বৃদ্ধি প্রতিবন্ধকতার কি চিকিৎসা রয়েছে?
একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি যেমন নির্ভর করে জিন ও পরিবেশগত বিষয়ের ওপর, তেমনি নির্ভর করে তার সার্বিক সুস্থতা ও হরমোনের ওঠানামার ওপর। একেক এলাকায় ও একেক পরিবারে উচ্চতার প্রবণতা একেক রকম। এ ছাড়া শৈশবে কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা, যেমন—কিডনি বা ফুসফুসের রোগ, অপুষ্টি, হজমের গোলমাল ইত্যাদি কারণে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি যে হরমোনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, তার মধ্যে থাইরয়ে ও গ্রোথ হরমোন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ হরমোনগুলোর অভাবে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি থমকে যেতে পারে বা ধীর হতে পারে। নানা ধরনের জেনেটিক সমস্যায় মানুষ খাটো হয়, যেমন টার্নার বা ডাউন সিনড্রোম।
বৃদ্ধি প্রতিবন্ধকতা কী কী সমস্যা তৈরি করে
ঠিকমতো বৃদ্ধি না হলে একটি শিশু নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। অনেক সময় এর সঙ্গে যৌবনপ্রাপ্ত না হওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়, যা পরে তার বিবাহ, সন্তান ধারণ বা পারিবারিক জীবনকে ব্যাহত করে। এ ছাড়া খাটো শিশুরা টিজিং ও বুলিংয়ের শিকার হয় বেশি, সমাজে একঘরে হয়ে পড়ে, শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় মেধা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ে। আমাদের দেশে নানা কুসংস্কারের শিকারও হয় এরা।
বৃদ্ধি প্রতিবন্ধকতার কি চিকিৎসা রয়েছে
কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন আবিষ্কৃত হওয়ার আগে বামনাকৃতি শিশুদের চিকিৎসা বিপত্তিকর ছিল। কেননা, তখন মৃতদেহের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নির্যাস সংগ্রহ করা হতো এবং এতে প্রায়ই প্রতিক্রিয়া ও নানা রোগের আশঙ্কা থাকত।
১৯৮৫ সালে এ পদ্ধতি বাতিল হয় এবং বর্তমানে কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন সোমাট্রপিন বা নরডিট্রোপিন দিয়ে সাফল্যের সঙ্গে এর চিকিৎসা করা হচ্ছে। বর্তমানে যে কয়েকটি সমস্যায় গ্রোথ হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হয়, তা হলো—১. বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত শিশু, যার গ্রোথ হরমোন অপর্যাপ্ত; ২. টার্নার সিনড্রোম; ৩. কম ওজন ও ছোট আকার নিয়ে ভূমিষ্ঠ শিশু ও ৪. কিডনি জটিলকায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে যাদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট মাত্রার গ্রোথ হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ছাড়া বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ থাকলে সঠিক কারণটি নির্ণয় করে সে অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তবে দুটি বিষয় মনে রাখবেন—এক. সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও পরামর্শ নিতে হবে, দুই. যত কম বয়সে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।