কেন এই দুর্দশা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে
দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার আগেই আলোচনা ছিল- কেমন হবে মিরপুরের উইকেট? শক্তির জায়গা ‘স্পিন’কে প্রাধান্য দিয়ে উইকেট তৈরি করা হয়েছে পুরোপুরি স্পিন-বান্ধব। সেই উইকেটের ফায়দা কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম অল্প রানেই বেঁধে ফেলতে পেরেছিল। কিন্তু নিজেদের ব্যাটিংয়ের বেলায় বাংলাদেশও থমকে গেল শেরেবাংলার উইকেটে।
দুই দিনে ঢাকা টেস্টে উইকেট পড়েছে মোট ২৮টি। যার মধ্যে স্পিনাররাই নিয়েছেন ১৮ উইকেট। স্পিন উইকেটে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আপাতত সফল। তবে নিজেরাও সেই ফাঁদেই পড়েছে। পেসার সুরাঙ্গা লাকমলও কম যাননি। দুর্দান্ত লাইন-লেংথ বজায় রেখে ডানহাতি পেসারের ঝুলিতে গেছে তিন উইকেট।
কিন্তু অমনটা হওয়ার কথা তো ছিলনা। মিরপুরের উইকেট তো সাব্বির-মুশফিকরা চেনেন খুব ভালো করেই। শ্রীলঙ্কানরা যেখানে দুইশোর উপর রান করেছে প্রথম ইনিংসে। পরিচিত উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং তো তাহলে আরো ভালো হওয়ার কথা ছিল। অথচ স্বাগতিকরা নিজেদের শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৩ রানে।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অনেকেই উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন। আগের টেস্টেই জোড়া শতক হাঁকানো মুমিনুল ফিরেছেন দৃষ্টিকটু এক রানআউটে। তামিম ইকবাল ড্রাইভ করবেন কি করবেন না, সেই চিন্তা করতে করতেই লাকমলের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাজঘরে।
মুশফিকুর রহিম যখন উইকেটে বাংলাদেশের রান তখন মাত্র ৪, উইকেট নেই দুটি। ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকেই এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে কেমন যেন একটু নড়বড়ে দেখা গেছে। টানা তিনবার বল ছেড়েছেন। প্রথম দুবার বেঁচে গেলেও তৃতীয়বারে অফ স্টাম্পের বল ছেড়ে দিয়ে হয়েছেন বোল্ড। দিলরুয়ান পেরেরার ওভারে ইমরুল কায়েসের বিপক্ষে আউটের আবেদন এসেছিল বেশ কয়েকটি। শেষ রক্ষা আর হলো না, পেরেরার বলেই শেষমেশ লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নিতে হয়েছে বাঁহাতি ওপেনারকে।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতে নেমে লিটন দাসের কাছ থেকে প্রত্যাশাটা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু আগের দিনের সঙ্গে মাত্র এক রান যোগ করে ধৈর্য্যের পরীক্ষায় পাশ মার্কটা পেলেন না বাংলাদেশ উইকেটরক্ষক। মোসাদ্দেকের বদলে দলে আসা সাব্বির রহমানও করেছেন চরম হতাশ। তিন বল খেলে চান্দিমালের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন শূন্য হাতেই। শেষ কয়েকটা ম্যাচ বিবেচনা করলে সাব্বিরের দল থেকে আবার ছিটকে পড়ার সম্ভাবনাটা বেড়েই গেল।
চট্টগ্রামে দুই ইনিংসেই অপরাজিত থাকা মাহমুদউল্লাহ আউট হয়েছেন ১৭ রানে। অভিষিক্ত ধনঞ্জয়ার বলে বাংলাদেশ অধিনায়ককে হতে হয়েছে বোল্ড। টেস্ট ক্রিকেটে রানআউট বাংলাদেশ দলের জন্য খুবই পরিচিত দৃশ্য। চলমান টেস্টেও সে দৃশ্যের মঞ্চায়ন করেছেন মুমিনুল-তাইজুল।
ব্যাটিংয়ে নামার আগে বাংলাদেশের ভয় ছিল যাকে ঘিরে, সেই রঙ্গনা হেরাথ কিন্তু দেখা পাননি একটি উইকেটেরও। প্রথম টেস্ট খেলতে নামা ধনঞ্জয়া ও লাকমলের সমান তিন উইকেটের সঙ্গে পেরেরার দুই উইকেটই স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১১২ লিড এনে দেয় লঙ্কানদের।
ঢাকা টেস্টের ফলাফল দ্রুতই হচ্ছে, সেটা বলাই যায়। বাংলাদেশের পক্ষে যাবে কিনা সেটাই এখন দেখার। অবশ্য প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখলে অবশ্য হতাশই হতে হচ্ছে মাহমুদউল্লাহর দলকে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার আগে বাংলাদেশ দল শিক্ষা নিতে পারে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান রোসেন সিলভা থেকে। এমন প্রতিকুল উইকেটে মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্য্যের সেরা উদাহরণটাই রেখে গেলেন ডানহাতি এই তরুণ। মাটি কামড়ে পড়ে থাকার তৃতীয় দিনে রোসেনের অর্ধশতকের ইনিংস দুটোই টাইগাররা নিক অনুপ্রেরণা হিসেবে।