চলচ্চিত্র দিবসে এফডিসিতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা

গতকাল ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। দিনটিকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র বিএফডিসিতে ছিল নানা আয়োজন। এরই মধ্যে সেখানে ঘটে যায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এমনিতে এফডিসির প্রধান ফটকে বহিরাগতদের ভিড় লেগে থাকলেও তারা ভেতরে ঢুকতে পারে না। তবে গতকাল দেখা গেলো অনেক বহিরাগতই হাতে দাওয়াতপত্র নিয়ে এফডিসির ভেতরে ঘোরাঘুরি করছেন। নিজেদের মতো করে দল বেধে সেলফি তুলছেন। তারকাদের দেখলে তাঁকে ঘিরে ধরছেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট না হয়েও এই দাওয়াতপত্র বহিরাগতরা কোথায় পেলেন?
একজন বহিরাগতের পরিচয় জানতে চাইলে, বলেন তার নাম খুরশেদ আলম, তিনি এসেছেন ঢাকার অদূরে টঙ্গী থেকে। দাওয়াতপত্র পাওয়া প্রসঙ্গে খুরশেদ আলম বলেন, ‘আমি আসলে এখানে এসেছিলাম কারওয়ান বাজার একটি কাজে, এখান দিয়ে যাবার সময় দেখলাম অনেকেই ভেতরে যাচ্ছে, দূরে দাঁড়িয়ে দেখলাম সাদা পোশাকের কিছু মানুষ কার্ড বিক্রি করছেন। আমরা দুজন, এখানে একশত পচিশ টাকা করে আড়াইশ টাকা দিয়ে এফডিসির ভেতরে এসেছি। আমরা অনেক কম টাকায় আসতে পেরেছি, অন্যরা তো আড়াইশ, তিনশ টাকা করে দিয়ে প্রবেশ করেছে।’
এসময় এফডিসির প্রবেশ পথে কয়েকজনকে দেখা যায় কয়েকটি দাওয়াতপত্র হাতে নিয়ে ঘুরছেন। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে গিয়ে তারা গোপনে কথা বলছেন। তারা কী করছেন জিজ্ঞেস করলে বলেন, সাংবাদিকের সঙ্গে তারা কথা বলবেন না। দাওয়াতপত্র তো বিক্রির জন্য নয়, আর হস্তান্তরযোগ্যও নয়, তাহলে এটি বিক্রি হচ্ছে কী করে? উত্তরে এফডিসির একজন কর্মচারী, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই বিক্রির টাকা থেকে সবাই ভাগ পায়, আমাদের সাথে কথা বলে লাভ নেই।’
দাওয়াতপত্রগুলো পাওয়া প্রসঙ্গে ওই কর্মচারী বলেন, ‘এফডিসির শিল্পীরা অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন, এফডিসির ১৮টি সংগঠন, তারা আলাদা ভাবে অনুষ্ঠান করেছেন। বয়কটের কারণে সংগঠনগুলোর সাধারণ সদস্যরা আর কার্ড গ্রহণ করেননি। এখন এই পাঁচ হাজারেরও বেশি কার্ডের কী হবে? এই কার্ডগুলো এখন কিভাবে বাইরে এলো, আর কারা বিক্রি করছে আমরা জানিনা।’
বিষয়টি নিয়ে জানেত চাইালে বিএফডিসির এমডি আমির হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানিনা, আমাদের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী যদি বিষয়টির সাথে জড়িত থাকেন, তা হলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমন্ত্রণপত্র বিক্রি ছাড়াও চলচ্চিত্র দিবসে আরো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। যেমন গতকাল মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় এফডিসির আট নাম্বার ফ্লোরে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও তথ্য প্রতিমন্ত্রি তারানা হালিম। কিন্তু সেই সেমিনারে সংবাদিকদের যেতে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয়, এমডির নিষেধ আছে, কোন সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবে না।
কেন এই নিষেধাজ্ঞা জানতে চাইলে এমডি আমির হোসেন বলেন, ‘আমি আসলে বিষয়টি জানতাম না, বাইরে আমার কর্মকর্তারা ছিলেন, তারাও আমাদের অবগত করেননি যে সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারছেন না। জানলে তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা নিতাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি নষ্ট করার জন্যও হয় তো সাংবাদিকদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি।’
গতকাল সন্ধ্যায় বিএফডিসির পক্ষ থেকে একটি সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান হবার কথা ছিল। সেখানে বিটিভির শিল্পীদের অংশ নেয়ার কথা ছিলো। মঞ্চও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু সেখানে কোন অনুষ্ঠান হতে দেখা যায়নি। এমন কেন হলো? এই প্রশ্নের উত্তরে আমির হোসেন বলেন, ‘আমরা অনুষ্ঠান করিনি, কিন্তু পাশেই তো চলচ্চিত্র পরিবারের অনেক বড় একটা অনুষ্ঠান ছিল। যে কারণে আমরা আর আলাদা করে অনুষ্ঠান করিনি।’
২০১২ সাল থেকেই দিবসটি এফডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে পালন করে আসছে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। তবে এ বছর আর সেটি হয়নি। বর্ষীয়ান অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমামকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি করা নিয়ে এমডির সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে বয়কট করে চলচ্চিত্র পরিবার।