হ্যাক করে। আমিই তাকে দিয়েছিলাম আইডি, পাসওয়ার্ড সবকিছু। দুই-তিন বছর সে আমাকে বন্দি একটা জীবনের মধ্যে ফেলে দেয়। তখন এত নির্যাতন অনুভব করতাম-কোনো কিছুতে মন বসাতে পারতাম না, ফেসবুক ছিল না, একটা দম বন্ধ লাইফ ছিল আমার।’
আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চাইলেও তা করেননি ফারিয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু সুইসাইড করিনি! আপনারা হয়তো মনে করেন, অনেক চাকচিক্যময় আমাদের জীবন। সবসময় আমরা খুশি থাকি, ভালো থাকি। সবসময় আমাদের আভিজাত্য, আমরা এই কাপড় কিনতেছি, ওই জুতা কিনতেছি-এগুলার মধ্যে থাকি। বাট ইটস নট ট্রু। আমরাও মানুষ। তো আমার ওই সময়টাতে মনে হতো, আই শুড কমিট সুইসাইড। লাইফটা রেখে কী লাভ? এত অত্যাচার-পড়াশোনা করতে পারতেছি না, ফেসবুক নাই, কারো সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারতাম না। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে রিলেশনশিপ খারাপ করে দিছিল, বলত ওই মেয়েটার সাথে মিশবা না। ব্লা ব্লা ব্লা...।আমার তখন ওর কথা শুনতে হতো। কারণ ইউ নো লাভ ইজ ব্লাইন্ড। আপনি যখন পছন্দ করবেন কাউকে মন থেকে, তার প্রতি দুর্বল থাকবেন। আমার কাছে মনে হইছে, আচ্ছা, তার কথাই শুনি। বলা যায়, আমি তার জেল থেকে পালাইয়া আসছি। এখন কিন্তু আমি ভালো আছি, সুইসাইড করি নাই। আমার জীবন কিন্তু থেমে থাকে নাই।’
একটা বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ফারিয়া বলেন, “সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি একবার ‘মীনা বাজার’-এর একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিলাম। চিত্রনাট্য এ রকম ছিল যে, স্বামীর সাথে ঘুম থেকে উঠবে স্ত্রী, নাইটি পরে। স্বামীকে ঘুম থেকে উঠাবে স্ত্রী। আপনারা হয়তো বিজ্ঞাপনটা দেখেছেন। যে, উঠ উঠ বাজার করতে যেতে হবে। আমার সেই ছেলে বন্ধু আমাকে মানসিকভাবে এত নির্যাতন করেছিল যে, তার বাবা-মা হুজুর, এটা রোজার সময় টিভিতে প্রচারিত হবে, তাঁর বাপ-মা কী নোংরা ভাববে আমাকে। আসলে এখানে কোনো নোংরামিই ছিল না। আমি ঘুম থেকে উঠব, হাজবেন্ডকে উঠাব, বলব বাজার করতে যেতে। তখন সে বলবে, মীনা বাজার আছে বা কিছু একটা।
এটা নিয়ে সে আমাকে এতটাই মানসিকভাবে নির্যাতন করেছিল, আমি এতটাই গিল্টি ফিল করেছিলাম, আমি এতটাই ভুল কাজ করে ফেলেছি। আই ডিসাইড, আই শুড কমিট সুইসাইড। সারারাত আমি বিষয়টা নিয়ে ভেবেছিলাম, নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, আমার কী সুইসাইড করা উচিত? কিন্তু পরক্ষণেই আমার মনে হইছে, কেন? কীসের জন্য? আমি কী করছি, কী ভুল করছি? আজকে যদি আমি এই কাজটা করি, আমার মার কী হবে, বাবার কী হবে? তারা কত কষ্ট পাবে! আমার বোন, আত্মীয়স্বজন আছে। বাবা-মাসহ সবাই যারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাকে বড় করছে।’
ফেসবুক লাইভে আসার আরো একটি কারণ জানিয়ে ফারিয়া বলেন, ‘আজকে এই ফেসবুক লাইভ করার পেছনে কারণ হচ্ছে, অনেক মানুষ আছেন আপনারা। কোনো একটা মেয়ে হয়তো একটা ছেলের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছে বা একটা ছেলে হয়তো মেয়ের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছে। একটা মেয়েই তো বা ছেলেই তো। ধরলাম, আমি তাকে আপনি খুবই ভালোবাসেন। কিন্তু এমন কি হতে পারে না, আপনি যদি আজকে সব বাদ দিয়ে মুভ অন করেন, পড়াশোনা করেন, কষ্ট করেন; হয়তো এর চেয়ে অনেক ভালো একটা মেয়ে বা ছেলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে? আমার তো মনে হয়, আত্মহত্যা করা একটা লুজারের মতো কাজ। আপনি বোঝাই দিলেন, আপনি গিভ আপ করলেন, আপনি আর পারলেন না। ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি নাই। তো, আপনি যে মানুষটার জন্য আত্মহত্যা করলেন, সেই মানুষটার কী হইল? সেই মানুষটার কী কিছু যায়-আসল? হয়তো আপনি একটা ছেলের জন্য আত্মহত্যা করলেন, সে আপনার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তার কী হবে? তার কিন্তু কিছুই হবে না! সে হয়তো দুইদিন আপনার জন্য চোখের পানি ফেলবে যে আল্লাহ, মেয়েটা আমার জন্য মরে গেল! তিনদিনের দিন, সে আরেকটা মেয়ের সাথে ঘোরা শুরু করবে! আর আপনি যদি একটা ছেলে হয়ে মেয়ের জন্য আত্মহত্যা করেন, তারও দুইদিন মুভ অব থাকবে, পরে আরেকটা ছেলের সাথে চলে যাবে!
‘ক্ষতিটা হলো কার? আপনি এত সুন্দর একটা পৃথিবী থেকে চলে গেলেন। পৃথিবীর এত সুন্দর সৃষ্টি, আল্লাহ এত সুন্দর করে এই দুনিয়াটা বানাইছে। ভবিষ্যতে আমরা আরো অনেক কিছু দেখতে পাব, যদি বেঁচে থাকি। এত সুন্দুর পৃথিবী, এত সুন্দুর মানুষ, আপনার বাবা-মা! বাবা-মার কথা আপনাদের একবারও মনে পড়ে না? যারা আত্মহত্যা করছে, তাদের কী একবারও মনে হয় না-আমার মাটার কত কষ্ট হবে? মাকে কে বোঝাবে? আমার বাবাকে কে বোঝাবে, যে লোকটা সারাটা জীবন আমাদের আগলাইয়া রাখছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের জন্য টাকা রোজগার করছেন। স্বপ্ন দেখছেন, আমার মেয়েটা বা ছেলেটা বড় হবে। মানে আপনারা চান না, বাবা-মাকে প্রাউড ফিল করাইতে? আমার মনে হতো, বেঁচে থেকে কী হবে? এত বিষণ্ণ থাকতাম, এত হতাশ থাকতাম। কিন্তু লুক অ্যাট মি, এখন কি আমি ভালো নাই? এখন আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। এখন আমি হাসতেছি, খেলতেছি, পড়তেছি, খাচ্ছি, ঘুরতেছি। আমার জীবন কিন্তু থেমে নাই। বা যে আমার জীবনটা ধ্বংস করছে, তার জীবনও কিন্তু থেমে নাই। কারো জীবনই কিন্তু কারো জন্য থেমে থাকে না। শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই উত্থান-পতন আছে।’
গৃহিণীদের প্রসঙ্গ টেনে ফারিয়া বলেন, ‘আজকে আপনি কষ্টে আছেন, আপনার মনে হইল যে, আমার জীবনে কিছু করার নাই। আপনি যদি গৃহিণী হয়ে থাকেন, পড়ালেখা না করে থাকেন। আপনার স্বামী যদি আপনাকে পড়াশোনা করতে অনুপ্রেরণা না দিয়ে থাকে। আপনাকে যদি আটকিয়ে রাখতে চায়, আপনার যদি মনে হয় আমার কাজ করা উচিত, আপনি শেলাইয়ের কাজ করেন। ঘরের কাজ করেন বা টিউশনি করেন। বাসায় স্টুডেন্ট এনে পড়ান। তাহলে তো আপনার দুই-তিন পয়সা রোজগার হচ্ছে। আমার স্বামীর সঙ্গে আমি সুখি না, আমার স্বামী আমাকে সময় দিচ্ছে না, বাইরে খারাপ কিছু করছে? সারাক্ষণ আমাকে বাচ্চাকে সামলাতে হচ্ছে, কষ্ট করতে হচ্ছে? কোনো একটা রাস্তা বের করেন। আত্মহত্যা, কেন? কেন এত সুন্দর একটা জীবন নিজের হাতে শেষ করে দিতে হবে? আমরা চাইলেই পারি। হয়তো কিছু সময় বা কিছুক্ষণের জন্য মনে হতে পারে যে, আমার ভাগ্য খুব খারাপ। আমার নিজেরও মনে হয়। আল্লাহ কিন্তু আমাকে অনেক দিছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমি বলব যে, আমি অনেকের চেয়ে অনেক বেশি ভাগ্যবান। দুই হাত ভরে আল্লাহ আমারে দিছেন। কিন্তু মাঝেমাঝে আমারও মনে হয়, আমার বোধহয় কিচ্ছু নাই। আমার কিছুই নাই। আমার জীবনটা এত হতাশার কেন? আমারই মনে হয়। আপনাদেরও মনে হতে-ই পারে। এটা যে কারো মনে হতে পারে। কিন্তু দয়া করে নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট কইরেন না। জীবনটা আজকে খারাপ আছে কালকে ভালো হয়ে যাবে।’
তারকাদের বিচ্ছেদ হওয়া প্রসঙ্গে ফারিয়া বলেন, ‘আরেকটা জিনিস আমি বলতে চাই। ডিভোর্স হলে মিডিয়ার মানুষরা, সুইসাইড করলে মিডিয়ার মানুষরা। আরে ভাই, বাইরে অনেক অনেক এ রকম ঘটনা ঘটছে। যেগুলো নিয়ে নিউজ হচ্ছে না। বাংলাদেশের এত মানুষের নিউজ যদি ছাপতে থাকে, তাহলে একদিনের পত্রিকার কাগজে ধরবে না। কারণ আশপাশে এ রকম বহু সুইসাইড, বহু রেপের ঘটনা ঘটছে, যেটা আমরা জানি না। কারণ তারা মিডিয়ার না। আসলে কি কেউ আত্মহত্যা করছে না? কারো মেয়ে কি রেপ হচ্ছে না? অনেক বাবা-মা আছেন লজ্জায়, সমাজের ভয়ে পুলিশকে জানাতে চায় না। ওই মেয়েটা কিন্তু সারা জীবন নিজেকে কুড়ে কুড়ে শেষ করে ফেলে। একটা মেয়ে সবসময় নিজেকে দোষ দিতে থাকে যে, আমার ভুলের কারণেই বোধহয় ধর্ষণ হইছি। পরে একটা পর্যায়ে দেখা যায়, ওই মেয়েটা আত্মহত্যা করে। এসব ঘটনা কিন্তু আমরা জানি না। এসব ঘটনা কিন্তু আমাদের সাংবাদিকরা ছাপতে পারে না। কারণ সেসব মেয়েদের বাবা-মা, ভুক্তভোগীরা এসব খবর জানাতে চায় না। তারা হয়তো ভাবে যে, ভবিষ্যতে আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে? আজকে যদি এই সংবাদটা কাগজে প্রকাশিত হয় যে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করছে, বা আমার মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে, তাহলে ভবিষ্যতে আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে? এসব চিন্তা তাদের মধ্যে ঢুকে যায় বা এসব কারণে তারা নিউজ করায় না।তাই বলতে হয়, মানুষ মানুষই যে খারাপ, মিডিয়ার মানুষই যে আত্মহত্যা করে বা মিডিয়ার মানুষেরই ডিভোর্স হয়-এই কথাটা ভুল। আজকে আমি দুই-তিনটা কাজ করছি বলে যে আমি সেলিব্রেটি, আমি নিজেকে সেলিব্রেটি মনে করি না। আমি আপনাদের মতোই একজন সাধারণ মানুষ। আমার জীবন থেকে দেখে শিখুন।’
নিজের জীবন নিয়ে ফারিয়া আরো বলেন, ‘আমার বাবা সেদিনও বলছিল যে, আজকে যদি তুমি বার করতা, আমি বার করতে পারি নাই। আমার রেজাল্টের জন্য। আমার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল, আমি ব্যারিস্টার হব, বার করব। বাবার সেই স্বপ্ন যদি আজকে আমি পূরণ করতে পারতাম, আমার অনেক ভালো লাগত। বাবা অনেক খুশি হতো আমার ওপর। তাই, আমার মনে কী কষ্ট নাই? আমার কি কষ্ট হয় না? আমি কি রিগ্রেট করি না যে, সেই সময় আমি যদি লন্ডনে চলে যেতাম ইমোশন বাদ দিয়ে, তাহলে হয়তো আজকে আমি ভালো একটা পজিশনে থাকতাম। বাট স্টিল লাইফ গোজ অন, লাইফ মুভজ অন। আমার লাইফ কি থেমে থেকেছে? আমি পড়ছি, কষ্ট করছি। আমার অনেক কষ্ট হয়, এখানে একা থাকি আমি। পড়তে অনেক কষ্ট হয়। এখন আমার চাকরিবাকরি করার কথা। দুই হাতে টাকা কামানোর কথা। বাট আই স্টিল স্টাডিং। আমি বিশ্বাস করি যে, লেখাপড়ার কোনো বয়স নাই। আমাদের সবার উচিত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। মিডিয়াতে কাজ করেন, যেখানেই কাজ করেন। একটা সময় কিন্তু আপনার এই গ্লামার, সৌন্দর্য থাকবে না। আপনার সঙ্গে ওই সার্টিফিকেট, পড়াশোনাটাই থাকবে।’
রিসিলা প্রসঙ্গে ফারিয়া আরও বলেন, ‘আমার আজকের লাইভের একটাই এজেন্ডা ছিল। রিসিলা বিনতে ওয়াজেদ অসম্ভব একটা ভালো মেয়ে ছিল। ‘ছিল’ বলতেও আমার খারাপ লাগছে। অসম্ভব হাম্বল, অসম্ভব লক্ষ্মী একটা মেয়ে ছিল র্যাম্পে দেখা মতে। আমি জানি না তাকে কী এডজেক্টিভ দেওয়া উচিত। কিন্তু এটা প্রত্যাশিত ছিল না আসলে। আমার এই সংবাদটা পড়তে হবে, ভাবতে পারি নাই। ওকে কমেন্ট করলে এত সুন্দর করে রিপ্লাই দিত! আমার এখনো মনে হচ্ছে, কেউ যদি বলে নিউজটা ভুল। হয়তো ভালো লাগবে। জেনে ভালো লাগবে যে-না, সে বেঁচে আছে।’
ফারিয়া আরও বলেন, ‘আমার ফেসবুকে যারা আছেন বা একদিনের জন্যেও যদি আপনাদের আমাকে ভালো লেগে থাকে বা আমার কোনো একটা কাজ আপনাদের ভালো লেগে থাকে, আমি অনুরোধ করব...। সরি, আমি আপনাদের কমেন্ট পড়তে পারতেছি না। কারণ আমি এই নিউজটা পড়ার পর খুই আবেগী হয়ে গেছি এবং আমার নিজের জীবনের কথাগুলো মনে হইছে-হ্যাঁ, একটা সময় আমিও ও রকম ভাবতাম। কিন্তু আমি ঘুরে দাঁড়াইছি। আজকে যে ফারিয়া শাহরিন, আমি বলব যে অনেক বাধা, অনেক স্ট্রাগল, অনেক হাডলস ফেস করে আজকের ফারিয়া শাহারিন। পড়তেছি, আপনারা যদি দোয়া করেন তাহলে হয়তো একটা ভালো জায়গায় যাব। হয়তো মিডিয়ায় কাজ করব। এই নিউজটা আসলে আগে আমি কী লাইফ ফেস করে আসছি, ওটা মনে করাই দিছে এবং আমার ফেসবুকে যাঁরা আছেন, আমি বলব যে আপনাদের যদি কোনো আত্মীয়স্বজন, ফ্রেন্ড যারাই আছেন বা আপনাদের কাছের যাঁরাই আছেন, যদি কাউকে দেখেন যে, সে মানসিকভাবে হতাশ, মানসিকভাবে সে কোন কারণে কষ্ট পাচ্ছে, বি উইথ হার, বি উইথ হিম। ওকে বোঝান। আপনাদের কাছে রিকুয়েস্ট করি, বেগ করি যে আর যাতে এই ধরনের সংবাদ না করতে হয়। যারাই এই টাইপের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, আমার অনুরোধ যে একটা সময় আপনি মরেই যাবেন। এত সুন্দর একটা জীবন আর আসবে না। কারো জন্য যদি আপনি কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাকে সাকসেসফুল হয়ে দেখিয়ে দেন। যে দেখ, তুমি কী হারাইছ। কাকে হারাইছ। এটাই তার জন্য একটা পারফেক্ট একটা জবাব।
আপনি আত্মহত্যা করা মানে হচ্ছে হেরে গেলেন এবং ওই মানুষটা জিতে গেল। খারাপ মানুষটা, নষ্ট মানুষটা জিতে গেল। আজকে যদি আপনি ঘুরে দাঁড়ান, সফল হয়ে দেখান, তাহলে ওই মানুষটার জন সবচেয়ে বড় জবাব। আপনি যদি সাকসেসফুল হতে পারেন, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন, বাজে পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেন; তাহলে আপনিই আসল বিজয়ী। আমার ফেসবুকে নিশ্চিতভাবেই অনেক হতাশ মানুষ আছে। অনেক হতাশাব্যঞ্জক স্ট্যাটাস দেখি। অনেকে লেখেন যে ঘুমাতে পারতেছেন না, রাত জাগতেছেন, ওষুধ খাচ্ছেন, নেশায় চলে যাচ্ছেন। নো, লাইফটা অসম্ভব সুন্দর। আপনি নেশায় কেন যাবেন? নেশা কেন আপনাকে ভুলিয়ে রাখবে? আপনি কি নিজের সাথে জেদ করেন যে, আমার ওই মানুষটাকে ভুলতে হবে। আমার সাকসেসফুল হয়ে ওই মানুষটাকে দেখিয়ে দিতে হবে।’
মাদক প্রসঙ্গে ফারিয়া বলেন, ‘কেন আপনি ড্রাগের সহযোগিতা নিবেন? ড্রাগ নিয়ে কেন আপনাকে ঘুমাতে যেতে হবে বা শান্তি পেতে হবে? অনেকেই আছেন ড্রাগ নেন, ইয়াবা খাচ্ছেন, এটা খাচ্ছেন-ওটা খাচ্ছেন। এটার ফিউচার কিন্তু ভয়ংকর। আজকে হয়তো আপনি শখের বশে খাচ্ছেন, কালকে সেটা এডিকশনে রূপান্তরিত হবে। আপনি বাবা-মার ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করবেন, এর-ওর জিনিস বিক্রি করবেন, এটা-ওইটা করবেন। এই ভুল-ওই ভুল করবেন। একটা পর্যায়ে আপনি আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবেন। আমি যেটা দেখছি আমার জীবনে, কাছের মানুষই কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। আপনার কাছের ফ্রেন্ডরাই হয়তো আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে যে দোস্ত, ওই মাইয়্যাডারে ভুলে যেতে চাস, আজকে ইয়াবা খা। বা আজকে এইটা খা-ওইটা খা। ভুলে যেতে পারবি, কিছু সময়ের জন্য ভালো থাকবি। ওরা কখনোই কিন্তু আপনার ফ্রেন্ড না। ওরা জেনে-বুঝেই আপনার ব্রাইট ফিউচারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ওরা জানে যে এই ছেলেটা বা মেয়েটার ফিউচার অনেক ব্রাইট, ওকে যদি আমরা এডিক্টেড করে দেই, তাহলে ও আর আগাতে পারবে না। থিংক অ্যাবাউট ইউর প্যারেন্টস। যে মা আপনাকে ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধরছে, ওই মা যখন জানতে পারবে যে আমার ছেলে বা মেয়ে মাদকাসক্ত! আমার ব্যাগ থেকেই টাকা চুরি করে খায়!ওই মার কতটুকু কষ্ট লাগবে! প্লিজ, একবার এই জিনিসটার কথা ভাববেন।’
নিজের ব্যক্তিগত জীবন প্রসঙ্গে ফারিয়া আরো বলেন, ‘আমি আজকে মিডিয়াতে কাজ করি প্রায় ১০ বছর। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না যে, ফারিয়া খারাপ। ফারিয়া সম্পর্কে একটা বাজে কথা কেউ বলতে পারবে না। এই ব্যাপারে আমি অসম্ভব কনফিডেন্ট। কেউ বলতে পারবে না বাজে কাজ করে মিডিয়াতে কাজ করে। হয়তো আমাকে পাঁচটা মানুষ কম চেনেন। রিয়েলি আই ডোন্ট ক্যায়ার। আমি শুধু মায়ের চেহারাটা সবসময় চোখে রাখছি, মাথায় রাখছি। যেখানে কাজ করতে গেছি, যে ধরনের প্রলোভন আমাকে দেখানো হইছে; আমার শুধু মায়ের চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে যে, আমি যদি এই কাজটা করি আর আমার মা যদি কোনোদিন কোনোভাবে জানতে পারেন এমন কাজ করে তার মেয়ে টাকা কামাইছে। কত কষ্ট আমার মা পাবেন! আমার ফ্যামিলি, যে আমাকে এলাউ করছে মিডিয়াতে। আমার ফ্যামিলির মতো অনেক ভালো ভালো ফ্যামিলি আছে যারা নিজেদের মেয়েকে মিডিয়াতে দেওয়ার সাহস পান না। মানুষের একটা কনসেপ্ট যে, মিডিয়ার মানুষ মানেই …। আমি একদম ওপেনলি বললাম। একদম নোংরা কনসেপ্ট, অনেক নোংরাভাবে এই কথাগুলা আমাকে শুনতে হয়। এই জিনিসগুলো আমাকে নানাভাবে হতাশ করছে।
এত ভালো থাকার পরও দিন শেষে এই কথাগুলো আমাদেরকে শুনতে হয়। তাই আমি কি সুইসাইড করছি? করি নাই। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ-প্রার্থনা যে কোনো কষ্ট থাকলে, না পাওয়া থাকলে মনে রাখবেন- এটা সাময়িক। এই দিন চলে যাবে। আমাদের সবার জীবনে উত্থান-পতন আছে। সবার জীবনে কষ্ট থাকবে, সুখ থাকবে। আপনারা মনে রাখবেন, আল্লাহ এই সময়টা থেকে আমাকে রক্ষা কর, শক্তি দাও। কিছু করার আগে একবার চোখ বন্ধ করে বাবা-মার চেহারাটা চিন্তা করবেন। যে, আমি যদি আজকে এই কাজটা করি আমার বাবা-মার কী হবে? আমার বাবা-মা জানতে পারলে কতটুকু কষ্ট পাবেন? এই বাপ-মা কী করে নাই? কত বাবা-মা আছেন, জমি বিক্রি করে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করান। ওই ছেলেমেয়েই দেখা যায় একটা ছেলে বা মেয়ের কাছ থেকে ধোকা খেল, আর আত্মহত্যা করে ফেলল। তাহলে এই বাবা-মা আমাকে এত কষ্ট করে বড় করলেন, মা-বাবা না খেয়ে থেকে আমাকে খাওয়ালেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পড়ার খরচ জোগালেন, ওদের জন্য আমার কর্তব্য কী থাকল? একটা মেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, ছেড়ে যাইতেই পারে। ছেড়ে যাওয়া মানে এই নয়, হয়তো অনেক ভালো কোনো মেয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করতেছে। অনেক ভালো কোনো সুযোগ হয়তো আপনার জন্য অপেক্ষা করতেছে। সো থিংক অ্যাউট দ্যাট, থিংক লাইক দ্যাট।
এতটুকু বলার জন্যই আজকে আমার আশা। আমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম যে, আমিও গো থ্রো করছি কীসের ভিতর দিয়ে। অনেক মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। তার ধারণা ছিল যে, আমি যদি অনেক বেশি পড়াশোনা করি, অনেক বেশি সফল হয়ে যাই, তাহলে আমি তার থেকে অনেক বেশি এগিয়ে যাব। সেই সঙ্গে তাকে ছেড়ে চলে যাব বলেই হয়তো তার এমন মানসিকতা ছিল। কিন্তু ভুক্তভোগী কিন্তু আমিই হইছি। আমি অনেক কিছু হারাইছি। আমি আমার বাবা-মায়ের স্বপ্নকে নিজের হাতে ধ্বংস করছি। তাই আমি চাই না, আমার মতো বা যারা আজকে আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা করেন, মানসিকভাবে হতাশ তারা এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেন। আমি বলব যে, জীবনটা অনেক সুন্দর। পৃথিবীটাকে দেখেন, অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস আছে করার। মন খারাপ হলে খান, শপিং করেন। যদি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হোন, ঘুরে বেড়ান, বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। আপনার যদি ভালো বন্ধু থাকে, বন্ধু সাথে সময় কাটান। ড্রাগ নিয়েন না, ড্রাগ ইজ নট দ্য সলুউশন। সুইসাইড ইজ নট দ্য সলিউশন। ড্রাগ আপনাকে ধ্বংস করে দেবে, চেহারা বিশ্রী হয়ে যাবে। আপনার দাঁত পড়ে যাবে, চুল পড়ে যাবে। আপনি আগলি হয়ে যাবেন। বাবা-মার টাকা চুরি করবেন। আপনি একটা সময় নিজেকে নিজে শেষ করে দেবেন। তাই এই ড্রাগ নেওয়া, আত্মহত্যা করা-এগুলোকে না বলেন। সাকসেসফুল হন, সাকসেস হয়ে ওই মানুষটাকে দেখিয়ে দেন যে দেখ, তুমি কী হারাইছ। আমি দুঃখিত আসলে, আপনারা অনেক কমেন্ট করছেন, আমি পড়তে পারি নাই। আসলে কমেন্ট পড়ার জন্য আজকে লাইভটা করি নাই। আমি জানি না, আজকে এতটুক যদি আপনাদের মনে সাড়া জাগাইতে পারি, এতটুকুও উপলব্ধি এসে থাকে, তাহলে আমি বলব শুক্রিয়ায়। কিন্তু একটাবার চিন্তা করে দেখবেন, এসব কিছু করার আগে। আজকে যদি রিসিলা একটাবার ওর মেয়ের কথা চিন্তা করত, হয়তো ওটুকু মানসিকভাবে হতাশ ছিল বলেই হয়তো সে এটেম্পটা নিতে পারছে। আল্লাহ তাকে বেহশত নসিব করুক। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে, আত্মহত্যা মহাপাপ। আমি বলব যে, কেউ আত্মহত্যা কইরেন না, চিন্তাও কইরেন না। ’
রিসিলাকে স্মরণ করে ফারিয়া আরও বলেন, ‘আজকে আমি সবার ভালোবাসা দেখতেছি। ফেসবুক ভরে গেছে রিসিলার জন্য। উইশ করতেছেন সবাই, ও হয়তো বেঁচে থাকা অবস্থায় জানত না এত মানুষ তাকে ভালোবাসে। আজকে ও যদি দূর থেকেও দেখতে পারতো এত মানুষ তাকে ভালোবাসে তাহলে সে আত্মহত্যা করত না। সো, আপনি হয়তো নিজেও জানেন না আপনাকে কত মানুষ ভালোবাসে। হয়তো জানেন না যে, কত মানুষ আছে যে আপনাকে মন থেকে ভালোবাসে। আপনাকে এডোর করে, এডমাইয়ার করে। তাই ভুলেও নেশা করবেন না। কষ্ট হবে, অনেক কষ্ট হবে। কঠোর পরিশ্রম করেন, পড়াশোনা করেন। গৃহিণীরা আছেন, সাফার করতেছেন। মানসিকভাবে হতাশ স্বামীর কারণে। তারা শেলাইয়ের কাজ করেন, টিউশনি করেন, যা পারেন করেন। এখন টাকা রোজগার করাটা কোনো ব্যাপার না। অনলাইনে বুটিক দেন বা অনলাইন বিজনেস করেন। অনেক সুযোগ। আল্লাহর রহমতে আমাদের অনেক সুযোগ। এগুলোকে ব্যবহার করেন। যদি আপনার মনে হয় ঘুরে দাঁড়ানো দরকার, এখনো দেরি হয়নি ঘুরে দাঁড়ান। সবাইকে বলব ভালো থাকেন, সুস্থ থাকে। নিজেকে ভালোবাসেন। এটুকুই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমিও আপনাদের সবার জন্য মন থেকে দোয়া করি। যাতে, কারো এই ধরনের সংবাদ আর পড়তে না হয়। আমাদের কারোরই যেন কারো এরকম নিউজ পড়তে না হয়। সবাই ভালো থাকবেন। খোদা হাফেজ।’