নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের কাজ কী?
আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র হাসপাতালের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। সাধারণত রোগী খুব জটিল অবস্থায় গেলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৩৩তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সিনহা আবুল মনসুর। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের নাসাউ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে ফ্যাকাল্টি হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আইসিইউ বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বলতে কী বোঝানো হয়?
উত্তর : যদি আইসিইউ নামকে আমি ভাগ করে দেখাই, তাহলে হলো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট। সোজা বাংলায় দাঁড়াবে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। এই নামটি দিয়ে বোঝা যাবে আমরা একজন রোগীকে রেখে তার পরিচর্যা করব খুব নিবিড়ভাবে।
এই যে আমরা নিবিড় কথাটা বলছি, এর মাঝে বোঝা যায় রোগীকে আমরা কতটা কী করব। এই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া, রোগীর ফুসফুস, কিডনি যন্ত্র, রোগীর মস্তিষ্ক, রোগীর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বুঝব এই রোগীর কী হয়েছে,বা সম্ভাব্য কী হতে পারে, সেই অনুযায়ী আমরা চিকিৎসাটা দেব।
প্রশ্ন : কোন রোগী নিবিড় পর্যবেক্ষণে যাওয়ার মতো, এটি নির্বাচন করেন কীভাবে?
উত্তর : এখানে কিছু ক্রাইটেরিয়া রয়েছে। আপনি দেখবেন হাসপাতালের ফ্লোর রয়েছে, পোস্ট ইনটেনসিভ কেয়ার রয়েছে, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে- এগুলো রোগীর লেভেল অনুসারে ভাগ করা হয়।
একটি রোগী তার সমস্যা হয়তো অত জটিল নয়, তিনি থাকবেন নিয়মিত ফ্লোরে। তার সমস্যাটা মোটামুটি জটিল, তবে মারাত্মক জটিল নয়, তিনি থাকবেন পোস্ট ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। আবার একটি রোগী তার সমস্যাটা খুবই জটিল, তিনি চলে যাবেন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।
এই যে জটিল বিষয়টি, এটি আমরা কীভাবে নির্ধারণ করি? আমি আরেকটি উদাহরণ দিয়ে বলি, কোন রোগীগুলো যাবে। মনে করেন, একজন রোগীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে, প্রদাহ হয়েছে, মস্তিষ্কের টিউমার হয়েছে, সেখান থেকে জটিলতা হয়েছে, স্ট্রোক হয়েছে, উচ্চ রক্তচাপজনিত স্ট্রোক হয়েছে, জটিলতা হয়েছে, ওই রোগীটি হয়তো অচেতন হয়ে গেছে, ওই রোগীটা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চলে যাবে। একটি রোগীর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ঠিকমতো যাচ্ছে না, ওই রোগী চলে যাবে ইনটেনসিভ কেয়ারে।
রোগীর হয়তো ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে, সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীরে। রোগীকে আমরা ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা করতে পারছি না। ওই রোগী চলে যাবে আইসিইউতে। রোগীর কিডনিতে সমস্যা হয়েছে, রোগীকে ডায়ালাইসিসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে বা অন্যান্য চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যেটা আমরা ফ্লোরে রেখে করতে পারছি না। ওই রোগীগুলো চলে যাবে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।
প্রশ্ন : আইসিইউর সঙ্গে লাইফসাপোর্টের সম্পর্ক কী?
উত্তর : যখন একটি রোগী শ্বাস নিতে পারে না তখন তাকে সাধারণত আইসিইউতে রেখে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
এটি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের জন্য হতে পারে, এটা হার্টের কারণে হতে পারে, কিডনি যন্ত্র ফেইলিউরের জন্য হতে পারে, সংক্রমণের জন্য হতে পারে, দেখা গেল উনি ঠিকমতো শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছেন না। আমাদের প্রথম কাজ হলো শ্বাস প্রশ্বাসকে নিশ্চিত করা। শ্বাস প্রশ্বাসকে আমরা কৃত্রিমভাবে নিশ্চিত করে কিছু সময় বের করি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করার। আমরা বের করার চেষ্টা করি, রোগীর কী হয়েছে। বের করার চেষ্টা করি, এটা কি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের জন্য হয়েছে, না কি হার্টের কারণে হয়েছে, না কি ফুসফুসের সংক্রমণ বা সারা শরীরে সংক্রমণের কারণের জন্য হয়েছে, বা কিডনি ফেইলিউরের কারণে হয়েছে। যখন আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বের করি যে রোগীর কী হয়েছে, আমরা সেই অনুসারে চিকিৎসা দেই।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগের চিকিৎসা রয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় চিকিৎসা রয়েছে, তবে বেশি দেরি হয়ে গেছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেই। সেই ক্ষেত্রে আমাদের হয়তো রূঢ় বাস্তবতা মেনে নিতে হয়।
প্রশ্ন : লাইফ সাপোর্টে নিলে বা আইসিইউতে নিলে রোগীর আত্মীয় স্বজনরা অনেক সময় মনে করেন রোগীকে আর ফিরে পাব না। তখন তাদের কীভাবে আশ্বস্ত করেন?
উত্তর : দর্শকদের জন্য বলতে চাই, একজন রোগী আইসিইউতে যাচ্ছে, এতে ভয় ভীতির কারণ নেই। আইসিইউতে যাওয়ার মানে হলো রোগী আবারও চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। লাইফসাপোর্টে যাওয়া মানে রোগী মরে যাবে বা ফিরে আসবে না, এটি নয়। রোগীকে ওই সময় লাইফসাপোর্টে রেখে আমরা চেষ্টা করছি, তার কারণগুলো বের করার।
যদি আমরা কারণ বের করতে পারি, সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে পারি রোগী কিন্তু ফিরে আসবে। রোগী ফিরে আসবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। এ রকম উদাহারণ অনেক রয়েছে।
আমরা যেমন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা করি, আইসিইউতে রোগী আসছে, যাচ্ছে। আরো অনেক জটিল ধরনের রোগী থাকে আইসিইউতে। ওখানে রোড ট্রাফিক একসিডেন্টে খুব মারাত্মক, মারাত্মক রোগী আসে। সেগুলোকে আমরা বলি ট্রমা আইসিইউ। ট্রমা আইসিউর রোগীগুলো খুব অসুস্থ।
প্রশ্ন : আইসিইউর ভেতরে যারা কাজ করছে, তাদের মধ্যে কারা কারা রয়েছে?
উত্তর : আইসিইউ সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি হলো মেডিকেল আইসিইউ, আরেকটি হলো সার্জিক্যাল আইসিউ। মেডিকেল আইসিইউ হলো যারা মেডিকেল সম্পর্কিত রোগ শোক নিয়ে ভর্তি হয়। ওখানে মেডিকেল সম্পর্কিত চিকিৎসকরা বেশি থাকেন। মেডিকেল আইসিইউর প্রধান থাকেন, একজন পালমোনারোলজিস্ট, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক থাকেন, তাদের অন্যান্য চিকিৎসকরা সাহায্য করে। যদি সেখানে হার্টের রোগী থাকেন, ওখানে কার্ডিওলজিস্টরা যুক্ত থাকেন, সেখানে যদি স্ট্রোকের রোগী থাকেন, হেমোরেজের রোগী থাকেন, নিউরোসার্জনরা যুক্ত থাকেন, যদি মস্তিষ্কের স্ট্রোকের রোগী থাকেন, হেমোরেজের রোগী থাকেন, ওখানে নিউরোসার্জনরা যুক্ত থাকেন। নিউরোলজস্টিরা যুক্ত থাকেন। সাধারণত দেখা যায় মেডিকেল আইসিইউর প্রধান হলেন একজন পালমোনারোলজিস্ট। আবার সার্জিক্যাল আইসিইউতে যখন একজন রোগী আসবে, এই রোগীর অস্ত্রোপচার হয়ে গেছে, তবে সে এখনও আশঙ্কাজনক, তখন পোস্ট অপারিটেভে কিছু ক্লোজ মনিটরিং কেয়ার লাগবে। ওই রোগী আইসিইউতে থাকবে। পোস্ট অপারিটেভে কিছুক্ষণ থাকবে, এই সময় তার জ্ঞান ফিরতেও পারে বা নাও ফিরতে পারে। আমরা হয়তো আইসিইউতে নিয়ে এলাম। তখন আমরা সীদ্ধান্ত নেব আইসিইউতে নেওয়া লাগবে কি না। যদি প্রয়োজন হয় রোগী চলে যাবে আইসিইউতে অস্ত্রোপচারের পরে। সেখানে থেকে রোগীর বাকি বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনা হবে। আস্তে আস্তে রোগী সেখান থেকে পোস্ট আইসিইতে যাবে, আইসিউ থেকে এক সময় নিয়মিত ফ্লোরে যাবে। তবে সার্জিক্যাল আইসিইউতে দেখা যায় সার্জন বা এনেসথেসিওলজিস্টরা চালায়। আর যেকোনো আইসিউ সেটিংয়ে ব্রাঞ্চ অব ডাক্তার থাকেন।