বলিউড
নায়ক থেকে খলনায়ক
শুধু নায়করাই যে বলিউডে প্রশংসিত হন, এমন ভাবাটা বোধ হয় ভুল হবে। এমনও সব ছবি হয়েছে বলিউডে, যেখানে নায়কের চেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তার করেছেন খলনায়ক। আবার অনেক অভিনেতাই ভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেছে নেন খলচরিত্র। তাঁদের অভিনয় করা খলচরিত্রের অনেকগুলোই দাগ কেটে রয়েছে ভক্তদের মনে। চলুন, বলিউড লাইফ ডটকম ও দেশি মার্টিনির সৌজন্যে জেনে নিই খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করা নায়কদের কথা।
ডর (১৯৯৩)
একবার নায়ক হয়ে গেলে খলনায়ক হওয়া যাবে না—এই নীতিতে চলছিল তৎকালীন বলিউড। কিন্তু সে ধারা ভেঙে বলিউডে নতুন পা রাখা বালক নায়ক থেকে হয়ে গেলেন খলনায়ক। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছিলেন বলেই তিনি আজকের শাহরুখ খান। শাহরুখকে নায়ক হিসেবে মানুষ যতটা মনে রেখেছে, ঠিক ততটাই মনে রেখেছে খলনায়ক হিসেবে। ‘ডর’ ছবিতে অভিনয় তাঁর অভিনয় জীবনে দেয় নতুন মাত্রা। ১৯৯৩ সালে প্রায় ১০ কোটি রুপি আয় করে সে বছর সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবির তকমা পায় ‘ডর’।
বাজিগর (১৯৯৩)
‘ডর’-এর ঠিক এক মাস আগে মুক্তি পায় ‘বাজিগর’। আব্বাস মাস্তানের পরিচালনায় ও যশ চোপড়ার প্রযোজনায় নির্মম প্রেমের গল্প হিসেবে ভক্তদের হৃদয়ে স্থান করে নেয় ‘বাজিগর’। আর সঙ্গে সঙ্গে সবার মনে খলনায়ক হিসেবে ঠাঁই করে নেন শাহরুখ খান। ছবিটি বক্স-অফিসে আয় করে প্রায় সাত কোটি রুপি।
ধুম সিরিজ (২০০৪, ২০০৬, ২০১৩)
২০০৪ সালে ‘ধুম’ সিরিজের প্রথম ছবি দিয়ে প্রথমবারের মতো খলচরিত্রে অভিনয় করেন জন আব্রাহাম। এ ছাড়া ধুমই প্রথম জানান দেয় যে খলনায়ক শুধু নায়কের চেয়ে সুদর্শনই হয় না, বরং বুদ্ধিমান ও তেজিও হয়। সে ধারা বজায় থাকে ‘ধুম-২’-তেও। খলচরিত্রে অভিনয় করেন হৃতিক রোশন। তাঁর সঙ্গী হিসেবে দেখা যায় ঐশ্বরিয়া রাইকে। তবে ‘ধুম’ সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে এর তৃতীয় খণ্ডে। যেখানে খলচরিত্রে অভিনয় করেন ‘মি. পারফেকশনিস্ট’খ্যাত আমির খান। প্রথমবারের মতো ‘ধুম’ সিরিজের কোনো ছবির আয় ছাড়ায় ২০০ কোটি।
ডন সিরিজ (২০০৬, ২০১১)
১৯৭৮ সালে ‘ডন’ ছবির মাধ্যমে খল চরিত্রে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। তবে ‘ডন’কে পর্দায় নতুনভাবে নিয়ে আসা হয় ২০০৬ সালে। আর তাতে অভিনয় করেন খলনায়ক হিসেবে পরীক্ষিত নায়ক শাহরুখ খান। ব্লকবাস্টার হিট ছবির দ্বিতীয় পর্ব নির্মিত হয় ২০১১ সালে। আগের ছবিটি পুরোনো ছবির নতুন সংস্করণ হলেও এবার সম্পূর্ণ মৌলিক গল্পে তৈরি করা হয় ‘ডন ২’। বক্স-অফিসে ছবিটির আয় ২০০ কোটি ছাড়ায়।
ওয়ানস আপন এ টাইম ইন মুম্বাই (২০১০)
২০১০ সালে ‘ওয়ানস আপন এ টাইম ইন মুম্বাই’ ছবির মাধ্যমে খলচরিত্রে দেখা যায় ভারতের ‘সিরিয়াল কিসার’খ্যাত ইমরান হাশমিকে। ছবিতে আরো অভিনয় করেন অজয় দেবগন, কঙ্গনা রানাউত, প্রাচি দেশাই ও রণদীপ হুদা। দুর্দান্ত সংলাপ ও টান টান গল্পে ফুটিয়ে তোলা হয় অপরাধ জগতের নানা চিত্র। আর তাতে খল চরিত্রে বেশ মানিয়ে নেন ইমরান হাশমি।
অগ্নিপথ (২০১২)
‘অগ্নিপথ’-এর জন্য জাতীয় পুরস্কার পান অমিতাভ বচ্চন। তবে ‘অগ্নিপথ’-এর নতুন সংস্করণে নায়ক হৃতিক রোশনের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ‘কাঞ্চা’খ্যাত সঞ্জয় দত্ত। বক্স-অফিসে ছবিটি আয় করে নেয় ১১৫ কোটি রুপি।
এক ভিলেন (২০১৪)
নিজের ‘চকলেট বয়’ ইমেজ ঝেড়ে ফেলে খলচরিত্রে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেন সিদ্ধার্থ মালহোত্রা। ভক্ত ও সমালোচকদের কাছে ব্যাপক আলোচিত হয় ‘এক ভিলেন’ ছবিতে তাঁর অভিনয়। ছবিটি বক্স-অফিসে আয় করে প্রায় ১০৫ কোটি রুপি।
ফ্যান (২০১৬)
২০১৬ সালে সর্বশেষ খলচরিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ খান। ‘ফ্যান’ ছবির গৌরব চান্দা ও বলিউড তারকা আরিয়ান খান্না দুটি চরিত্রেই অভিনয় করেন শাহরুখ। আরিয়ান খান্নার ভক্ত গৌরব চান্দা হিসেবে শাহরুখের অভিনয় প্রশংসিত হলেও বক্স-অফিসে সুবিধা করতে পারেনি ছবিটি।
ইত্তেফাক (২০১৭)
২০১৭ সালে আবারও খলচরিত্রে অভিনয় করেন সিদ্ধার্থ মালহোত্রা। ‘ইত্তেফাক’-এ তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন সোনাক্ষী সিনহা। যদিও বক্স-অফিসে খুব বেশি সাফল্য পায়নি ছবিটি।
পদ্মাবত (২০১৮)
হুমকি, হামলা, আন্দোলন, বিতর্ক সবকিছু মাথায় নিয়ে মুক্তি পেয়েছিল ‘পদ্মাবত’। কিন্তু অভিনয় দিয়ে সবার মুখে কুলুপ দিয়ে দিয়েছেন রণবীর সিং। নেতিবাচক চরিত্র আলাউদ্দিন খিলজিতে তাঁর অভিনয় এতটাই মুগ্ধ করেছে বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনকে যে তিনি নিজে হাতে লিখে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন রণবীর সিংকে।
এই ছবিগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু ছবিতে আলোচিত হয়েছেন সচরাচর নায়ক চরিত্রে অভিনয় করা খলনায়করা। তাঁদের মধ্যে অক্ষয় কুমারের আজনাবি, সাইফ আলি খানের ওমকারা, শাহরুখ খানের আনজাম উল্লেখযোগ্য।