বিশ্বসেরা ১০০ বই
কাফকার ‘দ্য ক্যাসেল’
জার্মান লেখক ফ্র্যানৎজ কাফকার লেখা উপন্যাস ‘দ্য ক্যাসেল’। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি। ‘দ্য ক্যাসেল’-কে বলা হয় কাফকার সবচেয়ে সুন্দর ও আবেগী লেখা।
কাফকা তাঁর জীবনের শেষ দুই বছরে উপন্যাসটি লিখেছিলেন। উপন্যাসটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। ২০টি অধ্যায় লিখে গিয়েছিলেন কাফকা। তবে উপন্যাসটি কীভাবে শেষ করতে চান, সেটা তিনি তাঁর বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে আলোচনার সময় একবার জানিয়েছিলেন।
আর কাফকার মৃত্যুর পরে তাঁর বন্ধু উপন্যাসটি শেষ করে প্রকাশ করেন। অবশ্য উপন্যাসটির পরিণতি নিয়ে অনেক সমালোচকই সন্তুষ্ট নন।
কাহিনী সংক্ষেপ
গল্পের মূল চরিত্রের নাম শুধু ‘কে’ দিয়ে বর্ণনা করেছেন লেখক। কে একজন ভূমি জরিপকারক। গ্রামে গিয়ে সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা করেন। তবে কে-এর বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। কেন তিনি সেই গ্রামে গিয়েছেন, কেন জমি জরিপ করতে চান, সে বিষয়টা আড়ালেই থেকে যায়।
প্রাসাদে থাকা এসব প্রশাসক রহস্যময় এবং সাধারণ মানুষরা কখনোই তাদের নাগাল পায় না। বারবার চেষ্টা করার পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কাছে হার মানতে হয় তাঁকে। আর এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়েই হতাশা ও দুর্বোধ্যতার এক উপাখ্যান তৈরি করেছেন কাফকা।
বারবার প্রাসাদের প্রশাসকদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা চালিয়ে যান কে। গ্রামের এক বাসিন্দার ঘরে আশ্রয় নেন তিনি। তাদের সঙ্গেও ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়তে থাকেন তিনি।
একসময় প্রাসাদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান কে। তিনি জানান, কোনো একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এই গ্রামে কোনো ভূমি জরিপকারকের দরকার নেই। কাজ সম্পূর্ণ না করেই ফিরে যেতে হয় তাকে।
লেখক পরিচিতি
বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যকর্মে কাফকা অনিবার্য হয়ে উঠেছেন। ১৮৮৩ সালের ৩ জুলাই প্রাগে এক উচ্চ মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে তাঁর জন্ম। প্রাগ তখন ছিল বোহেমিয়া রাজ্যের রাজধানী। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বোহেমিয়া। প্রাগ বর্তমানে চেক রিপাবলিকের রাজধানী।
ইউনিভার্সিটি অব প্রাগে আইন নিয়ে লেখাপড়া করে কাফকা আইনজীবী হিসেবেই তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন। একটি ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করা শুরু করেন কাফকা। অবসরে লেখালেখি করতেন তিনি।
জার্মান ভাষায় লেখালেখি করলেও কাফকার লেখা গল্প ও উপন্যাস বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য মেটামরফোসিস’, ‘দ্য ট্রায়াল’ ও ‘দ্য ক্যাসেল’। এর মধ্যে ‘দ্য মেটামরফোসিস’ গল্পটি ১৯১২ সালে লিখেছিলেন কাফকা, যা প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে।
কাফকার জীবদ্দশায় তাঁর অল্প কিছু সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও সেগুলো সে সময় খুব একটা আলোড়ন তৈরি করতে পারেনি। কাফকার বন্ধু ম্যাক্স ব্রড তাঁর মৃত্যুর পরে অপ্রকাশিত লেখাগুলো প্রকাশ করেন। এসব রচনাই কাফকাকে দারুণভাবে জনপ্রিয় করে তোলে। গল্প ও উপন্যাস ছাড়াও প্রিয়জনদের কাছে লেখা কাফকার শতাধিক চিঠি রয়েছে।
লেখালেখিতে সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করার জন্য ১৯২৩ সালে প্রাগ ছেড়ে জার্মানির বার্লিনে যান কাফকা। টিউবারকোলোসিস রোগে ভুগে মাত্র ৪০ বছর বয়সে ১৯২৪ সালের ৩ জুন বার্লিনে মারা যান তিনি।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।
আরো পড়ুন...
১৫. জেফ্রি চসারের ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’
১৪. টমাস মানের ‘বাডেনব্রুকস’
১৩.ফিওদোর দস্তয়েভস্কির ‘দ্য ব্রাদার্স কারামজোভ’
১২.বুক অব জব
১১.ফার্নান্দো পেসোয়ার ‘দ্য বুক অব ডিসকোয়ায়েট’
১০. হোসে সারামাগোর ব্লাইন্ডনেস
৯. আলফ্রেড ডোবলিনের বার্লিন আলেক্সান্দারপ্লাটজ
৮. টনি মরিসনের ‘বিলাভড’
৭. তলস্তয়ের ‘আন্না কারেনিনা’
৬. ভার্জিলের ঈনিড
৫. মার্ক টোয়েনের ‘দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব হাকেলবেরি ফিন’
৪. উইলিয়াম ফকনারের ‘আবসালোম, আবসালোম!’
৩. গুস্তাভ ফ্লোবার্টের ‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’
২. হেনরিক ইবসেনের ‘এ ডলস হাউস’
১. জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’