আমি পলিটিক্যাল মানুষ, আমার পেশা গান : নচিকেতা
‘কেন গান গাইব? আজকাল লোকজন গাইয়েদের সম্মান দেয় নাকি? দেখলে বলে গান-ফান করে। আরে! গান না ফান!’ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের কাছে এমন সব প্রশ্ন তুললেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী।
গল্পে গল্পে বললেন, ‘একবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে একটা শো করতে গিয়েছিলাম। জঙ্গলের মধ্যে রেস্টহাউসে ছিলাম। সেখানে একদল স্কুল পড়ুয়া তাদের গাইডের সঙ্গে গিয়েছিল এক্সকারশনে। হঠাৎ শুনি ওই গাইড পড়ুয়াদের বলছে, তোমাদের হাতি দেখিয়েছি, গন্ডার দেখিয়েছি। এবার চলো নচিকেতাকে দেখাব। কাজেই ওই হাতি-ঘোড়ার থেকে আলাদা নই আমি। ফলে কী কাজ করব আর! নতুন করে অ্যালবাম বের করার আপাতত আর মুড নেই।’
সোজাসাপ্টা আলাপচারিতায় নচিকেতা বলেন, ‘পোকামাকড়ের মতো বেঁচে থাকা মানুষ আমি নই। আমি আজকে বাঁচি। কালকে কী হবে সেই ভয়ে আমি বাঁচি না।’
দীর্ঘ সংগীতজীবনের পথ পেরিয়ে এসে নিজের উপলব্ধি থেকে নচিকেতা বলেন, ‘শিল্প এখন সস্তায় বিকোয়। গান তো সবচেয়ে সস্তা। জঘন্য কমোডিটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কতগুলো বাজে চলতি কথার গান বাজারে হিট হয়। আমি আমার শিল্পকে এই সস্তা বাজারে বিকোব না। যে শিল্পের মূল্যই আজকের দিনে হারিয়ে গেছে, তার আর মূল্যায়ন কিসের? আজকালকার দিনে বারবার যে গান চলে সেই গানই হিট। আমি তো বিষয়টি জানি। ব্যাপারটা অনেকটা ওয়াশিং পাউডার ‘নিরমা’র বিজ্ঞাপনের মতো। বারবার শুনে সুপারহিট।’
এই প্রথমবার নচিকেতা চক্রবর্তীর লেখা এবং সুর করা গান পূজা অ্যালবাম ‘দেখা হলো আবার’-এ গাইলেন শুভঙ্কর (ভাস্কর)। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নচিকেতা বললেন, ‘নচিকেতা চক্রবর্তী আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষ মানুষকে গান দেয়নি। এই প্রথম শুভঙ্করকে গান দিলাম। আসলে আমি কখনো আমার প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করতে চাইনি। তবে শুভঙ্কর খুবই কম্পিটেন্ট সিঙ্গার। আমার খুবই পছন্দের। তা ছাড়া আমার কত গানই তো জমে জমে ধুলো পড়ছে। সব গান আমি রেকর্ডও করি না। কী হবে জমিয়ে রেখে? শুভঙ্করদের মতো ভালো গাইয়েদের দেবে গান? এখনকার বেশির ভাগ কম্পোজারের যোগ্যতাই নেই ওদের মতো ভালো গাইয়েদের গান দেওয়ার।’
এই প্রথম নিজের গান অন্যকে দিয়ে গাওয়ালেন নচিকেতা। নিজে সুর করে দিলেন। তাই বলে নিজেকে এই সময়ের কম্পোজারদের মধ্যে ফেলতে চান না নচিকেতা। বললেন, ‘আমি বোধহয় অনেক পিছিয়ে পড়া কম্পোজার সিঙ্গার। কিংবা এই সময়ের, এই যুগের থেকে অনেক এগিয়ে যাওয়া।’ নচিকেতা মনে করেন, এখনকার বেশির ভাগ কম্পোজারের মেধা নেই। আর যাদের মিউজিক সেন্স আছে তারা কদর পায় না।
আজকের দিনে পশ্চিমবঙ্গে অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা রাজনীতির আঙিনায় ঝুঁকছেন। সেখানে দলছুট নচিকেতা। বললেন, ‘আমি রাজনীতি করি না। তাহলে আজ আমি মন্ত্রী হতাম। আমি পলিটিক্যাল একটা মানুষ। আমার কথা-গান-জীবনযাত্রায় সেই পলিটিক্স ছায়া ফেলে। আমি রাজনীতি করি না তার কারণ, আমাদের এখানে রাজনীতি একটা পেশা। আর আমার পেশা গান।’
জীবনে দুঃখ, কষ্ট, হাসি, আনন্দ যাই থাকুক না কেন কাউকে কিছুই বলতে চান না নচিকেতা। বললেন, ‘এ জন্য কেউ যদি আমাকে অহংকারী ভাবে, তাহলে বলব আমি অহংকারী। আসলে যন্ত্রণা একটা মানুষকে অহংকারী বানায়। জীবনে এই পর্যন্ত যা কাজ করেছি তা আমার কুড়ি শতাংশ। এখনো বাকি ৮০ শতাংশ।’
তাহলে তো এখনো অনেক কিছুই দেওয়ার বাকি রয়েছে তাঁর, ভক্তদেরও অনেক কিছু পাওয়ার রয়েছে বাংলা গানের জনপ্রিয় এই জীবনমুখী গায়কের কাছ থেকে।