খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের সঙ্গে কি ব্লাড ক্যানসারের সম্পর্ক রয়েছে?

খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল থেকে নানা ধরনের অসুখ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এর মধ্যে ব্লাড ক্যানসার একটি। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০০২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. এ বি এম ইউনুস। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ব্লাড ক্যানসারের খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল কীভাবে প্রভাব ফেলে?
উত্তর : রেডিয়েশন, রাসায়নিক পদার্থ, ভাইরাস, জিন- চারটি ফ্যাকক্টরকে বলা হয় ক্যানসার তৈরির জন্য সহায়ক। এই যে ক্যামিক্যাল যে অংশটা, ভাইরাসের অংশটা, পরিবেশ দূষণ হলে এই ভাইরাস বেশি বেশি পাওয়া যায়। এই ভাইরাস দিয়ে সংক্রমণ হয়। আর সহজেই আমরা এই ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হতে পারি। এখন কী কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আমাদের রক্তের ক্যানসার বা অন্যান্য ক্যানসার তৈরি করতে সহায়ক হয়। পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, অ্যারোমাটা ইয়ামাইস, বেনজিন কোম্পাউন্ডস- এই ধরনের কোম্পাউন্ডসগুলো যে যে জিনিসের মধ্যে রয়েছে, সেগুলো থেকে ক্যানসার হয়।
পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যের মধ্যে যেমন ভ্যাসলিন, গাড়িতে যে পেট্রোল দেওয়া হয়- এগুলো থেকে সমস্যা হতে পারে। তারপর আমরা যে জুতা পালিশ করি, কালি দিয়ে, এর যে উৎকট একটি গন্ধ রয়েছে, এটি ভেতরে প্রবেশ করে। যারা জুতা পলিশ করে, তাদের মধ্যে আমি ব্লাড ক্যানসার পেয়েছি। ইনসেকটিসাইট, যেগুলো দিয়ে পোকামাকড় মারা হয় এগুলোতে সমস্যা হতে পারে। এরপর ফার্টিলাইজার, সার- এই যে রাসায়নিক পদার্থগুলো রয়েছে- এগুলোতে সমস্যা হয়। এরপর রঙের প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে, তাদের এই ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
খাবারের ভেতর যে ভেজালগুলো দেওয়া হয়, এগুলোর মধ্যে কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানো হচ্ছে। এক ট্রাক কলা যদি আপনি দেখেন সব এক রঙের, এটা অস্বাভাবিক। তেমনিভাবে টমেটোর যখন দিন আসে, যখন বাজারে সবজিগুলো আসে, প্রথম দিকে খুব বেশি দাম থাকে, তখনো তার পাকার সময় হয়নি। আম বাজারে আসলেও কিন্তু এখন তার পাকার সময় হয়নি। লিচু, বাজারে চলে এসেছে, তবে এখনো পাকার সময় হয়নি। তখন তারা রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে, এভাবে কৃত্রিমভাবে পাকায় এবং একসঙ্গে একলট ক্যামিক্যাল দিয়ে দেয়। এতে তার রং টকটকে হয়। দেখতেও খুব সতেজ লাগে এবং একই রকম পাকা। এটা তো গাছ থেকে পেরে কখনো সম্ভব নয়।
আবার আমরা বাজারে যে মাছগুলো খাচ্ছি, সেগুলোতে প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে। খাবারের মধ্যে এমন একটি প্রিজারভেটিভ দেওয়া রয়েছে যেগুলো মধ্যে বেশিরভাগ যেটা ব্যবহৃত হয়, সেটি হলো ফরমালিন। ফরমালিন সরাসরি শরীরের ডিএনএকে ধ্বংস করে দেয়। প্রোটিনকে ধ্বংস করে দেয়। এভাবে ক্যানসার তৈরি হয়। সবজির ভেতর যে ইনসেকটিসাইটগুলো দেওয়া হয়, এটি সবজির ভেতর থেকে যায়। ভালো করে ধুতেও পারি না বা ধোয়া হয়ও না। ধুলে তারপরে ভেতরে বেশ কিছু বিষয় থেকে যায়। এই যে রাসায়নিক পদার্থগুলো আমাদের খাবারের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে, এটি অল্প মাত্রায় সহনীয় হতে পারে। তবে বেশি মাত্রার এই খাবারগুলো আমরা যদি বারে বা্রে খেতে থাকি, শরীরে গিয়ে এটি একটি সময় মিশে যাবে। তখন কিন্তু ক্যানসার হতে বাধ্য।