হাড় ক্ষয় কাদের বেশি হয়?
অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় প্রচলিত একটি সমস্যা। সাধারণত প্রবীণ বয়সে এই সমস্যা বেশি হয়। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৪৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. ইউসুফ আলী। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অস্টিওপরোসিস কী? কোন বয়সে কাদের বেলায় এটি বেশি হয়?
উত্তর : অস্টিওপরোসিস এই শব্দের মধ্যে ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞাটা রয়েছে। অস্টিও মানে হলো হাড়। পরোসিস শব্দটা এসেছে পোরাস থেকে। ছিদ্র হয়ে যাওয়া। তার মানে হলো হাড় ছিদ্র হওয়া। যদি গ্রামের ভাষায় বলি, ঝাঁঝড়ে যে রকম ছিদ্র থাকে, এরকম যদি হাড়ে ছিদ্র হয়ে যায় একে অস্টিওপরোসিস বলে।
হাড়ের দুটো অংশ থাকে। একটি হলো বাইরের করটেক্স। ভেতরে থাকে স্পঞ্জিবল। এই দুটো হাড়ের প্রধান শক্তি জোগায় করটেক্স। এটি যখন আস্তে আস্তে ছিদ্র হয়ে যায়, তখনই আমরা বলি যে অস্টিওপরোসিস হয়েছে। আমি যদি একটু পরিসংখ্যান দিতে যাই, তাহলে বলতে হবে, ষাঠ বছরের পর প্রতি পাঁচজন পুরুষের মধ্যে একজন অস্টিওপরোসিসে ভোগে। প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন অস্টিওপরোসিসে ভোগে। এর মানে নারীদের এটি হওয়ার প্রবণতাটা বেশি।
আর সারা বিশ্বের পরিসংখ্যান হলো প্রতি তিন সেকেন্ডে একটি করে ফ্র্যাকচার হচ্ছে। এটি অস্টিওপরোসিসের কারণে। মানে হাড় নরম হয়ে যাওয়ার কারণে এই ভাঙাটা হচ্ছে।
আমাদের হাড়ের ভেতর যে প্রাকৃতিক পরিবর্তনগুলো হয় এর দুটো কারণ রয়েছে। একটি হলো অস্টিওব্লাস্ট ও অস্টিওক্লাস্ট। মানে প্রতিনিয়ত হাড় তৈরি হচ্ছে এবং ক্ষয় হচ্ছে। যখনই ক্ষয়ের পরিমাণ বেশি হয়, তৈরির পরিমাণ কম হয় তখনই অস্টিওপরোসিস হয়। অস্টিওব্লাডস্টের কাজ হলো হাড় তৈরি করা। আর অস্টিওক্লাস্টের কাজ হলো হাড় ক্ষয় করা। ৩০ বা ৪০ বছর পর্যন্ত হাড় তৈরি হতে থাকে।
শুরুর দিকে উৎপাদন বেশি ব্যয় কম। তবে পরে উৎপাদন বেশি, ব্যয় কম হয়।
আমাদের এটি উৎপাদন করার সময়, সঞ্চয় করার সময় আমি যদি বেশি সঞ্চয় করে নিতে পারি, তাহলে আমার ক্ষয় হলেও কিছুটা সঞ্চয় থেকে যাবে।
আর আমার যদি সঞ্চয়ই কম হয়, ক্ষয় যাই হোক, বেশি পরিমাণে রয়ে গেল। তখন আর কিছু থাকে না। তাই অস্টিওপরোসিসকে প্রতিরোধ করার জন্য যেই পরিমাণ বোন মাস থাকার কথা সেই পরিমাণ তৈরি করে নিতে হবে।
এই অস্টিওক্লাস্টির জন্য দুর্বল হয়ে যায়। একে বলা হয় নিরব ঘাতক। আপনি বাইরে থেকে একজন ব্যক্তিকে দেখলে বুঝবেন না। মনে হবে তার তো সবই ঠিক রয়েছে। খুব দেরিতে এক্সরেতে বোঝা যাবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যাবে না। তার ডেনসিটি বা হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। যতটুকু মিনারেল থাকার জন্য, ভিটামিন ডি থাকার কথা, ক্যালসিয়াম থাকার কথা এগুলোর পরিমাণ কমে যায়। তখন হাড়টা নরম হয়ে যায়।
আরো ভালো যদি উদাহরণ দিই, মৌচাকের বাসার সঙ্গে তুলনা করতে পারি। মৌচাকের বাসা বাইরে থেকে খুব সুন্দর দেখা যায়, যখনই আপনি আঙ্গুল দিয়ে একটু চাপ দিবেন, তখনই আঙ্গুল ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে, গলে যাচ্ছে। ঠিক এই রকম হয়ে যায় আপনার হাড়গুলো।