অনিয়মিত ঋতুস্রাবে সন্তান ধারণে সমস্যা?
অনেক সময় বয়ঃসন্ধিকালে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়। আর এতে অনেকে ভয় পেয়ে যায় সন্তান ধারণে অসুবিধা হবে ভেবে। তবে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হলে সন্তান ধারণে তেমন অসুবিধা হয় না, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৩১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. কামরুন নেসা আহমেদ। বর্তমানে তিনি গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজে অবসটেট্রিক ও গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। এ সময় ঋতুস্রাবের বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সাধারণত কোন কোন সমস্যা নিয়ে এ সময় মেয়েরা আপনাদের কাছে আসছে?
উত্তর : যেসব সমস্যা বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েরা নিয়ে আসে, এর মধ্যে প্রথম হলো অনিয়মিত ঋতুস্রাব। সেটা নিয়ে তারা চিন্তিত থাকে। তারা শুনে আসে যে এ কারণে পরে বিয়ে হলে তাদের সন্তান হবে না। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েকটা বছর এমন হতেই পারে। ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে। এখন একটু আগেভাগে ঋতুস্রাব হয়ে যায়।
দেখা যায় ১০/১১ বছর বয়সেও অনেক সময় ঋতুস্রাব হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো রোগ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে একটু আগেভাগে হয়ে যায়। সেটা নিয়েও চিন্তিত থাকে তারা। হয়তো চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মা নিয়ে আসে। মাও চিন্তিত। মা বলে, ‘আমার তো এত আগে শুরু হয়নি। তাহলে আমার মেয়ের কেন হচ্ছে?’ তখন সেই মেয়েটিকে বুঝিয়ে বলতে হয়, ‘এটি স্বাভাবিক। তুমি ভয় পেও না।’ আমি কথা বলি। ওদের বুঝিয়ে বলি। ওদের বলি, তাদের এ সময় এবিউজের একটি আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।
বলি, ‘তোমরা ভালো স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ এটি বুঝে নিও। তুমি মায়ের সঙ্গে একটু অন্তরঙ্গ হও।’ এ কথা যখন মা-মেয়ের সামনে বলা হয়, তখন মাও একটু বোঝে । আমি যখন বলে দিই, তখন তাদের মধ্যেও ব্যবধান দূর হয়। নিজেরা তখন কথা বলে। এটাও বুঝল যে এই জিনিসটি নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে।
আর প্রধান সমস্যা নিয়ে যেটা আসে, সেটি হলো ঋতুস্রাব নিয়মিত হচ্ছে না। প্রথমে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে। আমাদের হাইপোথ্যালামো এক্সিস যেটা, সেটা শুরুতে, বয়ঃসন্ধিকালে খুব ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় না। এর জন্য একটু অনিয়মিত হতে পারে। আরেকটি হয় ওজন বৃদ্ধি। দেখা যায় মেয়েরা বাসায় পড়ছে, খাচ্ছে আর কেবল কোচিংয়ে যাচ্ছে। খাওয়ার মধ্যে হলো ফাস্টফুড। হাঁটাচলা, খেলাধুলা তো করছেই না। জায়গাও নেই। এ কারণে একটু স্থূল হয়ে যাচ্ছে। এটিও অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ হতে পারে। আরেকটি বিষয় দেখি, সেটি হলো, থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে কি না।
আমাদের কাছে আসলে হাইপোথাইরয়েড নেই, এটুকু নিশ্চিত হওয়া চেষ্টা করি। একটা আলট্রাসনো না করলে রোগীরা খুশি হয় না। দেখা যায়, প্রয়োজন না হলেও একটু আলট্রাসনো করে দেখি, তাদের সন্তুষ্টির জন্য। বুঝিয়ে বলি যে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা ঠিক হয়ে যাবে। আর এর জন্য পরে সন্তান হবে না—এ রকম কোনো কথা নেই। বুঝিয়ে বললেই হয়ে যায় অনেকটা।