ব্লাড ক্যানসার কেন হয়?
ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসারে অনেকেই ভোগেন। ব্লাড ক্যানসার হওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো কী?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০০২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. এ বি এম ইউনুস। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ব্লাড ক্যানসারের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো কী? আর এতে কী খাদ্যদ্রব্য ও পরিবেশের প্রভাব রয়েছে?
উত্তর : আসলে প্রথমে একটু বলে নিই ব্লাড ক্যানসার কী। ক্যানসার হলো অনিয়ন্ত্রিত কোষ। এখন একটি কোষ যদি বাড়তে থাকে তখন সমস্যা হয়। মনে করেন, মুখের ঝিল্লি, আমাদের প্রতিনিয়ত খাবারের সঙ্গে যে ঘর্ষণ হয়, তাতে কিছু ঝিল্লি ক্ষয় হয়ে যায়। পরের দিন সকালে ওঠে দেখি, ঝিল্লিগুলো আবার পুনর্গঠন হয়ে গেছে। এখন যদি এমন হয় যে ওই ঝিল্লিগুলো বাড়ার পর থেমে না গিয়ে আরো বাড়তে থাকে, এক সময় দেখা যাবে একগুচ্ছ কোষ সেখানে জমে গেছে। আসলে কোনো টিউমার হলো কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধি যদি ক্যানসারের গুণাবলি সম্পন্ন হয়, যেটা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়, যে জায়গায় সে তৈরি হয়েছিল, সেখানে তৈরি না হয়ে রক্তের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায় এবং বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ভেতরে ঢুকে গিয়ে তার কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। মূলত রক্তের যে শ্বেত কণিকা রয়েছে, সেটি কিন্তু প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে, আবার একটি নির্দিষ্ট সময় পর মরে যাচ্ছে। আবার যখন ইনফেকশন হয় এগুলো বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এটি বাড়ে এবং একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এসে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো এই যে বাড়ার প্রবণতা তার রয়েছে, কোনো একটা সময় দেখা গেল একটা ইনফেকশন হলো, একটি চাপযুক্ত অবস্থা হলো, যখন রক্তের এই শ্বেত কণিকাগুলো বেড়ে গেল, এক বার বাড়ার যে প্রবণতা তৈরি হলো, এখন সে বাড়ছেই। আর থামছে না সে। একেবার অনিয়ন্ত্রণ যখন এসে যায়, যে সে আর কোনো কিছুতেই থামছে না, তাহলে আমাদের রক্তের যে শ্বেতকণিকা চার হাজার থেকে ১১ হাজার রয়েছে, দেখা গেল এটি এক লাখ হয়ে গেছে। দুই দিন পর দেখা গেল সোয়া লাখ বা দেড় লাখ হয়ে গেছে। এই হারে যদি বাড়তে থাকে, তাহলে এগুলো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়াবে। আরেকটি কাজ হলো যেখান থেকে রক্তের এই অবস্থা তৈরি হয়। যখন এই কোষ বাড়বে, তখন তার জন্য অন্য কোষগুলো তৈরির যে জায়গাগুলো ছিল, সেখানে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হবে, অনুচক্রিকা তৈরি হবে। যখন এই শ্বেত কণিকা বেড়ে যাচ্ছে, তখন অন্যদের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে। তখন লোহিত কণিকা তৈরি হচ্ছে না। আর অনুচক্রিকা তৈরি হচ্ছে না। শুধু শ্বেত রক্তকণিকা বাড়ছে। তার রক্তশূন্যতা হয়ে যাচ্ছে। তার প্লেটলেট কাউন্ট কমার জন্য রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যা হচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো যখন এই শ্বেত কণিকা বাড়ে, এগুলো কিন্তু স্বাভাবিক কোষ নয়, অসুস্থ কোষ। এর ভেতরে পরিপক্ব হয় না। অপরিপক্ব কোষগুলো রক্তের ভেতর চলে যায়। এরা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করার আগেই রক্তে চলে আসে। তখন সে সক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। এটা ব্লাড ক্যানসারের সাধারণ একটি বর্ণনা।
এর মানে আমরা কী পেলাম, কোষের বৃদ্ধি। বৃদ্ধিটা অস্বাভাবিক। বাড়ছে তো বাড়ছেই এবং নিয়ন্ত্রণবিহীনভাবে। এই কাজগুলো কীভাবে হলো? এই কাজগুলো হওয়ার পেছনে রয়েছে ডিএনএ। আমাদের শরীরের জিন যেখানে নিয়ন্ত্রিত হয়, এর ভেতরে ক্যানসার তৈরি এবং ক্যানসার নিরোধী দুটো পরস্পরবিরোধী জিন কাজ করে। যখন ক্যানসার তৈরির কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন ক্যানসার নিরোধী জিন একে থামিয়ে দেয়। যখন একজন দুর্বল হয়ে পড়ে, তার এই প্রতিরোধ যখন ভেঙ্গে যাবে, তখন নিরোধী জিন কিন্তু সচল হতে পারছে না। তখন সে ক্যানসারের দিকে যাবে।
এখন এই বিষয়টা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে? এই বিষয়টা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন রেডিয়েশন। সেটা আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন হতে পারে। এক্স-রে থেকে রেডিয়েশন হতে পারে, রেডিওথেরাপি দেওয়ার সময় রেডিয়েশন হতে পারে। বিভিন্নভাবে হতে পারে। বা মনে করুন একজন ইউরেনিয়াম কারখানায় কাজ করে, তার জন্য হতে পারে। এই তেজস্ক্রিয়তা ডিএনএকে ধ্বংস করে দেয়। এরপর হলো ভাইরাস। এই পরিবেশের ভেতর আমাদের যে ভাইরাস রয়েছে, পরিবেশ যত বেশি ক্ষতিকর ভাইরাস থাকবে, তত বেশি ক্ষতিকর ভাইরাস ঘোরাঘুরি করবে। এই ভাইরাসগুলো কোষের ভেতর গিয়ে ওই ডিএনএকে আক্রমণ করবে। ভাইরাসের একটি অংশ ওই ডিএনএ এর ভেতর যোগ করে দেবে।
আরো রয়েছে। যেমন রাসায়নিক পদার্থ। এরপর বিভিন্ন ধরনের খাবার, এরপর জিনগত কিছু বিষয় রয়েছে। একটি পরিবারে তার কিছু বিশেষ জিনগত ত্রুটি রয়েছে। তার বংশ পরম্পরায় এই ক্যানসার চলে আসছে।