কেমন হবে রাজ্জাকের ফেরা?
চার বছর জাতীয় দল থেকে লম্বা বিরতি। আবার ফিরতে পারবেন, সেটা আবদুর রাজ্জাক কি নিজেও ভেবেছিলেন? অভাবনীয় সেই ঘটনাটিই অবশ্য ঘটে গেছে। দীর্ঘ চার বছর পর আবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম সফল এই বাঁহাতি স্পিনার।
ক্যারিয়ারের শেষমুহূর্তে এই ডাকটা অবশ্য কারো দয়ায় পাননি রাজ্জাক। ফিরে এসেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গড়েছেন অনন্য কীর্তি। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে গড়েছেন ৫০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক ফরম্যাট এবং ঘরোয়া লিগ আলাদা প্ল্যাটফর্ম, সেই কথাটাও ভুলে যায় না ক্রিকেট অঙ্গন। রাজ্জাকের মতো ঘরোয়া লিগে ভালো খেলে আবারও জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন একসময়ের জাতীয় দলের অলরাউন্ডার খন্দকার মোশাররফ হোসেন রুবেল। কিন্তু ঘরোয়া লিগের সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি। ফলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবার জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েন তিনি।
রাজ্জাক কি এখন নতুন গল্প লিখতে পারবেন নাকি মোশাররফের মতো তিনিও পড়বেন ব্যর্থতার বৃত্তে? একটা শঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। কারণ, দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই এই স্পিনারের।
আপাতত অবশ্য এত কিছু ভাবছেন না রাজ্জাক নিজে। তিনি এখনো দলে ডাক পাওয়ার ব্যাপারটি নিয়েই অভিভূত। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সজীব ভাই (কাওসার আজম) আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আমার টিকেট কাটা হয়ে গেছে। তবে তিনি প্রথমেই আমাকে অভিনন্দন জানান। আমি জানতে চাইলাম, ৫০০ উইকেট পাওয়ার জন্য কি না। তিনি বললেন, বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে ডাক পাওয়ার জন্য। আমি নান্নু ভাইয়ের (মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, প্রধান নির্বাচক) থেকে ফোনকল পেয়েছি। তিনি আমাকে নিশ্চিত করেছেন। এটা অন্য সবকিছুর মতো সাধারণ কোনো ব্যাপার নয়।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দলে ডাক পেলেও প্রথম একাদশে রাজ্জাকের জায়গা হবে কি না, তা অবশ্য এখনো নিশ্চিত না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে সাদা পোশাকে মাঠে নামতে দেখা যাবে এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও দিয়েছেন তেমনই ইঙ্গিত, ‘হঠাৎ করেই রাজ্জাককে দলে ডাকা হয়নি, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা দেশে মাটিতে স্পিননির্ভর হতে চাইছি। রাজ্জাককে ডাকা হয়েছে কারণ, আমরা অভিজ্ঞ সাকিবকে এই ম্যাচে পাচ্ছি না, অন্যদিকে অভিজ্ঞতায় রাজ্জাক এগিয়ে। তা ছাড়া সে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলেছে, তাই আমাদের মনে হয়েছে তাকে স্কোয়াডে রাখা উচিত।’
দলে ফিরে দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘অনেক তরুণ ক্রিকেটারও মনে করেন, তাঁরা দলে জায়গা পাবেন না। কিন্তু একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করলে একসময় দলেরই তোমাকে প্রয়োজন হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অপেক্ষা করাটা সত্যিই কষ্টকর ছিল। আমার মনে হয়, ৯৫ ভাগ মানুষ মনে করেছে আমি আর ফিরতে পারব না। কিন্তু আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, আমি ডাক পাব।’
আগামীকাল টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ফরম্যাট বদলে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের বদলা নেওয়ার চেষ্টাই হয়তো করবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এটার পাশাপাশি অন্য আরেকটি লড়াইও চালাতে হবে রাজ্জাককে। দলে জায়গাটা টিকিয়ে রাখার লড়াই।