ঘোরাঘুরি
মন ভোলানো মনের বাড়ি
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা যখন আপনাকে আড়ষ্ট করে ফেলে, হাসফাঁস লাগে চারপাশটা, ঠিক তখন প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে চাই একটু প্রাণের স্বস্তি, একটু নিরিবিলি প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুটা সময়। তারই প্রয়াসে হাজারো ব্যস্ততার ফাঁক গলে আমরা হাজির হয়েছিলাম ‘মনের বাড়ি’তে। সারা দিন কেটে গেছে খেলায় খেলায়। গল্পে-গানে-আড্ডায় মুখরিত হয়েছে সময়। হৈ চৈ আড্ডা গানের ফাঁকে কখন যে সূর্য গেছে ঢলে পশ্চিম আকাশে আমরা টেরই পাইনি। নিবিড় প্রকৃতির কোলজুড়ে সন্ধ্যা নেমেছে আবছায়া মায়ার মতো। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত ছিমছাম ছোটখাটো এই রিসোর্ট মনের বাড়িতে অদ্ভুত সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে আমরা ফিরেছি ঘরে।
মনের বাড়ি সত্যিই যেন মনের মতো বাড়ি। আয়োজন-আপ্যায়ন, খাবার দাবাড় সবকিছুতেই ঘরোয়া আতিথিয়তার ছোঁয়া। ছোটবড় মিলিয়ে মোটামুটি ৩০ জনের একটা গ্রুপ ছিলাম আমরা। পুরো রিসোর্ট ছিল কেবলই আমাদের দখলে। মেইন গেইট দিয়ে ঢুকেই হাতের ডানপাশে মোটামুটি একটা ফাঁকা জায়গা। যেখানে শর্টপিস ক্রিকেট খেলা যায়। তারপাশেই নান্দনিক ডুপ্লেক্স কটেজ। নিচতলা ওপরতলা মিলিয়ে বেশ আরামদায়ক রেস্টহাউজ। এর সামনে প্রশস্ত খোলা যায়গা। যেখানে আয়োজন হয়েছিল আমাদের অন্ধের হাড়িভাঙা, নতুন বউয়ের কপালে টিপ পরানো, লক্ষ্যভেদসহ কয়েক পদের খেলা। গানের আসর বসেছে এই সবুজ ঘাসের গালিচায়। এখানেই ঘাসে বসে হয়েছে দুপুরের খাবার। পুরো বনভোজনের আমেজ। রান্না ওরাই করেছে। খাবারে ঘরোয়া স্বাদ, ঘরোয়া মান। দেশি মুরগির মাংস, রুইমাছের দোপেঁয়াজু, সবজি, ভর্তা, ডাল। একেবারে বাঙালি খানা। মাথাপিছু খরচ ২৯০ টাকা। পরিমাণ পর্যাপ্ত। চাইলে সব রকমের খাবারের ব্যবস্থাই ওরা করে। নির্ভর করে অতিথিদের চাহিদা ও পছন্দের ওপর।
বাউন্ডারী ঘেরা পুরো রিসোর্টে আছে নানা রকম গাছ গাছালি। একপাশে সাঁন বাঁধানো পুকুর। জলের ওপর ঝাঁকবাঁধা মাছের বিচরণ। তারপাশে সমদূরত্বে বসার বেঞ্চ পাতা। পুকুরধারে বসে থেকে অনায়াসে কাটানো যায় কিছুটা সময়। ছোট পরিসরে বাচ্চাকাচ্চাসহ সব ধরনের খেলাধূলার আয়োজন সম্ভব এখানে। চাইলে সন্ধ্যার পর খোলা প্রান্তরে আগুন জ্বেলে ক্যাম্পফায়ারও করা যায়। আগুন জ্বালবার লাকড়ি ও তেলের ব্যবস্থাও এরাই করবে বেশ আন্তরিকতার সাথে।
রিসোর্ট এরিয়া থেকে বাইরে বেরিয়ে সামান্য একটু হাঁটলেই রাস্তার দুইপাশে ঘন গজারি বন। প্রকৃতির সান্নিধ্য যারা ভালোবাসেন এখানে শান্ত নিবিড় বনের সৌন্দর্য তাদের মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। ২০-৩০ জনের একটি দলের দিনব্যাপী ফ্যামিলি আউটিং এর জন্য বেশ মনোরম এই মনের বাড়ি। যেকোনো ছুটির দিনে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। যাওয়ার আগে বুকিং কনফার্ম করে যাওয়া ভালো হবে। যাতে বাড়তি ভিড় এড়ানো যায়।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি কিশোরগঞ্জগামী বাসে চড়ে নামতে হবে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্টের পেপসি গেইট। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৪০-৫০ টাকা। ওখান থেকে অটোরিকশায় রানীপুর। সাধারণত রানীপুর রিসোর্ট বললেই সবাই চেনে। অটো ভাড়া ১৫ টাকা। ভেঙে ভেঙেও যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেকোনো বাসে গাজীপুর চৌরাস্তা। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। চৌরাস্তা থেকে বাস বদলে রাজেন্দ্রপুর পেপসি গেইট। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। সদলবলে গেলে মিনিবাস বা মাইক্রোবাস সুবিধাজনক। বড় বাস এড়িয়ে চলা ভালো। পেপসি গেইট থেকে রানীপুর পর্যন্ত রাস্তাটা বেশি প্রশস্ত নয়।
কী খাবেন : খাবার নির্ভর করবে অতিথিদের পছন্দের ওপর। যেকোনো খাবারের মেন্যু বলে দিলে ওরা আয়োজন করবে। মেন্যু অনুযায়ী খাবারের দাম নির্ধারিত হবে। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে কথা বলে নেওয়া ভালো। বাইরে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। রিসোর্ট ভাড়ার সাথে খাবার সংযুক্ত। দুই পর্ব চায়ের ব্যবস্থা আছে।
সতর্কতা : সাঁন বাঁধানো পুকুরটা বেশ গভীর। ছোট বাচ্চা সাথে থাকলে অবশ্যই পানির ধারে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।