এক মৌসুম পর আবার চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

যে সংগ্রহটা স্কোরকার্ডে তুলেছিল আবাহনী লিমিটেড, তাতে অবশ্য পরাজিত দল থাকলেও শিরোপা জয়ী দলেই থাকতো ক্লাবটি। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জও জবাবটা দিচ্ছিল সমানতালেই। তবে পাহাড়সম লক্ষ্য আর তাড়া করতে পারেনি তারা। ৯৪ রানের বিশাল জয়ে আবার ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) শিরোপা গেছে আবাহনীর ঘরেই। এক মৌসুম পর এই শিরোপা পেয়েছে নীল-আকাশি শিবির।
২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত ডিপিএলের ছিলনা লিস্ট ‘এ’র মর্যাদা। ২০১৩-১৪ আসরেই সীমিত ওভারের এই টুর্নামেন্টকে আইসিসি দিয়েছিল লিস্ট ‘এ’র স্বীকৃতি। তারপর থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ডিপিএল সেরার মুকুট মাথায় তুললো আকাশি-নীল শিবির। ২০১৬-১৭ ডিপিএলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দেশের ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি।
অধিনায়ক নাসির হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্তের জোড়া শতকে ভর করে আবাহনী নিজেদের ইনিংসে স্কোরকার্ডে তোলে ছয় উইকেটে ৩৭৪ রান। রূপগঞ্জও অধিনায়ক নাঈম ইসলামের ব্যাটে ভর করে দারুণ লড়াই করলেও থেমে যায় ২৮০ রানেই। দলটি শেষ চার উইকেট হারিয়েছে কোনো রান না করেই।
বিকেএসপিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা আবাহনী দারুণ শুরু পায় দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের কল্যাণে। ৯২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গে ৫৭ রানে এনামুল হকের ফিরে যাওয়ায়। দ্রুত আরও দুই উইকেট হারিয়ে তখন একটু চাপেই আবাহনী।
দলপতি নাসির আর শান্ত অবশ্য সে চাপটা চেপে বসতে দেননি আবাহনীর ওপর। পঞ্চম উইকেট জুটিতে এ দুজন তুলেছেন ১৮৭ রান। শান্ত এবারের আসরের চতুর্থ শতকের সঙ্গে নাসির তুলে নিয়েছেন এই মৌসুমের প্রথম শতক। ১০৭ বলে ১১ চার আর দুই ছক্কায় শান্ত সংগ্রহ করেছেন ১১৩ রান। অন্যদিকে নাসিরের ব্যাট থেকে এসেছে ৯১ বলে ঝড়ো ১২৯ রান।
শেষদিকে ব্যাট হাতে মাশরাফি বিন মর্তুজার চার ছক্কায় আট বলে অপরাজিত ২৮ রানের ঝড়ে আবাহনী দেখা পেয়ে যায় লিস্ট ‘এ’ তে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের। রূপগঞ্জের হয়ে পারভেজ রসুল নিয়েছেন তিন উইকেট।
জবাব দিতে নেমে একদম শুরুতেই পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ফর্মে থাকা আব্দুল মজিদকে হারিয়ে বসে রূপগঞ্জ। মোহাম্মদ নাঈম ও মুশফিকুর রহিমে ব্যাটে এরপর ভরসা খুঁজে পায় ক্লাবটি। ৯১ রানের জুটিতে দুজন রান তুলেছেন প্রত্যাশামতোই।
৫৪ বলে ছয় চার আর পাঁচ ছক্কায় ৭০ রানের মারকুটে ইনিংস খেলে নাঈম বিদায় নিলে মাঠে ঢোকেন নাঈম ইসলাম। অধিনায়কের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়ে মুশফিক ফিরে যান ৬৬ বলে ৬৭ রান করে।
নাঈম ছিলেন একপাশে অবিচল। পারভেজ রসুলকে সাথে নিয়ে রূপগঞ্জকে তিনি দেখাচ্ছিলেন অসম্ভব এক জয়ের মঞ্চ। তবে শেষদিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বালির বাঁধের মত কোন রান সংগ্রহ ছাড়াই তাঁর দল হারিয়ে বসে শেষ চার উইকেট। ৬৮ বলে পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় নাঈম ফিরেছেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেই।
ব্যাট হাতে দারুণ শতক হাঁকানোর পর নাসির বলেও হাতেও নিয়েছেন দুই উইকেট। শিরোপা জেতার ম্যাচে তাই সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গিয়েছে আবাহনী দলপতির হাতেই।
আবাহনী-রূপগঞ্জ ম্যাচ যেখানে ভেসেছে রানের বন্যায় সেখানে দিনের বাকি দুই ম্যাচে দেখাই মেলেই রানের! লো স্কোরিং ম্যাচে সুপার লিগে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি। অন্যদিকে প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে বাজেভাবে হেরেছে গতবারের শিরোপাধারী গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব শেরেবাংলায় খেলাঘরের বিপক্ষে গুটিয়েছে মাত্র ১৬০ রানেই। নাজিমউদ্দিনের ৬১ রানের ইনিংসে চার উইকেটের জয়েই নিজেদের ডিপিএল মিশন শেষ করেছে খেলাঘর। আর তৃতীয় হয়েই প্রিমিয়ার ক্রিকেটের এবারের আসরের ইতি টেনেছে শেখ জামাল।
অন্যদিকে ফতুল্লায় গতবারের চ্যাম্পিয়ন গাজী গ্রুপ স্কোরবোর্ডে একশো রানও জড়ো করতে পারেনি দোলেশ্বরের বিপক্ষে। গাজী গ্রুপকে ৯৫ রানে মুড়িয়ে দেয়ার দিন দুই স্পিনার নাসুম আহমেদ নিয়েছেন চার উইকেট। আরাফাত সানির ঝুলিতে উইকেট গেছে তিনটি।
জবাব দিতে নেমে মাত্র আট রানেই তিন উইকেট হারিয়ে বসা দোলেশ্বর ম্যাচ জিতেছে ফজলে মাহমুদ ও আবু সায়েমের ব্যাটে। দুজনের ৬২ রানের জুটিই জিতিয়েছে দলকে। মাহমুদ করেছেন ৩১ রান এবং সায়েমের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৬ রান।