ছুটির দিনে
পুরাকীর্তির সন্ধানে মহাস্থানগড়ে

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল। একসময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও আগে, অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল, প্রত্নতাত্ত্বিকভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা হয়। প্রাচীরবেষ্টিত এই নগরীর ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। নগর জীবনের ক্লান্তি দূর করতে যাঁরা কোথাও ঘুরে আসতে চান, তাঁদের জন্য মহাস্থানগড় অপেক্ষা করছে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে।
ইতিহাস
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নগরী। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এটি পুণ্ড্র রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী ছিল। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পুণ্ড্রনগরে এসেছিলেন। ভ্রমণের ধারাবিবরণীতে তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার উল্লেখ করে বর্ণনা দেন। বৌদ্ধশিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা তখন মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে। এরপর তাঁরা বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সেখানে গিয়ে তাঁরা বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার বিস্তার ঘটাতেন। সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণসেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন, তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল। মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল, যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীলের সঙ্গে। এ সময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরে তিনিই এ দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত।
যা দেখবেন
মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। মহাস্থানগড় থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে ভাসুবিহার নামের গ্রামটিতে পা দিলে চোখে পড়বে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ধ্বংসের চিহ্ন। যে পুণ্ড্রনগরীর কথা এখানে বলা হচ্ছে, তা ছিল রাজধানী। মৌর্য, গুপ্ত, পাল রাজা যিনিই ক্ষমতায় এসেছেন, পুণ্ড্রনগরীকেই বানিয়েছেন রাজধানী। মৌর্যদের শাসনের পর গুপ্ত আমল। এর পর আনুমানিক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে গোপাল পাল পুণ্ড্রনগরের শাসনভার গ্রহণ করলে পরবর্তী ৪০০ বছরে পালদের শাসনামলেই বাংলাদেশ শৌর্যে-বীর্যে, কৃষ্টিতে ও সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছে। এরপর সেনারাজগণের আমলে এ অঞ্চলের শাসন স্থানান্তরিত হতে থাকে গৌড়ে। এর মধ্যে ১৪০৩ খ্রিস্টাব্দে বলখী নগরের শাহ সুলতান (রহ.) ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য এ অঞ্চলে আসেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়। পুণ্ড্রনগরের শেষ রাজা পরশুরামকে যুদ্ধে পরাজিত করে বিজয়ী হন। প্রাচীরঘেরা নগরী শুরু হওয়ার আগে উঁচু যে স্থান দেখা যায়, সেখানেই রয়েছে শাহ সুলতান (রহ.)-এর বিশাল মাজার। আর এর পাশেই রয়েছে বিশাল মসজিদ।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সার্ভিস হলো গ্রিনলাইন, টি আর ট্রাভেলস এবং এসআর পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। আর এ পথে সাধারণ মানের নন-এসি বাস চলে শ্যামলী, হানিফ, এসআর, কেয়া, টিআর, বিআরটিসি, শাহ সুলতান ইত্যাদি পরিবহনের বাস চলে। ভাড়া জনপ্রতি ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। ঢাকা থেকে বগুড়ার বাস সাধারণত ছাড়ে গাবতলী, কলেজগেট থেকে। আর বগুড়া থেকে ঢাকার বাস ছাড়ে শহরের সাতমাথা এবং ঠনঠনিয়া থেকে। বগুড়া শহর থেকে অটোরিকশা কিংবা টেম্পোতে চড়ে আসতে পারেন মহাস্থানে।