শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে মিজু আহমেদের ছবি

সৈকত নাসির পরিচালিত ‘পাষাণ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা মিজু আহমেদ। বাংলাদেশের বিদ্যা সিনহা মিম ও ভারতের ওম জুটির এই ছবিটি মুক্তি পাবে আগামী শুক্রবার। সারা দেশে শতাধিক হলে ছবিটি মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন ছবির পরিচালক।
সৈকত নাসির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এই ছবির অভিনয় শিল্পী ও দেশের শক্তিমান অভিনেতা মিজু আহমেদ স্যারকে স্মরণ করছি। তিনি এই ছবির খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন। একজন ভালো অভিনেতা একটি চলচ্চিত্রকে আরো বেশি শক্তিশালী করে তুলতে পারে, আমাদের এই ছবি দেখার পর এমন উপলব্ধিই হবে সবার। মিজু স্যার সত্যিই শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু উনার ছবিটি আমরা এখন মুক্তি দিচ্ছি।’
সৈকত নাসির মিজু আহমেদকে নিয়ে আরো বলেন, ‘মিজু স্যার বোঝেন পরিচালক কী চান, একটা সিক্যুয়েন্স বুঝিয়ে দেওয়ার পর সেটা এমনভাবে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন যে গল্পটা দর্শকদের সামনে সাবলিল ভাবে উঠে আসে। কোনো টেক একবারের বেশি নিতে হয়নি। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি আমার ছবির শুটিং করেছেন। মিজু স্যার শুটিং শেষ করে শুটিং লোকেশন থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমাকে বলেছিলেন, এত তাড়াতাড়ি আমার শুটিং শেষ হলে গেল? আমি হেসে স্যারকে বলেছিলাম, আপনার তো একবারের বেশি বেশি শট নিতে হয় না। আপনার অংশের যেমন শুটিং শেষ হয়েছে, তেমনি আমার একটা দিন বেঁচেও গেছে। তিনি আমাকে দোয়া করে করে চলে গেলেন। সারা দেশে মিজু স্যারের অনেক ভক্ত আছে, আমার এই ছবিটি তাদের কাছেও ভালো লাগবে।’
গতবছর ২৭ মার্চ সোমবার রাত ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে দিনাজপুর যাচ্ছিলেন মিজু আহমেদ। ট্রেন তেজগাঁও স্টেশনে যাওয়ার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। পরে তাঁকে বিমানবন্দর স্টেশনে নামিয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। কুষ্টিয়ার কোটবাড়িতে বাবা-মার পাশে তাঁকে কবর দেওয়া হয়।
ছোটবেলা থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মিজু আহমেদ। তবে সে জন্য পড়ালেখায় কিন্তু অনিয়মিত হননি, ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী। ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন মিজু আহমেদ। জন্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয় মিজানুর রহমান। শৈশবকাল থেকে তিনি থিয়েটারের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। পরে তিনি কুষ্টিয়ার স্থানীয় একটি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে শেখ নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘নদের চাঁদ’ ছিল তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি। ১৯৯১ সালে অভিনীত ‘দাঙ্গা’ ছবিটি তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেন এফডিসির শক্তিমান খলতারকা ‘মিজু আহমেদ’ হিসেবে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো—তৃষ্ণা (১৯৭৮), মহানগর (১৯৮১), সারেন্ডার (১৯৮৭), চাকর (১৯৯২), সোলেমান ডাঙ্গা (১৯৯২), ত্যাগ (১৯৯৩), বশিরা (১৯৯৬), আজকের সন্ত্রাসী (১৯৯৬), হাঙ্গর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭), কুলি (১৯৯৭), লাঠি (১৯৯৯), লাল বাদশা (১৯৯৯), গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০), ঝড় (২০০০), কষ্ট (২০০০), ওদের ধর (২০০২), ইতিহাস (২০০২), ভাইয়া (২০০২), হিংসা প্রতিহিংসা (২০০৩), বিগ বস (২০০৩), আজকের সমাজ (২০০৪), মহিলা হোস্টেল (২০০৪), ভণ্ড ওঝা ২ (২০০৬) প্রভৃতি। নিজের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ফ্রেন্ডস মুভিজের ব্যানারে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন তিনি।
‘দেশা : দ্য লিডার’ ছবির মাধ্যমে সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান পরিচালক সৈকত নাসির। ‘পাষাণ’ ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য করেছেন তিনি নিজেই। ছবিতে আরো অভিনয় করেছেন সাদেক বাচ্চু, ইলোরা গহর, আমির সিরাজী, নাদের আলী, তানভির তনু, চিকন আলী, সীমান্ত, শিমুল খান, প্রয়াত মিজু আহমেদ। ছবির একটি আইটেম গানে কাজ করেছেন বিপাশা কবির।