সাগরিকাতেই জবাবটা দিলেন মুমিনুল
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/02/04/photo-1517743386.jpg)
জবাবটা দেওয়া যেত এই চট্টগ্রামেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গেল বছর সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অবশ্য ব্যাটিংয়েই নামতে হয়েছিল আট নম্বরে। চন্ডিকা হাথুরুসিংয়ের কাছে বড্ড ‘অবহেলিত’ সেই মুমিনুল ফিরতি সুযোগ হিসেবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামকেই বেছে নিলেন জবাব দেওয়ার জন্য। মুখে দেননি অবশ্য সে জবাব। হাতের ব্যাটকে সঙ্গী বানিয়ে দুই ইনিংসে জোড়া শতক হাঁকিয়েই ‘সৌরভ’ সুরভিত করেছেন সাগরিকার মাঠ।
দ্বিতীয় ইনিংসে শতকের কাছাকাছি থাকা মুমিনুল হকের ব্যাটে একটা করে রান হয়েছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে মাঠের দর্শক। বাংলাদেশের খেলা দেখতে যতটা না তার চেয়ে বেশি মুমিনুল হকের ব্যাটিংটা দেখার জন্য। আর ম্যাচটা শেষে প্রতিপক্ষ আর সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সাথে ম্যাচ সেরা মুমিনুলের ‘করমর্দনটার’ দিকেও যে ছিল চাঁটগার মাঠের অগণিত চোখ। কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই প্রাক্তন এই গুরুর মুমিনুলে ছিল বড্ড ‘অ্যালার্জি’!
মুমিনুলকে নিয়ে হাথুরুসিংহের অভিযোগের শুরুটা সেই শুরু থেকেই। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নিয়মিত চারে ব্যাট করা মুমিনুলকে বলেছিলেন ‘শর্ট বল খেলতে অপারগ’। প্রধান কোচের এমন বক্তব্য অবাক করে দিয়েছিল সবাইকে। অথচ শর্ট বলটা বেশ ভালোই সামলাতে পারেন দেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান এমনটাই জানত সবাই।
ইদানীং ওয়ান ডাউনে ব্যাট করা মুমিনুলের প্রিয় ব্যাটিং পজিশনটাও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল হাথুরুর যুগটাতেই। চার নম্বরে দাপুটে ব্যাটিংয়ে যে গড় ছিল ৬২.৬৪। সেখানে গড়টা চল্লিশের আশপাশে নেমে আসে। আর অসিদের বিপক্ষে তো নামতে হয়েছিল আটেই।
হাথুরুসিংহের চার বছরের সময়টাতে ওয়ানডের রঙিন পোশাক পরা তো দূরের কথা যেতে পারেননি আশপাশেও। তবুও ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমা নিয়েই খেলে যাচ্ছিলেন মুমিনুল। সেটাও অবশ্য করতে পারেননি শান্তিতে। বারবার এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টায় হাথুরুসিংহে ছিলেন প্রতিজ্ঞ। শততম টেস্টে কলম্বোর মাঠে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে বাদ পড়েছিলেন এই মুমিনুলও।
গত বছর আগস্টে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া দল পা রেখেছিল বাংলাদেশের মাটিতে। কে জানত সেই সিরিজের দলটা নিয়ে বিতর্কের ঝড়ে কাঁপবে মিরপুরের সংবাদ সম্মেলন কক্ষ! কোচের নির্দেশে মাহমুদউল্লাহ আর মুমিনুলকে ছেঁটে ফেলা হয় টেস্টের স্কোয়াড থেকে।
বর্তমান টেস্ট কাপ্তান মাহমুদউল্লাহর পক্ষে অবশ্য কথা বলতে দেয়নি তাঁর পারফরম্যান্সই। কিন্তু মুমিনুল? বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গড়ের মালিকের দলে না থাকাটা সেদিন নাড়া দিয়েছিল গণমাধ্যমকে। প্রশ্নের পর প্রশ্নের উত্তর দিতে থতমতো খেয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুসহ কোচ হাথুরুসিংহও। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষমেশ স্কোয়াডে থাকা মোসাদ্দেককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল মুমিনুলকে। অবশ্য জায়গা দেওয়া হয়নি মিরপুরের জয় পাওয়া টেস্টের দলে।
এবার যখন লঙ্কান দল বাংলাদেশ এলো টেস্ট খেলতে, সেই হাথুরুসিংহে তাদের সঙ্গেই এসেছেন কোচ হিসেবে। হাথুরুকে ভুলে যেতে পারেন অনেকেই। কিন্তু যিনি আসার আগে মুমিনুলের গড় ছিল ৭৫.৫০, আসার পরে সেটা যখন নেমে যায় অর্ধেকে তখন মুমিনুল কীভাবে ভোলেন সাবেক ‘গুরু’কে।
নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেও অতিরিক্ত কোনো উদযাপন দেখা যায়নি যে ছেলেটার মধ্যে। তিনিই কি না এবার ছাড়লেন খোলস! আবেগের মায়াজালে খুব বেশি আটকা না পড়া সেই মুমিনুলই প্রথম ইনিংসের শতকটা পেয়েই করেছিলেন আগ্রাসী উল্লাস। যেন কিছু একটার জবাব দিলেন, নিজের প্যাডে ব্যাট দিয়ে আঘাত করে যেন অনেকদিনের জমা থাকা অভিমানগুলোকে উগরে দিলেন সাগরিকার বুকে।
দ্বিতীয় ইনিংসের শতকটায় আবার ফেরত এসেছেন নিজের ঢঙে। রেকর্ড গড়েও উচ্ছ্বাসটা দেখা যায়নি সেই আগের মতোই। আগের রাস্তাটাতেই আবার ফিরে আসার ইঙ্গিতই ছিল বোধহয়। এবার আবার পালা ক্যারিয়ারটা রেকর্ডে মোড়ানোর। বোধহয় পাঁচফুটি শরীরটা নিয়ে আরেকবার শুরু হলো মুমিনুলের আকাশ ছোঁয়ার মিশন।