কর্মজীবী নারীদের সুস্বাস্থ্যে ১১ পরামর্শ
পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীরাও এগিয়ে চলছেন সমান তালে। আবার পুরুষের মতো কাজ শেষে ঘরে এসে ল্যাপটপে বা টিভি রিমোট নিয়ে বসে পড়ার ফুরসত নেই তাদের। সকাল সন্ধ্যা কাজ করে আবার ঘরে এসে করছেন ঘরকন্না। হেঁশেলও ঠেলছেন। বাচ্চা সামলাচ্ছেন। এত কাজের চাপে কর্মজীবী নারীর নিজেকে সুস্থ রাখা একটি চ্যালেঞ্জই বটে।
সামাজিক রীতি তো রাতারাতি বদলাবে না। তবু সুস্থ থাকতে হবে এর ভেতরই।
কিছু অভ্যাস করে নিলে অনেক ব্যস্ততার ভেতরও ভালো থাকা যায়। সেগুলো নিয়েই আলাপ করা যাক।
১. ঘুম থেকে উঠুন সকালে
ঘুম থেকে উঠেই যেন হাঁচর পাঁচর করে দৌঁড়ুতে না হয়। এটি মানসিক চাপ তৈরি করে। একটু আগে ভাগে বিছানা ছাড়ুন। দরকারি সাংসারিক কাজগুলো সেরে নিন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
হালকা ব্যায়াম করুন। মুক্ত হাতে ব্যায়াম করুন। অফিসে যাওয়ার আগে ২০ মিনিট এরোবিক্স করতে পারেন। এতে চাঙা থাকবে শরীর- মন। অফিস থেকে ফিরে এসেও ২০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
৩. কাজের ফাঁকে একটু হাঁটাহাঁটি
একটানা বসে কাজ করবেন না। কাজের ফাঁকে একটু হাঁটাহাঁটি করুন, দাঁড়ান। অল্প স্বল্প গল্প করে নিতে পারেন সহকর্মীদের সঙ্গে।
৪. সঙ্গে খাবার রাখুন
দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকবেন না। সঙ্গে করে খাবার নিয়ে যাবেন। সাদা রুটি, বিস্কুট, সবজি, ফল জাতীয় খাবারই এ ক্ষেত্রে ভালো। এতে শরীর ভারী হবে না।
৫. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
কর্মজীবী নারীরা অনেক সময় কাজের চাপে পানি খেতে ভুলে যান। পর্যাপ্ত পানি না পান করলে পানিশূন্যতা হতে পারে। প্রস্রাবে ইনফেকশনের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানির আয়োজন রাখবেন। প্রয়োজনে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।
৬. নিয়মিত বিনোদন
সপ্তাহান্তে ছুটির দিনটি কাজে লাগান। মনের পরিচর্যা করুন। পরিবার নিয়ে ঘুরতে যান নতুন কোনো জায়গায়। সিনেমা দেখুন। মঞ্চ নাটক, গানের অনুষ্ঠানে যান। প্রিয় কারো আড্ডার জায়গায় যেতে পারেন। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করুন। নতুন করে কাজের শক্তি পাবেন। বড় ছুটি পেলে ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়ুন। আজকাল প্যাকেজ ট্যুরের সুবিধা আছে।
৭. শখের চর্চা করুন
কাজটাকেই জীবনের সব কিছু বলে ধরে নেবেন না। শখের চর্চা করুন। কেউ কেউ হয়ত ছাত্রজীবনে গান করতেন। চর্চাটা আবার শুরু করতে পারেন। গীটার বাজানো, পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি, বাগান করা, লেখালেখির চর্চা- যার যেখানে শখ এবং দক্ষতা রয়েছে সেটি করতে পারেন। এই শখের চর্চাটাই আপনাকে বিষণ্ণতা ও ক্লান্তি থেকে দূরে রাখতে পারে।
৮. নিয়মিত ডাক্তার দেখান
কর্মজীবী নারীরা ছোটখাটো শারীরিক সমস্যাকে উপেক্ষা করেন। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে ডাক্তার বাড়িতে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। এই ছোটখাটো স্বাস্থ্য সমস্যাই পরে বড় আকার নিতে পারে। তাই অবহেলা নয়। নিয়মিত ডাক্তার দেখান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের স্ক্রিনিং টেস্ট করুন। খুব বেশি ক্লান্তি, হতাশা, কাজের প্রতি অসন্তুষ্টি মনে হলে মনোবিদের পরামর্শ নেবেন।
৯. সহকর্মীদের সঙ্গে সদ্ভাব রাখুন
সহকর্মীদের সঙ্গে পরচর্চা,পরনিন্দায় অংশ নেবেন না। সম্ভব হলে নিরুৎহিত করবেন। খুব বেশি হতাশার চর্চা করবেন না। নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা একান্ত বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করুন নয়তো মনোবিদের সঙ্গে বসুন। নেতিবাচকতার চর্চা করবেন না।
১০. সুষম খাবারে জোর দিন
অতিরিক্ত ক্যালরি পরিহার করুন। আবার কম খাবেন এমনও নয়। খাবারে বৈচিত্র্য আনুন। ফল ও সবজি যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনাকে অনেকটাই ভালো রাখবে।
১১. ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তুলুন
চাকরিজীবী মায়েদের জন্য এটা খুব দরকার। অফিসের কর্তাদের দায়িত্ব এটি। তারপরও সবার দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন এবং ইতিবাচক চিন্তা এ ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। চেষ্টা করুন অফিসে সেই রকম একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে। কর্মীরা মানসিকভাবে ভারমুক্ত থাকতে পারলে অফিস ভালো চলবে এটা সবাইকেই বুঝতে হবে।
লেখক : রেসিডেন্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়