ছুটির দিনে
সবুজে ঘেরা চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি
চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়কে পাহাড়ে ঢালে সবুজে ঘেরা এক প্রাঙ্গন ওয়ার সিমেট্রি। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে যেন সাজানো গোছানো এক বাগান। প্রকৃতপক্ষে এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই অঞ্চলে মৃত্যু বরণকারী সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনী ৭৫৫ জন বীর যোদ্ধার সমাধিস্থল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ক্যাম্পাসের পাশেই ইতিহাসের সাক্ষ্য বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে ওয়ার সিমেট্রি। ইট-পাথরের যান্ত্রিক জীবনে কোলাহলের মধ্যেই শ্যামল প্রকৃতি ঘেরা এক ভিন্ন জগত। গাছে গাছে ফুলের সমারোহ। এমনকি মাঝে মাঝে দেখা মিলবে পাখিদেরও। জীবনের এত আয়োজন ওয়ার সেমিট্রিতে সমাহিতদের কাছে পৌঁছায় না হয়তো। তবে ইতিহাস ও প্রকৃতিপ্রেমী যে কাউকে টানবে প্রকৃতির এই বর্ণিল আয়োজন।
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে। পুরো ওয়ার সিমেট্রি খুব সাজানো গোছানো অপরূপ সুন্দর দেখতে মনে হবে সবুজের চাদর বিছানো মতো এর মধ্যে রয়েছে ইতিহাসের কিছু কথামালাও।
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি ইতিহাস
ওয়ার সিমেট্রি মূল গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখতে পাবেন সমাধিগুলো মাঝখানে বিশালকারের একটি ক্রুশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে । পূর্ব দিকে রয়েছে ছোট একটি প্রার্থনা ঘর । সেখানে বাংলা ও ইংরেজিতে তৎকালীন ইতিহাস ও মানচিত্র দেওয়া আছে। সর্বমোট ৭৫৫টি যুদ্ধকালীন সমাধি রয়েছে এর মধ্যে ১৪ জন নাবিক ৫৪৩ জন সৈনিক এবং ১৯৪ জন বৈমানিক রয়েছে। যুদ্ধকালীন সমাধি ছাড়াও চারটি সমাধি রয়েছে এখানে। সর্বমোট ৭৫৫ জনের সমাধি রয়েছে এখানে।
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রিতে যেসব দেশে নাগবিকদের সমাধি আছে এখানে যুক্তরাজ্যের ৩৭৮ জন,কানাডার ২৫ জন, জাপানের ১৯ জন, অস্ট্রেলিয়ার ৯ জন, নিউজিল্যান্ডের দুজন,অবিভক্ত ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ২১৪ জন, পূর্ব আফ্রিকার ১১ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৯০ জন, মিয়ানমার (বার্মার) দুজন, নেদারল্যান্ডসের একজন ।
(এই ছাড়া সমাধিগুলো ডানে পাশে একটি রেজিস্ট্রার আছে ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সনে যেই ৬৫০০ জন নাবিক ও বাণিজ্য জাহাজের লস্কর দেশমাতৃকার সেবার মৃত্যুবরণ করেছিলেন সমুদ্রের অতলে তল ভিন্ন যাহাদের আর কোনো্ সমাধি নাই এই পুস্তকে তাদের নাম রয়েছে।)
প্রবেশের সময়সুচি
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি প্রায় চার একর জায়গাতে অবস্হিত।প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পযর্ন্ত এবং বিকেলে ২টা থেকে ৫টা পযর্ন্ত সাধারণ দশর্নার্থীদের জন্য প্রবেশে উন্মুক্ত থাকে । ওয়ার সিমেট্রি মূল গেট দিয়ে ঢুকতে একটি নোটিশ বোর্ড দেখতে পাবেন। তাতে সাধারণ দর্শনার্থীদের কিছু তথ্য দিয়া আছে একটু দেখতে হবে।
তবে দুই ঈদের তিনদিন করে বন্ধ থাকে ওয়ার সিমেট্রি। চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি দেখাশোনা একজন তত্ত্বাধায়কের অধীনে পাঁচজন কর্মকর্তা আছে দেখাশোনার জন্য ।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা ননএসি ও এসি বাস আছে অনেক যেকোনো বাসে করে আপনাকে নামতে হবে জিওসি। ট্রেন বা বিমানেও আসতে পারবেন চট্টগ্রাম। জিইসি মোড় থেকে পূর্বদিকে প্রবর্তক মোড়ের আগে বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়ক ধরে একটু গেলে দেখতে পাবেন বিশাল এলাকাজুড়ে সবুজে ঘেড়া খুব সুন্দর ওয়ার সিমেট্রি।
খাবার-দাবার
ওয়ার সিমেট্রি হলো শহরে প্রাণকেন্দ্র আপনি চাইলে যেকোনো জায়গায় খাবার খেয়ে নিতে পারবেন । বেশ ভালো মানের হোটেল আছে জিওসি, গোলপাহাড় মোড় ও প্রবর্তক মোড়ে।