ছুটির দিনে
চড়ক পূজার মেলায়
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চৈত্রসংক্রান্তি পালন করে পুরোনো বছরকে বিদায় দেয়। বাংলা বছরের হিসাব চলে সূর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এ দিন সূর্য মীন প্রতীকের মধ্যে প্রবেশ করে, দিনগুলো বড় হতে থাকে। ক্রান্তি শব্দের অর্থ কিনারা, সংক্রান্তি বলতে বোঝায় সঞ্চার বা গমন করা, অর্থাৎ এক কিনারা থেকে অন্য কিনারায় গমন করা।
চৈত্রসংক্রান্তি বলতে বোঝায় পুরোনো বছরের কিনারা থেকে নতুন বছরে আরোহন। কালের ফেরে সূর্য তার সঞ্চারপথে বারবার ঘুরে আসে এবং সেইসঙ্গে পুনরায় ফিরে আসে ঋতু ও মাস। তাই পুরোনো বছরের কিনারা থেকে নববছরের সূচনালগ্নে উপনীত হওয়াকেই চৈত্রসংক্রান্তি হিসেবে পালন করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তিতেই মূলত চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। নগরজীবনের ক্লান্তি মুছে দিতে আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সিলেট শহর থেকে কাছের দূরত্বের লাক্কাতুরা চা বাগানের চড়ক পূজায়। আর খরচ হবে ঢাকা থেকে মাত্রে ৭৪০ টাকা। তো বন্ধুরা চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন চড়ক পূজার মেলায়।
যা দেখবেন
লাক্কাতুরা চা বাগানে পৌঁছালে দেখতে পাবেন রাস্তার দুই পাশে মেলা বসেছে। চটপটি, পাপড়, চানাচুর, লেইস ফিতা, রাজভোগ, চায়না পুতুল, রাইফেল, পিস্তল, বন্দুকসহ নানা ধরনের খেলনার কত রকমের দ্রব্যাদি নাম বলে শেষ করা যাবে না। চড়ক পূজার মূল কেন্দ্রে দেখতে পাবেন সহস্রাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে শঙ্খ, ঢাকের বাজনা; অন্যদিকে ধূপের গন্ধ এক অন্য রকম পরিবেশের তৈরি করেছে। মাঠের মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে লাল কাপড়ে মোড়া চড়ক নামের গাছটি। এর মাথায় লম্বালম্বি করে বাঁশ বাঁধা আছে। সেই বাঁশের দুই পাশে ঝোলানো আছে দড়ি। এই দড়িতে ঝুলে সন্ন্যাসীরা ঘোরেন। চড়ক পূজার শেষ পর্যায়ে পিঠে বড়শি বাঁধা সন্ন্যাসীকে উপুড় করে ঝুলে থাকা দড়ির একপ্রান্তে বেঁধে দেওয়া হয়। অপর প্রান্তের দড়ি একজন টান দিয়ে ধরে থাকলেন। মূল সন্ন্যাসীর নির্দেশ পাওয়ার পর তিনি ঘোরাতে লাগলেন আর অপর দড়িতে পিঠে বড়শি বাঁধা সন্ন্যাসী উপুড় হয়ে ভাসতে থাকেন সমান বেগে। ঘুরন্ত অবস্থায় সন্ন্যাসী বাজাতে থাকেন ঢাক। এই দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। চারদিকে ঢাকঢোলের বাজনা এক অন্য রকম পরিবেশের তৈরি করে। ধূপের ধোঁয়া, ঢাকের বাদন, মানুষের কোলাহল-উপস্থিত সবাইকে মুহূর্তেই নিয়ে যায় এক অপার্থিব জগতে। একপর্যায়ে ঢাক বাজানো বন্ধ করে সন্ন্যাসী তাঁর ঝোলায় থাকা আম-বাতাসা-শসা ভক্তদের মধ্যে ছুড়ে দিতে লাগলেন। সন্ন্যাসীর ছোড়া এসব জিনিস হাতে পাওয়ার জন্য ভক্তদের মধ্যে পড়ে গেল হুড়োহুড়ি। অনেকেরই বিশ্বাস, এসবে থাকে দৈব্যশক্তি।
যা যা হয়
চড়ক পূজার ১০/১২ দিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরী নৃত্যগীত সহকারে অর্থ ও খাদ্য শস্য সংগ্রহে অংশ নেন। এরা পূজার দিন পর্যন্ত সন্ন্যাসব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজন এবং সারা দিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার দুদিন পূর্বে পূজারিরা পূজা-অর্চনা শুরু করেন। পূজার প্রথম দিন রাতে তান্ত্রিক মন্ত্র পড়ে জ্বলন্ত কয়লার ওপর মানুষরূপী কালী সেজে নৃত্য করেন।
অন্য ভক্তগণ নৃত্যের তালে তালে, ছন্দে ছন্দে ঢোলক, কাশি, করতাল বাজিয়ে থাকেন। মূল অনুষ্ঠানের দিন অনেক আচার নিষ্ঠার মাধ্যমে সন্ন্যাসীরা পূজায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। যাঁরা চড়কে ওঠেন, তাঁরা তিন দিন উপোস থাকেন, নানা রীতিনীতি পালন করেন। শিবের আশীর্বাদ লাভের আশায় প্রাচীনকাল থেকে কষ্টসহিষ্ণু এই কৃত্যানুষ্ঠানটি বাংলায় পালিত হয়ে আসছে। শিব ভক্তরা শারীরিক কষ্টকে তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকেন। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য থাকে শিবের অপার কৃপা লাভ।
যাবেন কীভাবে
ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রিনলাইন, শ্যামলী, এনা, হানিফ বা বিআরটিসি বাসে অথবা ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালে আন্তঃনগর পারাবাত, দুপুরে জয়ন্তিকা ও কালনী এবং রাতে উপবন সিলেটের পথে ছোটে ভাড়া ৩২০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। শহর থেকে লাক্কাতুরা চা বাগান ভাড়া রিকশায় ৫০ টাকা, সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।