অধিনায়কের আর্মব্যান্ডে উজ্জ্বল মাহমুদউল্লাহ
অভিষেকের পর থেকেই বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডারে অন্যতম নির্ভরযোগ্য একটি নাম মাহমুদউল্লাহ। আর শেষ তিন বছরে তো প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন এই অলরাউন্ডার। এবার অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েও মাহমুদউল্লাহ নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই।
ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে হঠাৎই কনিষ্ঠা আঙুলের চোটে মাঠের বাইরে চলে যান সাকিব আল হাসান। টেস্ট অধিনায়কের তকমা গায়ে সাঁটিয়ে প্রথম সিরিজে নামার অপেক্ষায় থাকা সাকিবকে ছিটকে যেতে হয়েছে গোটা টেস্ট সিরিজ থেকেও। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ডেপুটি মাহমুদউল্লাহর কাঁধেই তাই সাদা পোশাকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভারটা চাপে।
টেস্টে দশম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই টসটাও জেতেন মাহমুদউল্লাহ। মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিমের দাপটে প্রথম দিনটা দারুণ কাটলেও দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ১৭৬ রানে ফিরে গিয়েছিলেন মুমিনুল। বড় স্কোরের হাতছানি পেলেও অকস্মাৎ ছন্দপতনে বাংলাদেশ থাকে চারশ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়।
দলের বিপদে সব সময়ই খুঁজে পাওয়া যায় মাহমুদউল্লাহকে—বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ এক অমোঘ সত্য। আর সাগরিকার পাড়ে তো দলনায়কের আর্মব্যান্ডটাও বাঁধা তাঁর হাতেই। ৩৯০ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে বড় স্কোরের দিকে মাহমুদউল্লাহ নিয়ে যান লেজের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে নিয়েই। ৩০তম অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্বের অভিষেকেই শতকটা পাওয়া হয়নি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। তাতে কী, দলকে স্কোরকার্ডে এনে দিয়েছেন ৫১৩ রানের পুঁজি। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত শতক থেকে ১৩ রান দূরে, ৮৩ রানে।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টানা দুই ইনিংসে শতক গড়ে বিপর্যয়টা সামলে নিয়েছেন ততক্ষণে মুমিনুল হক। সঙ্গে ছিলেন লিটন দাস। এ দুজনের বিদায়ের পরে খানিকটা সংশয়ের তরীতে দুলতে থাকে বাংলাদেশ। ড্র করতে হলে দিনের বাকি ওভারগুলোও কাটাতে হবে নির্বিঘ্নে। উইকেটে আবারও মাহমুদউল্লাহ।
জন্মদিনের দিন ৬৫ বলে ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে নিজেকে বোধ হয় নিজেই উপহার দিয়েছিলেন দারুণ এক ড্র। আরেক পাশে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অবদান ৫৩ বলে হার না মানা ৮ রান। নেতৃত্ব দেওয়ার শুরুর ম্যাচেই দুই ইনিংসেই অপরাজিত রয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। জয়টা পেলে তো হতো সোনায়-সোহাগা। তবে ড্রটাও যে জয়ের থেকে কম ছিল না।
প্রথম টেস্টের অমন নৈপুণ্যের পর দ্বিতীয় টেস্টে জিতে সিরিজ জেতার স্বপ্ন দেখলে মাহমুদউল্লাহর অপরাধ হবে না। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক দেখেছিলেনও। কিন্তু শেরেবাংলার উইকেটের বেহাল দশা আর সতীর্থদের ব্যর্থতার মিছিলে ম্যাচের দুই ইনিংসেই মাহমুদউল্লাহ দেখেছেন দলের করুণ পরিণতি। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ বা সংবাদ সম্মেলনে দেখা মিলেছিল বিধ্বস্ত এক দলপতির। অবশ্য প্রথম ইনিংসে ১৭ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ রান করে মাহমুদউল্লাহ নিজেও ছিলেন ওই মিছিলের একজন।
অবশ্য দুই ফরম্যাট মিলিয়ে মোট চার ম্যাচে লাল-সবুজের দলের নেতৃত্বে থাকা মাহমুদউল্লাহর অনুজ্জ্বল ছিলেন ওই ঢাকা টেস্টেই। আঙুলের সেলাই কাটা হলেও পুরোপুরি সেরে না ওঠায় সাকিব থাকতে পারেননি টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। রঙিন পোশাকের ছোট্ট ফরম্যাটটাতেও তাই অধিনায়কের দায়িত্বে ফের মাহমুদউল্লাহ।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ গড়েছিল টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর। ৩১ বলে সমান দুই চার আর ছয়ে ৪৩ রানের ঝড়ো ইনিংসে মাহমুদউল্লাহও রেখেছিলেন অবদান। বড় স্কোর গড়েও ৬ উইকেটে পরাজিত হতে হয় তার দলকে। দ্বিতীয় ম্যাচে লঙ্কানদের ২১১ রানের পাহাড় তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ দল হয়েছিল অলআউট। ৭৫ রানের বড় পরাজয়ের দিনও দলের সর্বোচ্চ রানটা এসেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকেই। ৩১ বলে এক ছয় আর চার চারে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের সংগ্রহ ৪১ রান। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যান তিনিই।
বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চ, দুটোতেই শতক হাঁকিয়ে মাহমুদউল্লাহ প্রমাণ করেছিলেন বড় আসরে তাঁর সামর্থ্য। ঘরোয়া সিরিজে তো অনেক আগ থেকেই এই অলরাউন্ডার হয়েছেন নির্ভরতার প্রতীক। বিপিএলের আসরে অধিনায়কত্ব করেছিলেন মুনশিয়ানার সঙ্গেই। এবার জাতীয় দলের নেতৃত্বটাও দিলেন সামনে থেকেই। আসছে নিদহাস কাপের আগেই ফিরছেন সাকিব আল হাসান। আপাতত মাহমুদউল্লাহকে আর মাঠে নামতে হচ্ছে না অধিনায়কের বেশে। তবে দলের অন্য সবার সমর্থন পেলে যে ৩২ বছর বয়স্ক এই ক্রিকেটার এগিয়ে নিতে পারবেন দলকে, সে প্রমাণটা অন্তত পাওয়া গেল সব হারানোর এই সিরিজে।