যক্ষ্মায় এখনো মৃত্যু হচ্ছে কেন?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/03/24/photo-1521883570.jpg)
বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য,‘নেতৃত্ব চাই যক্ষ্মা নির্মূলে, ইতিহাস গড়ি সবাই মিলে’। বাংলাদেশে প্রতি বছরে এক লাখে ৪০ জন রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার কমানোর বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৩৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। বর্তমানে তিনি বারডেম জেনারেল হাসপাতালে বক্ষ্যব্যাধি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এখনো, এই আধুনিক যুগে, যেখানে চিকিৎসা রয়েছে, সেখানেও লাখে ৪০ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। মাত্র পাঁচজনকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো যাচ্ছে। এত মানুষ মারা যাচ্ছে কেন?
উত্তর : এর অনেক কারণ রয়েছে। আসলে যক্ষ্মা কাদের বেশি হয়? একটি হলো, অনেক জনবসতিপূর্ণ জায়গায় যারা থাকে তাদের যক্ষ্মা হয়। যদি পুষ্টি কম হয়, যদি সিগারেট কেউ খায়, ফুসফুসে কোনো রোগ থাকে, তাহলে কিন্তু যক্ষ্মা হতে পারে। যক্ষ্মা ছড়ায় কিন্তু বায়ুর মাধ্যমে। এটি বায়ুবাহিত। আপনি জানেন যে এটি হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। আমাদের দেশে আপনি অনেক জায়গায় যান, বাজারে যান, বাসে ওঠেন, লঞ্চে যান, স্টেশনে যান- তো অনেক জায়গায় যান। আমরা এসব জায়গায় হাঁচি-কাশি দেই। তাদের মধ্যে কারো যক্ষ্মা রয়েছে কি না আমরা জানি না। হাঁচি-কাশি দেওয়ার পর বাতাসে জীবাণুটা ঘুরে বেড়ায়। এই বাতাস যদি কেউ আবার শ্বাসনালিতে নেয়, তার হতে পারে। এগুলোই আসলে কারণ আমাদের দেশের যক্ষ্মা বাড়ার। আবার একই ঘরের মধ্যে অনেক সময় ছয়জনও থাকছি আমরা। সেগুলোও কারণ আমাদের যক্ষ্মা হওয়ার।
আরেকটি বিষয় হলো কাশি হলে অনেকে সঠিক সময় কফ পরীক্ষা করাই না বা চিকিৎসকের কাছে যাই না- এটি একটি কারণ হতে পারে। এই জন্য যখনই কোনো লক্ষণ দেখা যাবে তখনই কফ পরীক্ষা করা উচিত। এটি কিন্তু বিনা পয়সায় করা হয় দেশের সব জায়গায়। এটি উপজেলা, জেলা এবং ইউনিউন পর্যায়েও রয়েছে। ঢাকা শহরের প্রতি ওয়ার্ডে, প্রতি হাসপাতালে সব জায়গায় রয়েছে। এখন বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা করা, এক্স-রে করা, এমনকি বিনামূল্যে চিকিৎসাও করা হয়।
প্রশ্ন : যক্ষ্মা হলে এখনো মৃত্যু হচ্ছে, এর পেছনে কারণ কী?
উত্তর : আমরা যদি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে পারি, ভালো হয়ে যাব। তবে অনেকে যেটি করে, ওষুধ খেল, দুই মাস পরে মনে হচ্ছে কোনো উপসর্গ নেই, জ্বর নেই, কাশি নেই, ওজন ভালো হচ্ছে- মনে করছে ‘আমি সুস্থ রয়েছি। আমি কেন ওষুধ খাব?’ তাই অনেকে নিজে থেকে ওষুধটা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করার পর আবার তার যক্ষ্মা হয়। যক্ষ্মা হলে অনেক সময় এই ওষুধগুলো কার্যকর থাকে না। তার ফুসফুসে আরো জটিলতা বেড়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসাটা সঠিকভাবে না করার জন্য সমস্যা হয়। অথবা রোগটা ধরাই পড়ে অনেক দেরিতে। যখন তার ফুসফুস অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। সেই ক্ষেত্রে এগুলো বেশি হয়। এগুলোর যদি আমি সময়মতো সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে পারি, তাহলে এটা হওয়ার কথা নয়।
প্রশ্ন : এখন আমরা অনেক ক্ষেত্রে শুনছি মাল্টি ড্রাগ টিউবার কলোসিস, আবার অনেক আছে এসডিআর ( কোনো ওষুধই কাজ করছে না)- সেই ক্ষেত্রে এসব হওয়ার কারণে কী মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে?
উত্তর : আমরা এটাই জোর দিচ্ছি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করতে হবে। কারণ, আমি যদি সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করতে না পারি, একজন যক্ষ্মা রোগীর যদি চিকিৎসা না করান, সেটি সমাজের ১০ জনের ভেতর ছড়াবে। তাহলে তার চিকিৎসা করলেই এটি প্রতিরোধ করতে পারব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা, রোগ নির্ণয় করা, চিকিৎসা শুরু করা, পূর্ণ মাত্রায় ওষুধ সেবন করা- এগুলো যক্ষ্মা নির্মূলে কাজ করে।