কিডনির ৮০ ভাগ অকেজো হলে রোগী চিকিৎসকের কাছে যান

বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা বলেছেন, কিডনির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ অকেজো হওয়ার পর অধিকাংশ রোগী চিকিৎসকের কাছে যান। কিডনির কমপক্ষে ৮০ ভাগ অকেজো হওয়ার শরীরে এ রোগের আলামতগুলো ভেসে উঠে। ৪০ বছর বয়সের পর বছরে কমপক্ষে একবার হলেও কিডনি পরীক্ষার পক্ষে মত দেন বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসকরা।
ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় কিডনির রোগের আলামত ও এ থেকে প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বক্তব্য দেন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম ফখরুল ইসলাম ও অধ্যাপক ডা. মো. ফিরোজ খান। হাসপাতালটির ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় সোহরাব আকন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭০-এর ওপরে দিয়ে পৌঁছেছে। এতে মানুষের নানা ধরনের রোগও ধরা পড়ছে। চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছে। তবে এ রোগীর তুলনায় দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ১৫ জন দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগে আক্রান্ত। ভেজাল ও অনিয়মিত খাদ্য অভ্যাস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ক্রমান্বয়ে কিডনি অকেজো হওয়ার প্রধান কারণ। এ ছাড়া কিডনির পাথর ও প্রস্রাবের রাস্তায় বাধা বা প্রস্রাবের ধীরগতি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। সম্পূর্ণ কিডনি বিকল রোগের সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো কিডনি সংযোজন। ১৯৫৪ সালে মানবদেহে প্রথম কিডনি সংযোজন শুরু হয়। বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে প্রথম কিডনি সংযোজন শুরু করা হয়।
ওই অধ্যাপক বলেন, দেশে বর্তমানে ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক সর্বসাকল্যে রয়েছে ২৫০ জন আর নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসক রয়েছেন ১৭০ জন। অথচ কিডনির এ উভয় বিভাগে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই হাজার চিকিৎসক থাকলে রোগীরা প্রর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পেতেন। কিডনি রোগ সম্পর্কে প্রর্যাপ্ত ধারণা ও সচেতনতার অভাবেই রোগীরা একেবারে শেষ পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন বলেও মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ফিরোজ খান বলেন, বাংলাদেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম। ফলে একজন চিকিৎসক ইচ্ছা করলেও রোগীকে অতিরিক্ত সময় দিতে পারে না। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীকে কাঙ্ক্ষিত সময়ের চেয়েও বেশী সময় দিচ্ছেন।
বারাকাহ কিডনি হাসপাতালের কর্মসূচি
মহান স্বাধীনতা দিবস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এম ফখরূল ইসলাম জানান, গত ৮ মার্চ থেকে শুরু এ কর্মসূচি ৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এই একমাস প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হবে।
ক্যাম্পে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত রোগীদের কিডনি সম্পর্কিত সিরাম ক্রিটিনিন, আরবিএস, ইউরিন আর/ই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফ্রি করা, ডেন্টাল চেক-আপ ফ্রি করা ও বিভিন্ন অপারেশনে ৩০ শতাংশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। ১০ জন হতদরিদ্র গরীব রোগীকে ফ্রি অপারেশন করা হবে। কিডনি রোগ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ লাখ লিফলেট বিতরণ, ফেস্টুন ও ব্যানার প্রদর্শন করা হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাত্র ৮০০ টাকায় প্যাকেজে হেলথ চেক-আপ (সিবিসি, সিরাম ক্রিটিনিন, আরবিএস, ইউরিন আর/ই ও আল্ট্রাসনোগ্রাম) করারও সুযোগ দেওয়া হবে।