আমাদের প্রিয়তি

বাংলাদেশে জন্ম। মাকসুদা আকতার প্রিয়তির বেড়ে ওঠাও এখানেই। সেই তিনি হয়ে উঠলেন আয়ারল্যান্ডের সেরা সুন্দরী। ২০১৪ সালের ‘মিস আয়ারল্যান্ড’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিয়তি উজ্জ্বল করলেন বাংলাদেশের মুখ।
এখন নিজে মডেলিং করছেন, পাশাপাশি আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন মডেলিং প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবেও থাকছেন প্রিয়তি। জানালেন, আসছে অক্টোবরে ‘মিস আর্থ’ প্রতিযোগিতায় লড়বেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের টপ মডেল প্রিয়তির আরেকটি পরিচয়—তিনি একজন বৈমানিক। এখন কাজ করছেন ‘ফ্লাইট ইনস্ট্রাকটর’ হিসেবে। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কোয়ালিফায়েড পাইলট হতে আসা শিক্ষার্থীদের।
কেবল ‘মিস আয়ারল্যান্ড’ খেতাব নয়, ১৪ বছরের মডেলিং ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই জয় করেছেন প্রিয়তি। ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচিত হন ‘মিস হট চকলেট’। আইরিশ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা এটি। ‘টপ মডেল ইউকে’ প্রতিযোগিতাতেও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছিলেন প্রিয়তি। চার-পাঁচ হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে ছিলেন শীর্ষ ২৫-এ। ২০১৩ সালে লড়েন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘মিস ইউনিভার্সাল রয়েলিটি’ প্রতিযোগিতায়। সেটা চলার সময়ই নাম লেখান মিস আয়ারল্যান্ড’ প্রতিযোগিতায়। এরপর তো বাজিমাৎ!
প্রিয়তির জীবনের গল্পটা কি রূপকথার মতো নয়? এমন প্রশ্নে প্রথমে হেসে সায় দিলেও পরক্ষণেই বললেন, ‘আমি যে এতটা পথ এসেছি, তা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। কতটা কষ্ট করেছি, তা কেবল আমি জানি।’ এরপর প্রিয়তি বললেন, ‘নিজের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য আয়ারল্যান্ডের বিখ্যাত প্রশিক্ষক নোয়েল কাওম্যানকে নিয়োগ দিয়েছি আমি। এর জন্য প্রচুর অর্থ আমাকে খরচ করতে হচ্ছে। পোশাক, ডিজাইন, কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়া, থাকার ব্যবস্থা সব নিজের খরচে করতে হয়। শারীরিক পরিশ্রম তো আছেই।’
মডেল নাকি বৈমানিক—কোন পরিচয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? প্রিয়তির জবাব, ‘দুটি পরিচয়কেই আমি সমানভাবে ভালেবাসি। জীবনের প্রয়োজনে বিমান চালনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। আন্তর্জাতিক মডেল হতে চেয়েছিলাম, সেটাও হয়েছি। দুটি জায়গাতেই আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
প্রিয়তি আয়ারল্যান্ডে গিয়েছিলেন পড়ালেখার জন্য। ১৪ বছর আগে ‘ও’ লেভেলে পড়ার সময়। এখন স্থায়ীভাবে সেখানেই থাকছেন। নাগরিকত্বও পেয়েছেন। তবে একটু অবসর পেলেই প্রাণের টানে তিনি ফিরে আসেন ঢাকায়। সর্বশেষ এসেছিলেন তিন মাস আগে। তখন সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন ছেলে আবরাজ ও মেয়ে মৌনিরাকে।
বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টারও কমতি নেই প্রিয়তির। তিনি যুক্ত আছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের সঙ্গে। দেশে এলেই নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে যান তিনি। ওদের সঙ্গে সময় কাটান, গল্প শোনান, সব বাধা পেরিয়ে জীবনে বড় হওয়ার অনুপ্রেরণা দেন।
প্রিয়তি ও তাঁর জীবনটা সত্যি প্রেরণাদায়ক। বৈমানিকের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় আছেন। পড়ালেখা করছেন। ছেলেমেয়েদের আগলে রাখছেন। মডেলিংয়ের জন্য ছুটে চলেছেন দেশ থেকে দেশে। তবু ক্লান্তি নেই এতটুকু! কজনের পক্ষেই বা এটি সম্ভব?