রানার জন্য মাঠে নামুক বাংলাদেশ
সালটা ২০০৭, তারিখটা আজকেরই; ১৬ মার্চ। মানজারুল ইসলাম রানা তখন ক্রিকেটার হিসেবে বেশ পরিচিতই। অবশ্য ফর্মে না থাকায় সে বছরের বিশ্বকাপের দলে শেষমেশ আর জায়গা হয়নি এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। সেই দুঃখ ঘুচিয়ে আবার জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে চাপাতে রানা ব্যস্ত ছিলেন অনুশীলনে ঘাম ঝরানোয়।
সে রকমই এক ম্যাচ খেলে ফিরছিলেন বাড়িতে। মোটরসাইকেলে বন্ধু সেতুকে নিয়ে বাড়ির রাস্তায় রওনা দিলেও হঠাৎই ‘চুইঝাল’ দিয়ে বানানো গরুর মাংস খেতে রানার মনটা করতে থাকে আকুপাকু। বেশ একটু যাঁরা ভোজনরসিক, নিঃসন্দেহে ‘চুইঝাল’ দিয়ে গরুর মাংসটা বেশ পরিচিতই তাঁদের কাছে। সাতক্ষীরা জেলার চুকনগরের আব্বাস হোটেলটা বেশ বিখ্যাত ছিল মুখরোচক এই খাবারের জন্য।
যেই ভাবনা সেই কাজ। বাইক ঘুরিয়ে সোজা চুকনগর। পেটপুরে খেয়ে দেয়ে আবারও মোটরসাইকেলে চড়ে বসলেন দুজন। রানাই ছিলেন চালকের আসনে।
ভাগ্যের সবচেয়ে নির্মম পরিহাসের বাস্তব উদাহরণটা এরপরই যেন মাটি ফুঁড়ে বের হলো। আচমকা ওপাশ থেকে আসতে থাকা একটা অ্যাম্বুলেন্সের সামনে পড়ে গেল রানার বাইক। একদম মুখোমুখি সংঘর্ষ।
অ্যাম্বুলেন্সের কাজটা মূলত জীবন বাঁচানো। আর সেই গাড়িটাই কি না নিভিয়ে দিল রানার প্রাণপ্রদীপ! শোনা যায় জীবনের শেষ ম্যাচটাতে ৮৪ রানে অপরাজিত ছিলেন খুলনা থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার। তবে জীবনের উইকেটটাতে টিকতে পারলেন খুব অল্পই। মাত্র ২২ বছর ৩১৬ দিন বয়সে আজকের এই দিনেই ঝরে গিয়েছিলেন রানা। আর্চি জ্যাকসনের রেকর্ডটা ভেঙে দিলেন রানা, এমন রেকর্ড কেউ যেন কখনই না গড়ে। সবচেয়ে কম বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে গেলেন সম্ভাবনাময় এই তরুণ। এর আগে আর্চি পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে।
পরের দিনটাতেই ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। রানারই প্রিয় বন্ধু মাশরাফি বিন মুর্তজা ম্যাচের আগে সাহস দেখিয়েছিলেন জয়ের। কথা রেখেছিলেন মাশরাফি। নড়াইল এক্সপ্রেসের আগুনে বোলিংয়ে ভারতকে পরাজিত করে বাংলাদেশ সেদিন পোর্ট অব স্পেনে গড়েছিল ইতিহাস।
রানার শোকে শোকাহত ছিলেন সেদিন ক্রিকেটাররা। তবে সে শোককে তাঁরা পরিণত করেছিলেন শক্তিতে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে তাই উড়েছিল লাল-সবুজের কেতন। এর পর থেকেই রানার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো নিয়ে থাকত অন্য রকম এক উত্তেজনা। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আফগানিস্তানকে পরাজিত করেছিল বাংলাদেশ। তবে ২০১৬ সালে ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারেননি মাশরাফিরা।
এবার যখন সামনে মানজারুল ইসলাম রানার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী, ঠিক সেদিনই শ্রীলঙ্কার মাঠে বাংলাদেশ দল লড়বে ফাইনালে ওঠার ‘অঘোষিত’ সেমিফাইনালের লড়াইয়ে। প্রতিপক্ষটা আবার স্বাগতিকরাই।
যে জিতবে সেই টিকেট পাবে ফাইনালের। সিরিজের সমীকরণটা যখন এমন, তখন আরেকবার রানার জন্যই মাঠে নামুক না টিম বাংলাদেশ! আরেকবার শোককে পরিণত করুক শক্তিতে!