বিশ্বসেরা ১০০ বই
ফিওদোর দস্তয়েভস্কির ‘দ্য ব্রাদার্স কারামজোভ’
মূল উপন্যাসটি লেখা হয় রুশ ভাষায়। ইংরেজিতে অনুবাদের পর এর নাম রাখা হয় ‘দ্য ব্রাদার্স কারামজোভ’। ইংরেজিতে উপন্যাসটি ‘দ্য কারামজোভ ব্রাদার্স’ নামেও পরিচিত।
রুশ কথাসাহিত্যিক ফিওদোর দস্তয়েভস্কির লেখা সর্বশেষ উপন্যাস এটি। উপন্যাসটি লিখতে দস্তয়েভস্কির সময় লেগেছিল প্রায় দুই বছর। ‘দ্য রাশিয়ান মেসেঞ্জার’ ম্যাগাজিনে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি।
১৮৮০ সালের নভেম্বরে উপন্যাসটি লেখার কাজ শেষ হয়। ‘দ্য ব্রাদার্স কারামজোভ’ প্রকাশিত হওয়ার চার মাস পরেই মারা যান দস্তয়েভস্কি।
ঊনবিংশ শতাব্দীর রাশিয়ার প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি। ঈশ্বরবিষয়ক নৈতিক দ্বন্দ্ব, মুক্তচিন্তা ও নৈতিকতা এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু। আধুনিক রাশিয়ার প্রেক্ষাপটে সামাজিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও বিচারের এক অতিমানবিক উপাখ্যান তুলে ধরেছেন দস্তয়েভস্কি।
কাহিনী সংক্ষেপ
ফিয়োদর পাভলোভিচ কারামজোভ একজন ধনী ব্যবসায়ী। যুবক বয়সে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন এবং বেশ কয়েকজন সুন্দরী নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কারামজোভের দুই স্ত্রী ও তিন ছেলে রয়েছে।
তাঁর প্রথম স্ত্রীর সন্তান দিমিত্রি। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান ইভান ও আলিওসা। তবে ছেলেদের নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই কারামজোভের। এমনকি ছেলেদের সঙ্গে কারামজোভের কোনো সম্পর্কও নেই। কারামজোভের স্ত্রীরা মারা যাওয়ার পর ছেলেদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি। সেখানেই বড় হয় তারা।
এই তিন ছেলের বাইরেও কারামজোভের আরেকটি ছেলে রয়েছে। গ্রামের এক বোবা মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন কারামজোভ। সন্তান জন্মদানের সময় মেয়েটি মারা যায়। কিন্তু তার সন্তান বেঁচে যায়। কারামজোভের চাকররা ছেলেটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। ছেলেটি বড় হওয়ার পর তাকে নিজের চাকর হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেন কারামজোভ।
তার চতুর্থ সন্তানের নাম রাখা হয় স্মেরদেকভ। যদিও স্মেরদেকভকে কখনো নিজের সন্তান হিসেবে স্বীকার করেন না কারামজোভ। একা একাই বড় হতে থাকে এতিম স্মেরদেকেভ। আর এই একাকিত্বের কারণেই তার চরিত্রে অদ্ভুত কিছু বিষয় দেখা দেয়। মৃগী রোগেও আক্রান্ত হয় সে। তবে অবহেলায় মানুষ হলেও বা রহস্যময় চরিত্রের হলেও স্মেরদেকভ কিন্তু বোকা নয়।
মূলত কারামজোভ ও তাঁর ছেলেদের গল্প নিয়েই উপন্যাসটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। একসময় দস্তয়েভস্কি নিজেও ধর্ম ও দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাঁর সেই প্রভাব এই উপন্যাসে উঠে এসেছে। ১৮৭৮ সালে দস্তয়েভস্কির তিন বছর বয়সী ছেলে আলোয়সা মৃগী রোগে মারা গিয়েছিল। আর এই রোগ ছেলেটি পেয়েছিল বাবা দস্তয়েভস্কির কাছ থেকেই। এ ঘটনা দস্তয়েভস্কির জীবনে ও লেখালেখিতে প্রভাব ফেলেছিল।
লেখক পরিচিতি
ফিওদোর মিখাইলোভিচ দস্তয়েভস্কির জন্ম ১৮২১ সালের ১১ নভেম্বর রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে। রুশ এই কথাসাহিত্যিক একাধারে ছিলেন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও দার্শনিক।
তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক আবহের মধ্যে মানুষের মনস্তত্ত্বকে সন্ধান করা। বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর রাশিয়ার প্রেক্ষাপটেই লেখা হয়েছে তাঁর বেশিরভাগ উপন্যাস ও গল্প। দার্শনিক ও ধার্মিক চিন্তাধারার সংমিশ্রণ ঘটেছে তাঁর লেখায়।
মাত্র ১৫ বছর বয়সেই মাতৃহারা হারিয়েছিলেন দস্তয়েভস্কি। কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন তিনি। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পুওর ফোক’ প্রকাশিত হয় ১৮৪৬ সালে। প্রথম উপন্যাস প্রকাশের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। প্রথম উপন্যাস দিয়েই রাশিয়ার তৎকালীন সাহিত্যিক মহলের সমীহ আদায় করে নেন দস্তয়েভস্কি।
দস্তয়েভস্কির উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ (১৮৬৬), ‘দি ইডিয়ট’ (১৮৬৯), ‘ডেমনস’ (১৮৭২), ‘দ্য ব্রাদার্স কারামজোভ’ (১৮৮০)।
১১টি উপন্যাস, তিনটি উপন্যাসিকা, ১৭টি ছোট উপন্যাস এবং আরো অন্যান্য সাহিত্যকর্ম রেখে গেছেন দস্তয়েভস্কি। চিন্তা ও লেখার গভীরতার কারণে অনেকেই দস্তয়েভস্কিকে ‘সাহিত্যের দার্শনিক’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
১৮৬৪ সালে প্রকাশিত দস্তয়েভস্কির উপন্যাসিকা ‘নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড’-কে অস্তিত্ববাদী সাহিত্যের একেবারে প্রথমদিককার কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
একসময় পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন দস্তয়েভস্কি। জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ায় জীবনের দীর্ঘ একটা সময় তাঁকে আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ১৭০টির বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে তাঁর সাহিত্যকর্ম। আর তাঁর লেখার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন বহু বিখ্যাত উপন্যাসিক ও দার্শনিক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আন্তন চেখভ, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ফ্রেডরিখ নিৎসে ও জ্যঁ পলসার্ত্রে।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।
আরো পড়ুন...
১২.বুক অব জব
১১.ফার্নান্দো পেসোয়ার ‘দ্য বুক অব ডিসকোয়ায়েট’
১০. হোসে সারামাগোর ব্লাইন্ডনেস
৯. আলফ্রেড ডোবলিনের বার্লিন আলেক্সান্দারপ্লাটজ
৮. টনি মরিসনের ‘বিলাভড’
৭. তলস্তয়ের ‘আন্না কারেনিনা’
৬. ভার্জিলের ঈনিড
৫. মার্ক টোয়েনের ‘দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব হাকেলবেরি ফিন’
৪. উইলিয়াম ফকনারের ‘আবসালোম, আবসালোম!’
৩. গুস্তাভ ফ্লোবার্টের ‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’
২. হেনরিক ইবসেনের ‘এ ডলস হাউস’
১. জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’